আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল জগন্নাথ ঘাট লাগোয়া কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের একটি গুদামের একাংশ। বৃহস্পতিবার ঘণ্টা সাতেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে দমকলের ২৩টি ইঞ্জিন। বিধ্বংসী আগুন সামলাতে গঙ্গার তীরে পাম্প বসিয়ে জল তোলেন দমকলকর্মীরা। প্রসঙ্গত, বছর দেড়েক আগে স্ট্র্যান্ড রোডে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অন্য একটি বড় গুদামও বিধ্বংসী আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল। দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিনের ঘটনায় কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এবং ওই গুদামের দায়িত্বে থাকা পণ্য পরিবহণ সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা। পোস্তার ওই এলাকায় তখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় জমেছে। ইংরেজ আমলে তৈরি ওই বাড়িটির একটি অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন নিরাপত্তাকর্মী ও এলাকার বাসিন্দারা। পোস্তার স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডে পোর্ট ট্রাস্টের ওই দোতলা বাড়ির একতলায় চারটি সংস্থার গুদাম রয়েছে। দোতলায় রয়েছে আরও একটি গুদামঘর। একতলার একটি গুদামে রাত-পাহারার দায়িত্বে থাকা নরেশ মাহাতো বলেন, “সকালে জিনিস চুরির ফন্দি নিয়ে একটা লোক গুদামে ঢুকেছিল। তাকে পাকড়াও করে লোকজন ডাকব ভাবছি, তখনই হঠাৎ শুনলাম ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার। বেরিয়ে দেখি, একটা গুদাম থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।” অন্য নিরাপত্তারক্ষী, শ্রমিক, স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। দ্রুত দমকল ডাকা হয়। |
দমকল জানায়, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, কাপড়, ওষুধ থেকে শুরু করে কালি, কলম সবই মজুত ছিল ওই গুদামে। আগুন ছড়াতে তাই বেশি সময় লাগেনি। আগুনের উৎসের পাশেই বহুজাতিক একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, প্রসাধন সংস্থার গুদাম ছিল। শ্যাম্পু, সাবান, কোল্ড ক্রিমের মতো হরেক জিনিস ছিল সেখানে। ফলে লেলিহান শিখা মুহূর্তে ছড়ায়। মল্লিকঘাটে ফুলবাজারের ভিড় পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কিছুটা সমস্যায় পড়ে দমকলের ইঞ্জিন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর গাড়িগুলি। তবে দোতলার গুদামে আগুন ছড়ানোর আগেই দমকল তা নিয়ন্ত্রণ করে। মল্লিকঘাট পাম্পিং স্টেশন থেকে জল ভরা হয় খালি হয়ে যাওয়া দমকলের ইঞ্জিনগুলিতে। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দমকলের ইঞ্জিনগুলি রাস্তায় দাঁড়ানোয় রবীন্দ্র সেতু, স্ট্র্যান্ড রোড, ব্রেবোর্ন রোডে যান চলাচলের গতি কিছুটা কমে যায়।
ভস্মীভূত গুদামগুলিতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ করে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “কী ভাবে আগুন লাগল, তা জানতে ফরেন্সিক তদন্ত হবে। পুলিশে মামলা রুজু হবে।” দমকলমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই বাড়িটির মালিকানা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের হাতে রয়েছে। অগ্নি-সুরক্ষার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ওই সংস্থারই। জাভেদ বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অন্য গুদামগুলি পরিদর্শন করবে দমকল। কোথাও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না-থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হবে।” পরিকাঠামোর অভাবে দমকল দফতরের পক্ষে শহরের সমস্ত বড় ভবন, বহুতলে নজরদারি সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। স্থানীয় কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত বলেন, “গুদাম সংস্কারের দিকে পোর্ট ট্রাস্ট নজর দিত না। তাদের উদাসীনতায় ওই বাড়ির লাগোয়া গঙ্গাতীরও আবর্জনায় ভরে গিয়েছে।” |
কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের এক কর্তা অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “ওই বাড়িটি সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে পরে আমরা উচ্ছেদের মামলা করি। রায় আমাদের পক্ষে গিয়েছে। গুদামটির কিছুটা অংশ আমরা ফেরত পেয়েছি। কিন্ত ওই সংস্থাটি অন্য সংস্থাকে গুদামটি ব্যবহার করতে দিয়েছিল। যে সংস্থাকে আমরা লিজ দিয়েছিলাম, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করার দায়িত্বও তাদেরই।” ওই কর্তা আরও জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ইঞ্জিনও ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে।
সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের তরফে অবশ্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, আদালতের রায় মেনে ওই গুদামটি পোর্ট ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থারই নিরাপত্তাকর্মীরা সেখানে রয়েছেন। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তৈরির দায়িত্বও তাই পোর্ট ট্রাস্টেরই। |