ঘরছাড়া মজিদ, অশান্ত শাসনে ভোট-প্রার্থী স্ত্রী আসফনুরি
রনে ছাপা শাড়ি, বয়স বছর সাতান্ন, আটপৌরে গৃহবধূর চেহারা। এই মহিলাই একে-৪৭ হাতে ভেড়ির আলে দাঁড়িয়ে লড়েছেন এক সময়ে?
মজিদ মাস্টারের স্ত্রী আসফনুরি বেগম মৃদু হেসে বললেন, “কী জানেন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আমরা কেউ সে ভাবে কথাই বলিনি কখনও। তা অবশ্য পার্টির নির্দেশ মেনে। কিন্তু সেই সুযোগে আমাদের সম্পর্কে নানা মনগড়া কথা লেখা হয়েছে। লোকে ভেবেছে সে সবই ঠিক।”
আসফনুরির লড়াকু মনোভাবের নানা গল্পের সবগুলোই হয়তো মনগড়া নয়। তিনি এ বার জেলা পরিষদ আসনে বারাসত ২ ব্লকের সিপিএম প্রার্থী। ১৯৯৩ সালেও তিনি ওই আসনে জিতেছিলেন। তবে তখন শাসনে মাস্টারের কথায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। মজিদ নিজেও তখন ছিলেন বারাসত ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সেই শাসনেই গত আড়াই বছর ঢুকতে পারেন না মজিদ আলি ও তাঁর ভাই আকবর আলি। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শাসনে তাঁদের সাদামাটা একতলা বাড়িটায় থাকছেন আসফনুরি। এ দিন সকালেই সেই বাড়ির সামনে বোমা পড়েছে। বাড়িতে সবুজ আবির ছিটিয়ে দিয়ে গিয়েছে কারা।
ভোটে দাঁড়াতে ভয় করল না?
“ভয় করল না, তা বলব না। তবে জেদও চেপে গিয়েছে। আমি দাঁড়াতে চাই শুনে উনি বললেন, ভেবে দেখো। আমি বললাম, ভাবা হয়ে গিয়েছে। ভোটে লড়বই,” বললেন আসফনুরি। জিতলে কী করবেন? “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাব। বলব, আপনি মানুষের রায়ে জিতেছেন, আমিও তাই। আমাকে কাজ করার সুযোগ দিন, অধিকার দিন।”
স্থানীয় নেতা মহম্মদ জিয়াউল ইসলাম অবশ্য বলেন, “মজিদ মাস্টার এলাকা ছাড়া হওয়ার পরে শাসনে শান্তি ফিরেছে। ওঁর স্ত্রী ভোটে দাঁড়িয়ে ফের এলাকা অশান্ত করতে চাইছেন।” একই অভিযোগ জেলা পরিষদের আসনে আসফনুরির প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের সাবেকুন্নেসার। বললেন, “আগে তো শাসনে ভোটই করতে দিত না মজিদ মাস্টারের লোকজন। সন্ত্রাসের রাজত্ব চালাত। এ বার ভোট হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে।”
শাসনে গণতন্ত্রের লক্ষণ অবশ্য দেখতে পাচ্ছেন না আসফনুরি। তিনি জানালেন, তৃণমূলের শাসানিতে জমি চাষ করতে পারেননি গত কয়েক বছর। গ্রামে কার্যত একঘরে হয়ে আছেন। কেউ ডেকে কথা বলে না। গোয়ালে কয়েকটা গরু, কিন্তু গোয়ালা দুধ কিনতে ঢুকতে পারে না বাড়িতে। তবু তিনি প্রত্যয়ী। “ঠিকঠাক ভোটটা হলে ৮০% ভোট আমিই পাব। এত কিছুর পরেও আমার সামনে এসে কেউ কিন্তু কিছু বলার সাহস পায় না।”
আসফনুরি যা-ই বলুন, তৃণমূলের জমানায় ভোটের লড়াই সব চাইতে কঠিন যে সব বিরোধী প্রার্থীদের কাছে, তাদের মধ্যে তিনি প্রায় শীর্ষে। আশির দশক থেকে একের পর এক খুন-জখমের ঘটনায় জড়িয়েছে মজিদ মাস্টারের নাম। গত বিধানসভা ভোটের আগে সেই অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছেন। ভেড়ি এলাকার বেআইনি টাকার কারবার পুরোটাই এক সময়ে তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে অভিযোগ। তবু স্বামীর পক্ষ নিয়ে ভোটে কেন? আসফনুরির জবাব, “আমার স্বামীর মতো সৎ মানুষ আমি দেখিনি। এক সময়ে জোতদারদের হাত থেকে ভেড়ির মালিকানা কেড়ে নিয়ে তিনি গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়েছিলেন। একটা টাকাও কখনও নিজে নিয়েছেন, কেউ সেই অপবাদ দিতে পারবে না।”
স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস অবশ্য আজকের নয়। শাসন-সংলগ্ন সহরা গ্রামের কিশোরী আসফনুরি তখন পড়েন শাসন হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে। একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন মজিদ। বামপন্থী আদর্শবাদী নেতা হিসাবে গ্রামের লোকে এক ডাকে চেনে মাস্টারকে। সেই মজিদ এক দিন রাত ৯টার সময়ে হাজির আসফনুরির বাড়িতে। বাবাকে ডেকে বললেন, মেয়েকে বিয়ে করতে চান। আসফনুরির বাবা বিয়ের জোগাড়যন্তরের জন্য দিনকয়েক সময় চাইলেন। বিনীত ভাবেই মাস্টার জানালেন, সময় দেওয়া যাবে না। বিয়ে হলে এখনই। সেই রাতেই নিকাহ সেরে বউ নিয়ে সকালে বাড়ি ফিরেছিলেন তরুণ মজিদ।
সেই মজিদ মাস্টার যাতে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন, সে জন্য আজ আবার ভোটের ময়দানে আসফনুরি।

পুরনো খবর:
পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.