খুনের দৃশ্য দেখে ফের চোখের জলে ভাসলেন সুটিয়াবাসী
লাকার জনপ্রিয় যুবকটি দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হওয়ার পরে চোখের জলে তাঁকে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন সুটিয়ার মানুষ। তারপর বহু অনুষঙ্গে তাঁদের মনে ফিরে এসেছে সেই স্মৃতি। সুটিয়ার যুবক বরুণ বিশ্বাসকে নিয়ে তৈরি সিনেমায় বরুণকে খুনের দৃশ্য দেখে ফের চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না ছবি দেখতে আসা সুটিয়ার মানুষ। সুটিয়ায় গণধর্ষণ কাণ্ডের পরে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বরুণ বিশ্বাস এবং আরও কয়েক জন। মিত্র ইন্সটিটিউশন (মেন)-এর শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের আন্দোলনে কখনও সময়ের অভাব পড়েনি বরুণের। বহু মানুষের আপদে-বিপদেও পাশে দাঁড়িয়েছেন এক ডাকে। এ হেন যুবকটিকে গত বছর গোবরডাঙা স্টেশনের সামনে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। গণধর্ষণ কাণ্ডে বহু মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন বরুণ। সিআইডি জানায়, সেই আক্রোশেই সুশান্ত ঘোষ নামে গণধর্ষণ কাণ্ডের এক দুষ্কৃতী বরুণকে খুনের ছক কষে। গণধর্ষণের দায়ে সুশান্ত-সহ ৬ জন বর্তমানে দমদম সেন্ট্রাল জেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে। তদন্তকারীরা জানান, জেলে বসেই খুনের ছক কষেছিল সুশান্ত। খুনের মামলায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করে ইতিমধ্যে মামলার চার্জশিটও দিয়েছে সিআইডি।
প্রতিবাদী এবং জনদরদী যুবক বরুণের জীবনকাহিনী প্রভাবিত করেছিল চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে। তিনি বরুণকে নিয়ে বানিয়েছেন ‘প্রলয়’ ছবিটি। শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছে সেই ছবি। যা দেখতে বরুণের আত্মীয়-প্রতিবেশীদের অনেকে এসেছিলেন কলকাতার প্রিয়া সিনেমা হলে।
বরুণকে নিয়ে তৈরি সিনেমা দেখতে রওনা দিয়েছেন এলাকার মানুষ।—নিজস্ব চিত্র।
এলাকার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সিনেমা তৈরি হওয়ায় এক দিকে যেমন গর্বিত সুটিয়ার মানুষ, তেমনই বরুণের কথা ভেবে বারেবারেই তাঁদের মন ভারাক্রান্ত হয়েছে। ছবি দেখতে দেখতে বহু দৃশ্যে হাততালি যেমন দিয়েছেন, তেমনই বরুণকে খুনের দৃশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। তবে সব মিলিয়ে রূপালি পর্দার বরুণের সঙ্গে বাস্তবের মানুষটির মিল খুঁজে পেয়ে নিশ্চিন্ত তাঁরা। ছবি দেখতে যাওয়ার আগে যা নিয়ে কিছুটা দুর্ভাবনা ছিল অনেকের মধ্যে।
ছবি দেখার পরে প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দারের প্রতিক্রিয়া, “সিনেমার চরিত্রের সঙ্গে আমাদের চেনা বরুণের মিল খুঁজে পেলাম। তবে সিনেমার পুলিশ অফিসারের ভাষা আর একটু মার্জিত হলে ভাল হত। তবে ভাল লেগেছে, পুলিশ অফিসার যখন নিজের ছেলের নামও রাখেন বরুণ।” সুটিয়া-কাণ্ডের ভয়ঙ্কর দিনগুলির প্রতি মুহূর্তের সঙ্গে পরিচিত ননীগোপালবাবু বলেন, “মনে হচ্ছিল সিনেমাটা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। টানা ছ’ঘণ্টা বসে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল।”
পরিচালকের ব্যবস্থাপনায় সুটিয়া থেকে বাসে করে প্রিয়া সিনেমা হলে এসেছিলেন ৩৭ জন। তাঁদেরই এক জন নিরুপমা বিশ্বাস বলেন, “বরুণকে খুনের দৃশ্যটা দেখে আমরা হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। ওকে নিয়ে কত স্মৃতি ভিড় করছিল মনের মধ্যে।” পরিমল মণ্ডলের কথায়, “বরুণকে যে ভাবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে দেখেছি, সেই ভূমিকা খুব সঠিক ভাবে ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক। বরুণের ভূমিকায় পরমব্রতর প্রশংসা না করে থাকতে পারছি না। মনে হচ্ছিল, এই তো ফিরে এসেছে আমাদের চেনা সেই ছেলেটা।”
বরুণ নিজে সিনেমা দেখতে বিশেষ পছন্দ করতেন না বলেই জানিয়েছেন তাঁর দিদি প্রমিলা রায়। শুক্রবার তখনও বাড়ি থেকে বেরোননি তিনি। গোছগাছ করছিলেন শহরে যাওয়ার জন্য। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ভাইকে নিয়ে সিনেমা হয়েছে, সে খুবই আনন্দের কথা। সেই সিনেমা দেখতে যাব, সে তো আরও আনন্দের। কিন্তু এমন দিনে ছেলেটা যদি বেঁচে থাকত...।” কথা বন্ধ হয়ে আসে দিদির।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.