দিন কারও সমান যায় না।
যে শাসনে এক সময়ে বাঘে গরুতে জল খেয়েছে মজিদ মাস্টারের কথায়, সেখানে ভোটই দিতে পারলেন না মাস্টার। তাঁর স্ত্রী আসফ নুরি বেগম আবার শাসন থেকেই দাঁড়িয়েছেন জেলা পরিষদে। তিনি নিজের ভোটটা দিয়েছেন। তবে স্বামী মজিদকে পড়তে হল অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। আগের নির্বাচনগুলিতে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলেরও কার্যত এই হালই হত। |
শাসন তো বটেই, গোটা উত্তর ২৪ পরগনায় যে কোনও স্তরের ভোটে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ ছিলেন দলের অন্যতম সেনাপতি। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও তাঁর হাত ধরেই শাসন এলাকায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছিল সিপিএম। অথচ পাঁচ বছরেই বদলে গিয়েছে গোটা চিত্রনাট্য। দিনভর শাসনের মাটিতে এ দিন দাপিয়ে বেড়ালো তৃণমূল। পুটুরিয়ায় নির্দল প্রার্থী ইজাজুল হক, কৃষ্ণমাটির সিপিএম প্রার্থী রশিদা বিবি-সহ পাঁচ জনকে তৃণমূলের লোকজন বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের ভর্তি করা হয় বারাসত হাসপাতালে। মারধরের অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। শাসনে ১৫১টি বুথের মধ্যে ১১৮টিতেই পোলিং এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। উত্তেজনাপ্রবণ বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী সাবেকুন্নেসা বলেন, “এই প্রথম নির্বিঘ্নে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছেন শাসনের মানুষ।” বারাসত ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মোতিয়ার সাঁপুই বলেন, “ওরা (সিপিএম) ভোট বানচাল করার চেষ্টা করেছে। মানুষ ওদের সঙ্গে নেই।” |
এ দিন সকাল সওয়া ৭টার মধ্যে নিজের ভোটটা দিয়ে ঘরে ঢুকে যান মজিদের স্ত্রী। বেশ কিছু দিন ধরে তালাবন্ধ হয়ে থাকা বেলিয়াঘাটা জোনাল পার্টি অফিস খোলা হয়েছিল শুক্রবার। সেখানে বসেছিলেন মজিদ। তবে ঢোকেননি খাসতালুক শাসনের গ্রামে। দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকাছাড়া মাস্টার। বললেন, “শাসনে তৃণমূল যে ভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাতে আমি গেলে অশান্তি আরও বাড়ত। তা এড়াতেই আমি গ্রামে ঢুকিনি।” মজিদের অভিযোগ, “ওরা অর্ধেকেরও বেশি বুথে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে।” আসফ নুরিও জানান, সকাল থেকে শাসনের বিভিন্ন বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন শাসক দলের নেতারা। বামজমানায় ভোটের দিনগুলিতে এমনই অভিযোগ শোনা যেত তাঁদের গলায়।
সব মিলিয়ে পালাবদলের চিত্রনাট্যের সাক্ষী থাকল শাসন।
|