অবশেষে উদ্বোধন হচ্ছে লেক মলের। আগামী বুধবার পিপিপি মডেলে গড়ে ওঠা পুরসভার প্রথম ওই বাণিজ্য কেন্দ্রটির দ্বারোদ্ঘাটন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মলটি চালু হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ফুটপাথ হকারমুক্ত হওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে।
শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খালি জায়গায় চৌকি, বেঞ্চ, লাঠি দিয়ে জায়গা ঘিরে রাখা। কারা ঘিরছেন, কেউ তা সাহস করে জানাতে চাননি। স্থানীয় এক পুরকর্মী জানান, এখন দোকান না থাকলেও মল উদ্বোধন হলেই যে যাঁর দোকান খুলে বসবেন। তবে পুর প্রশাসনও এ ব্যাপারে চুপ করে বসে থাকবে না বলে জানান এক কর্তা।
পুর সূত্রের খবর, আরও আগেই উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল লেক মলের। কিন্তু বাদ সাধে মলের সামনে পথ আগলে বসে পড়া জনা সত্তর হকার। তাঁদের তুলতে না পেরে মহা ফাঁপরে পড়েছিল ওই বাণিজ্য কেন্দ্রের প্রোমোটার গোষ্ঠী। পরে সরকার ও পুর উদ্যোগে হকারেরা সরে যান ঠিকই, কিন্তু একেবারে চলে যাননি। |
রাস্তার এক প্রান্তে চৌকি, বেঞ্চ পাততে শুরু করেন ফুটপাথের উপরে রাস্তার ধারের দোকানগুলোর সামনে। রীতিমতো পড়েন ফ্যাসাদে পুরসভার ট্রেড লাইসেন্সধারী বেশ কিছু ব্যবসায়ী। তাঁদের কথায়, “মলের পথ প্রশস্ত করতে গিয়ে আমাদের বিপদে ফেলা হল।” এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সহ পুরসভা ও পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগও জানানো হয়েছে। পুর-প্রশাসন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেননি। এক পুরকর্তার কথায়, “প্রত্যেক হকারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে জায়গা খালি করা হয়েছে। তার পরেও ফের অন্য জায়গা দখল মানা যায় না।” পুলিশের বক্তব্য, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার হস্তক্ষেপেই এই দখলের ঘটনা ঘটছে। তাঁদের কিছু করার নেই।
কলকাতা পুরসভার নিজস্ব বাজার লেক মার্কেট। বছর কয়েক আগে পুর-প্রশাসন কলেজ স্ট্রিট, লেক মার্কেট, ল্যান্সডাউন ও পার্ক সার্কাস মার্কেটকে পিপিপি মডেলে গড়ে তোলার প্রয়াস নেয়। এর মধ্যে পার্ক সার্কাস বাজারের আধুনিকীকরণের প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়ায় উদ্যোগী প্রোমোটার সংস্থা। পুর সূত্রের খবর, বাকি তিনটির মধ্যে একমাত্র লেক মার্কেটের কাজই সম্পূর্ণ হয়েছে। |
পুরসভার বাজার বিভাগের এক অফিসার জানান, গত পয়লা বৈশাখ ওই মার্কেট উদ্বোধনের কথা উঠেছিল। কিন্তু একদল হকার নবনির্মিত মলের প্রবেশপথ আগলে রাখায় তা হয়নি। রাজ্য সরকারের উচ্ছেদ-বিরোধী ইমেজ ধরে রাখতে গিয়ে অস্বস্তি বাড়ে প্রশাসনের।
মলের কাজ শেষ হয়েও তা চালু না হওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তাঁর নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে দলের প্রবীণ নেতা ও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় পুর-প্রশাসনের সঙ্গে বসেন। সুব্রতবাবু তখন বলেন, “ওঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে না। জোর করে উচ্ছেদও করা হবে না। আলোচনা হবে।” যদিও বহু বার আলোচনা করেও কাজ হয়নি। পরে পুর উদ্যোগে প্রোমোটার গোষ্ঠী আর্থিক সাহায্য দিলে হকারেরা সরেন। তৎক্ষণাৎ সামনে অংশটা বাগান করে ঘিরে ফেলে পুর প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেই রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের খালি থাকা ফুটপাথ দখল হতে থাকে। হকার হটাতে পুলিশ উদ্যোগীও হয়। কিন্তু অভিযোগ, তখনই আসরে নামেন একাধিক দলের স্থানীয় কিছু নেতা। এক ব্যবসায়ীর কথায়, “তখনই পুলিশি তৎপরতা থেমে যায়।” |