ব্যথাপথের মহানগর
খানাখন্দের মালায় সেজেছে হাওড়া
কোথাও রাস্তায় জমে রয়েছে কাদা। কোথাও পিচ উঠে বেরিয়েছে খোয়া। অল্প বৃষ্টিতে গোড়ালি ডোবা জলও জমেছে সেখানে। ছবিটি কোনও তস্য গলির নয়। হাওড়া শহরের মন্দিরতলায় এইচআরবিসি-র যে পনেরোতলা বাড়িতে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন ‘মহাকরণ’ স্থানান্তরিত হচ্ছে, তার চারপাশের রাস্তার হাল এমনই।
দ্বিতীয় হুগলি সেতু অ্যাপ্রোচ রোড, ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেন, কাশীনাথ চ্যাটার্জি লেন, হরদেব ভট্টাচার্য লেন এই চারটি রাস্তা ঘিরে রেখেছে ওই বহুতলটিকে। সঙ্কীর্ণ ওই রাস্তাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হাওড়া পুরসভার। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য অল্প বৃষ্টিতেই কাশীনাথ চ্যাটার্জি লেনের একাংশে জল জমেছে এবং পিচ উঠে গিয়েছে বাকি অংশের। অন্য রাস্তাগুলির অবস্থাও একই রকম। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর জেরে দীর্ঘ দিন ধরেই ভোগান্তি হচ্ছে তাঁদের। তবে পয়লা অক্টোবরের আগেই ওই চারটি রাস্তা ঠিক করে দেওয়া হবে আশ্বাস দিয়েছেন হাওড়ার পুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এত দিন কেন ওই সব রাস্তার উন্নয়ন হয়নি, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি পুর-কর্তারা।
এ ছাড়াও হাওড়া শহরের দক্ষিণে বি-গার্ডেন থেকে উত্তরে বালি, মোট ৬৩.৫৫ বর্গ কিমি (হাওড়া ৫১.৭৪ এবং বালি ১১.৮১) এলাকা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় পিচ রাস্তা। যার অধিকাংশই খানাখন্দে ভরা। অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু জল জমে সেখানেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই হাওড়া শহরের সমস্ত রাস্তা মরণফাঁদে পরিণত হয়। পুজোর মুখে সেই সব রাস্তায় জোড়া-তাপ্পি দিয়ে দায় সারে পুরসভা। পরে পুরোপুরি মেরামতির কাজ করা হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তা আবার বেহাল হতে শুরু করে।
মহাকরণের আগামী ঠিকানা এইচআরবিসি ভবনের কাছে।
সূত্রের খবর, হাওড়া পুর-এলাকায় মোট ২৬০ কিমি পিচ রাস্তা রয়েছে। তার প্রায় ১৫০ কিমি রাস্তার অবস্থা বিপজ্জনক। আবার বালিতে প্রায় ১৫০ কিমি পিচ রাস্তার অধিকাংশ খানাখন্দে ভরা। বর্ষা মিটলেই কাজ শুরু হবে বলে প্রতি বছরের মতো এ বারও আশ্বাস দিয়েছেন দুই পুর-কর্তৃপক্ষই। হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “পুরসভার হট মিক্সিং প্লান্টে জল জমে রয়েছে। ৪০টি রাস্তা সারানোর টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। বর্ষা শেষ হলেই কাজ শুরু হবে। কেএমডব্লিউএসএ, পূর্ত দফতরও তাদের রাস্তা মেরামতি করবে।” অন্য দিকে বালির চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “কেএমডিএ-র কাজের জন্যই রাস্তাগুলির বেহাল অবস্থা। বর্ষা শেষ হলেই ওরা কাজ শুরু করবে। আমরাও কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটি রাস্তা সারানোর জন্য পূর্ত দফতরকে আবেদন জানাবো।” বর্ষার পরে তাঁরা নিজেদের রাস্তা মেরামতি শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন পূর্ত দফতরের হাওড়া ডিভিশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সত্য বসুও।
হাওড়া ও বালি পুর-এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হল জিটি রোড। দক্ষিণে কাজীপাড়া থেকে শুরু হয়ে বালি খাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিমি জুড়ে রয়েছে এই ‘লাইফ লাইন’। প্রতি বছরই বর্ষার শুরুতে রাস্তার বিভিন্ন অংশে তৈরি হয় খানাখন্দ। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাস্তাটি মেরামতি নিয়ে বালি ও হাওড়া পুরসভার সঙ্গে চাপান-উতোর চলছে পূর্ত দফতরের।
বালি ঘাট এলাকা। লিলুয়া স্টেশন রোড।
বেহাল দশা ওই এলাকার অন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিরও। যে তালিকায় রয়েছে হাওড়া পুর-এলাকার জালান রোড, বেনারস রোড, জে এন মুখার্জি রোড, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস, পঞ্চাননতলা রোড, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড এবং আন্দুল রোড। প্রতিটি রাস্তাতেই পিচ উঠে বেরিয়েছে খোয়া, পাথর। তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক বড় বড় গর্ত। আবার গত সাত বছর ধরে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার কাজের জন্য হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডে খোঁড়াখুড়ি করেছে এইচআইটি। সেখানকার অবস্থাও দুর্বিষহ। মাকড়দহর মহিয়াড়ি ও সাঁতরাগাছির মহিয়াড়ি রোডে পানীয় জলের পাইপলাইনের কাজের জন্য কেএমডব্লিউএসএ খোঁড়াখুড়ি করেছে। স্থায়ী মেরামতি হয়নি।
একই হাল বালি পুর-এলাকার গিরিশ ঘোষ রোড, বেলুড় রোড, বেলুড় স্টেশন রোড, অগ্রসেন স্ট্রিট, লিলুয়া স্টেশন রোড, লিলুয়া রেল কলোনির স্ট্রাচি রোড, গোস্বামী পাড়া, নেতাজি সুভাষ রোড, মোহনলাল বাহাওয়ালা রোড, খামার পাড়া রোড ও অন্যান্য রাস্তার। প্রায় পাঁচ-ছ’মাস ধরে কেএমডিএ জলের পাইপলাইন বসানোর জন্য বালির প্রায় সমস্ত রাস্তা খুঁড়লেও কাজের পরে সেখানে খোয়া ও বালি ফেলেই দায় সেরেছে পুরসভা। বৃষ্টির জলে বালি ধুয়ে খোয়া বেরিয়ে সেই রাস্তা এখন চলাচলের অযোগ্য। বালি পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের রেয়াজ আহমেদের অভিযোগ, “শুধু কেএমডিএ-র কাজের জন্য নয়, বালির রাস্তা খারাপ দীর্ঘ দিন ধরে। কেন না, পুরসভার নিজেদের পছন্দ মতো ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানোয় ইমারতি দ্রব্যের মান বজায় থাকে না।”
রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য জমা জলকে অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন রাস্তা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা। তাঁরা জানান, জমা জল যে কোনও ফাটল দিয়ে ভিতরে ঢুকে রাস্তার ‘ফাউন্ডেশন বডি’কে নষ্ট করে দেয়। বিটুমিনাসের সব থেকে বড় শত্রুই হল জল। তবে ইঞ্জিনিয়ারেরা যা-ই বলুন, জল জমার বিষয়ে দায় নিতে রাজি নয় কোনও পুরসভাই। সমস্যা সমাধানের বিষয়েও একে অপরের উপরেই দায়িত্ব চাপাচ্ছে বালি ও হাওড়া পুরসভা। তাই খানাখন্দময় রাস্তার ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা কাটছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.