তখনও পুরোপুরি আড়মোড়া ভাঙেনি মন্দিরতলার ১৪ তলা বাড়িটার। তার মধ্যেই লাল বাতি লাগানো একের পর এক গাড়ি সোজা ঢুকে যাচ্ছে বহুতলের বেসমেন্টে।
শনিবার মহাকরণে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, ১ অক্টোবর থেকে মুখ্যমন্ত্রী গারমেন্টস পার্ক-এ বসবেন। তার আগে সব কাজ সেরে ফেলতে হবে। তাই শনিবার, ছুটির দিনেও পুলিশ ও অগ্নি সুরক্ষা দফতরের কর্মী-অফিসারে ছয়লাপ ওই বাড়ি। কবে কোন দফতর মহাকরণ থেকে উঠে এখানে আসবে, তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও আগে থেকেই ওই বহুতলের নিরাপত্তার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখে নিতে চাইছেন তাঁরা। সেই কারণে সাতসকালেই বাড়ির বাইরে মজুত দমকলের ইঞ্জিন, বহুতলে আগুন নেভানোর ল্যাডার-সহ নানা রকমের সামগ্রী।
হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স-এর তৈরি মন্দিরতলার ওই উঁচু বাড়িটা দীর্ঘ চার বছর ফাঁকা পড়ে থাকার পর আচমকাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাময়িক ভাবে মহাকরণ চলে যাবে গারমেন্টস পার্কে দিন তিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে এ দিনই কার্যত শুরু হল রাজ্য সরকারের সদর দফতর সরানোর প্রস্তুতি। |
আর সেই প্রস্তুতি দেখতেই বিদ্যাসাগর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ধরে যাতায়াতের পথে থমকে দাঁড়িয়েছেন পথচারী। ভিড় কমছে না কৌতূহলী স্থানীয় মানুষের। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই দেখেছেন, ল্যাডারের মাথায় চেপে কী ভাবে পুলিশ ও দমকলের কর্মীরা পৌঁছে গেলেন ১৪ তলায়।
এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, ওই তলাতেই হবে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসঘর। লাগোয়া ঝুল বারান্দায় যাওয়া যাবে ওই ঘর থেকে। পাশেই থাকবে কনফারেন্স রুম, ক্যাবিনেট রুম। সে সবই এ দিন ঘুরে দেখেন পুলিশ ও দমকল দফতরের অফিসারেরা। এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ এইচআরবিসি-র ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারেনিয়া, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য নিরাপত্তা অফিসার বীরেন্দ্র, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে ও কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের ডিসি অশোক বিশ্বাস-সহ কলকাতা ও হাওড়া পুলিশের একাধিক অফিসার। দমকলের এক কর্তা বলেন, “এই বহুতলে নিরাপত্তার কোনও খামতি নেই। দু’টি রিজার্ভার আছে। তাতে ৪ লক্ষ গ্যালন জল ধরে। বাড়ির ভিতরে লাগানো ফায়ার হাইড্রান্টস, স্প্রিঙ্কলার, ফায়ার ইন্ডিকেটার ও স্মোক ইন্ডিকেটার।” বহুতলের বাইরে নিরাপত্তা আরও আঁটোসাটো করছে পুলিশ। মন্দিরতলা থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ধরে ওই বাড়িতে পৌঁছনোর যে সরু রাস্তা, তার দু’দিকই মানুষসমান উঁচু টিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। স্থানীয় মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য টিনের ঘেরাটোপে অবশ্য কিছুটা ফাঁক রেখে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেখানে থাকবে সশস্ত্র পাহারা। নিরাপত্তার খাতিরে বহুতল লাগোয়া দোকানপাট তুলে দেওয়া হবে। সরিয়ে দেওয়া হবে বেআইনি দখলদারদেরও। |