শাসনের বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় একটা কথা “জমি কারও বাপের নয়। জমি হল দাপের।” বেআইনি ভেড়ি ব্যবসার কোটি কোটি টাকা দখলে রাখতে গেলে দাপটের দরকার আছে বইকি। বাম জমানায় সিপিএম নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টারের নেতৃত্বে সেই দাপট ছিলও বটে সিপিএমের। তবে মাস্টারের সে দিন গিয়েছে। গ্রামেই ঢুকতে পারেন না। এখন তৃণমূলের দাপট গোটা শাসন জুড়ে।
পরিস্থিতি এমনই, মজিদ তাঁর নিজের কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন কিনা ঠিক নেই। তবু আড়ালে-আবডালে তাঁকে নিয়েই আলোচনা সর্বত্র। স্ত্রী আসফ নুরি বেগম এ বার শাসনে সিপিএমের জেলা পরিষদ প্রার্থী। স্ত্রীর হয়ে প্রচারে আসেননি মজিদ। উল্টে প্রচারে গিয়ে সিপিএম নেত্রীদের হেনস্থা হতে হয়েছে শাসনে। তাতে আবার জড়িয়েছে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। |
আসফ নুরি জানালেন, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বামী-দেওররা এলাকা ছাড়া। চাষবাস করতে পারেন না। হুমকির জেরে গ্রামের বেশির ভাগ লোক এড়িয়ে চলে। তবু পার্টির কাছ থেকে যখন ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব এল, আপত্তি করেননি লড়াকু নেতার স্ত্রী। বললেন, “বড় সভা করতে গেলেই তৃণমূলের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তবু হাল ছাড়িনি।”
১৯৯২ সালে জেলা পরিষদের আসনে জয়ী হয়েছিলেন আসফ নুরি। সে বার হাজার দশেক ভোটে হারিয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস প্রার্থী সাবেকুন্নেসাকে। এ বার তৃণমূলের টিকিটে বিরোধী প্রার্থী তিনিই। আসফ নুরি বলেন, “মানুষ ভোট দিতে পারলে এ বারও জিতব।”
সাবেকুন্নেসার স্বামী মহসিন ইসলাম আবার তৃণমূলের ডাকসাইটে সংগঠক। মহিলা সংরক্ষিত কেন্দ্রে স্ত্রীর হয়ে প্রচারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাবেকুন্নেসা বলেন, “আগে মানুষ ভয়ে ভোটই দিতে পারত না। এ বার নির্ভয়ে ভোট দেবে। আমি অনেক ভোটে জিতব।” তৃণমূল প্রার্থীর কথায়, “সভা করতে গেলে তো মানুষ লাগে। ওদের (সিপিএম) লোকবল কোথায়?”
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ আলি বলেন, “ঠিক মতো ভোট হলে আমাদের দলের প্রার্থীরাই জিতবে। অনাবশ্যক ঝামেলা এড়াতে আমি ওখানে প্রচারে যাইনি।”
অন্য দিকে, বারাসত ২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি মোতিহার সাঁপুই বলেন, “মজিদ মাস্টারের নেতৃত্বে সিপিএমের অত্যাচারে শাসনের মানুষ বীতশ্রদ্ধ। পরিবর্তনের পরে তাঁরা একটু শান্তিতে আছেন। এই শান্তি বজায় রাখার জন্য মানুষ আমাদের প্রার্থীদেরই জেতাবেন।” শান্তি ফেরাবে কে, তা অবশ্য জানেন না রাজনৈতিক সন্ত্রাসে ক্লান্ত শাসনের মানুষ।
|