মহাকরণ থেকে রাজ্যের সচিবালয় কিছু দিনের জন্য সরতে চলেছে গঙ্গার পশ্চিম কূলে এইচআরবিসি বিল্ডিংয়ে। ওই এলাকা হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের অধীন হলেও অস্থায়ী সচিবালয়ে নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকবে কলকাতা পুলিশই। হাওড়া পুলিশের ভূমিকা হবে সহযোগীর।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে অস্থায়ী মহাকরণের নিরাপত্তায় কলকাতা পুলিশের মূল দায়িত্ব এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে হাওড়া পুলিশের কাজ মোটামুটি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে ১৪তলা এইচআরবিসি বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা তো বটেই, এমনকী বাইরেও কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যালাইজড আর্মড ফোর্স (স্যাফ)-এর কর্মীরাই স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারায় থাকবেন। আর শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বে অর্থাৎ মিটিং-মিছিল, বিক্ষোভ হলে তা সামলাবে হাওড়া পুলিশ। তা ছাড়া সাদা পোশাকে নজরদারির কাজটাও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে করবে তারা। হাতেকলমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাঠ নিতে হাওড়া পুলিশের এক দল অফিসারের আজ, সোমবার মহাকরণে আসার কথা।
কিন্তু এইচআরবিসি বিল্ডিং তো হাওড়া কমিশনারেটের শিবপুর থানার এলাকাভুক্ত। অন্য কমিশনারেটের এলাকায় ঢুকে কলকাতা পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে কেন?
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, নামে কমিশনারেট হলেও মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের সচিবালয়কে নাগাড়ে তিন-চার মাস নিরাপত্তা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো হাওড়া পুলিশের নেই। এই ধরনের কাজে তারা অভ্যস্তও নয়। কলকাতা পুলিশ, বিশেষত তাদের রিজার্ভ ফোর্স (আরএফ) বছরের পর বছর মহাকরণে ডিউটি করার সুবাদে সেখানে যাতায়াত করা লোকজন এবং কর্মরত বিভিন্ন আমলা, রাজনৈতিক নেতা, বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। হাওড়া পুলিশ সেখানেও পিছিয়ে।
এখন মহাকরণের ভিতরে-বাইরে রোজ প্রায় ২৫০ পুলিশকর্মী পাহারায় থাকেন। তাঁদের মধ্যে আছেন স্যাফ-এর ২২ জন ইনস্যাসধারী জওয়ান। কলকাতা পুলিশের চার জন কম্যান্ডো থাকেন একে-৪৭ নিয়ে। মহাকরণের একতলায় আছেন রিজার্ভ ফোর্সের সহকারী কমিশনার, ইনস্পেক্টর, সার্জেন্ট নিয়ে মোট ১৭ জন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা বলে দোতলার করিডরে থাকেন আরএফের এক জন মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর। তা ছাড়া আরএফের ‘এ’ কোম্পানির ৪৫ জন কনস্টেবল ছড়িয়ে রয়েছেন গোটা মহাকরণে। প্রতিটি ব্লকের প্রবেশপথ, সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত এলাকার সংযোগপথ ও করিডরে থাকেন তাঁরা। ওই পুলিশকর্মীরা মন্ত্রী, আমলা, সাংসদ, বিধায়ক তো বটেই, মহাকরণের করণিকদেরও চেনেন।
সেই সঙ্গে মহাকরণে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের ইনস্পেক্টর থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সব স্তরের কর্মী মিলিয়ে সাদা পোশাকে রয়েছেন অন্তত ৫০ জন। মহাকরণের বাইরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের ৪৫ জনকে রোজ মোতায়েন রাখা হয়। মহাকরণের উল্টো দিকে পার্কিং লটের ফুটপাথ এবং সংলগ্ন কয়েকটি জায়গায় কলকাতা পুলিশের অফিসার ও কনস্টেবল মিলিয়ে আরও ৫০ জন নজরদারির দায়িত্বে থাকেন।
তবে হাওড়া কমিশনারেটের এলাকায় গিয়ে কলকাতা পুলিশ কী ভাবে, কার অধীনে কাজ করবে, সেই সব বিষয় এখনও স্পষ্ট হয়নি। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এটা তো কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। এই তো পঞ্চায়েত ভোটে আমরা জেলায় ডিউটি করতে গেলাম। কিছু সমস্যা হয়নি। এ ক্ষেত্রেও কোনও অসুবিধে হবে না।” |