সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের খুনের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন তাঁর পরিবার ও গ্রামের লোকজন। সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। যদিও পঞ্চায়েত ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে চাননি উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সুটিয়ার মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, বরুণকে খুনে দোষীদের কঠোর সাজা চান। তা বলে উন্নয়নের জন্য ভোট দেবেন না কেন? |
বরুণ নিজে অবশ্য কোনও কালেই ভোটকেন্দ্রের ধারকাছ মাড়াতেন না। জানা গেল, কোনও রাজনৈতিক দলের উপরে আস্থা ছিল না প্রতিবাদী যুবকটির। দিদি প্রমীলার বহু অনুরোধে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। বছর খানেক আগে গোবরডাঙা স্টেশনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন)-এর শিক্ষক বরুণ। গণধর্ষণ কাণ্ডের পরে গড়ে ওঠা প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, “এলাকার উন্নয়ন চেয়ে সুটিয়ার বেশির ভাগ মানুষ পঞ্চায়েত ভোটে যোগ দিয়েছেন। যদিও আমার বিশ্বাস, ভোট দেওয়ার সময় তাঁদের এক বার মনে পড়েছে বরুণকে।” প্রতিবাদী মঞ্চের বহু সদস্যই জানালেন, বরুণ-হত্যার তদন্ত চেয়ে তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে। তবে এলাকায় উন্নয়নের প্রশ্নে ভোটদানের মতো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতেই হয়।
বরুণ-খুনের সিবিআই তদন্ত চেয়ে মুখ খুলেছিলেন বরুণের বাবা জগদীশবাবু। ওই খুনের ঘটনায় এলাকার কিছু তৃণমূল নেতার মদত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করে প্রতিবাদী মঞ্চ। তখন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল মঞ্চের। জগদীশবাবু-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় মানহানির অভিযোগ জানান সুটিয়ার দুই তৃণমূল নেতা। সব মিলিয়ে ভোটের আগে সুটিয়া অস্বস্তিতে ফেলেছিল তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বকে। |
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সুটিয়ায় নির্বাচনী সভায় বলেন, তাঁরা সুটিয়ার গণআন্দোলনের পাশে আছেন। ননীগোপালবাবুরা অবশ্য তৃণমূল নেতার ওই বক্তব্যকে কটাক্ষই করেছিলেন। সরকারের উপরে ক্ষোভ, অভিমানে কামদুনি যেখানে ভোটদান থেকে সরে এসেছে, সেখানে সুটিয়ার মানুষের ব্যাপক হারে ভোটদান কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। সুটিয়া পঞ্চায়েতটি গত দশ বছর ধরে তৃণমূলের দখলে। স্থানীয় বাসিন্দা পার্বতী বিশ্বাস, সুনীলা রায়দের বক্তব্য, “উন্নয়নের কাজ ভালই হয়েছে এলাকায়। সে কারণে ভোট না দেওয়ার কারণ ছিল না। তবে বরুণের খুনের সুবিচার চেয়ে আন্দোলন চলবেই।”
গাইঘাটার রাজাপুরে ক’দিন আগে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল এক কিশোরীকে। ধরা পড়ে এক জন। দোষীর চরম শাস্তি চেয়ে আন্দোলনে নামেন সেখানকার মানুষও। ভোট দিয়েছেন রাজাপুরের বাসিন্দারাও। নিহত কিশোরীর মা বলেন, “ভোট দেওয়ার আগে মনে হয়েছে, যে দল মেয়ের খুনিকে চরম শাস্তি দেবে, তাকেই ভোট দেব।”
|