আবার উত্তপ্ত শাসন, গ্রেফতার মজিদ মাস্টার থানা থেকেই জামিন
সিপিএমের জেদ, ঘরছাড়াদের ফেরানো হবেই। আর তৃণমূলের হুমকি, ঘরছাড়াদের ফেরানোর চেষ্টা করলে ফল ভাল হবে না।
উত্তর ২৪ পরগনার ভেড়ি এলাকা শাসন তাই ফের তাতছে। এরই মধ্যে রবিবার শাসন-সংলগ্ন বেলিয়াঘাটা থেকে গ্রেফতার হন এক সময়ে ওই এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টার। রাতে ব্যক্তিগত জামিনে বারাসত থানা থেকে ছাড়াও পান সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ। মজিদকে সামনে রেখে ফের এলাকার দখল নিতে চায় সিপিএম, অভিযোগ তৃণমূলের।
জামিন পেয়ে থানা থেকে বেরোচ্ছেন মজিদ।—নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটের আগে নতুন করে গোলমালের ভয়ে স্থানীয়রা। ভেড়ি এলাকায় ‘কাঁচা টাকার’ দখলকে ঘিরে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হবে, সে আশঙ্কাও রয়েছে। ইতিমধ্যেই শাসনে মিছিল করেছে তৃণমূল। ঘরছাড়াদের ফেরানোর দাবিতে মিছিল করার অনুমতি চেয়েও পায়নি সিপিএম। শনিবার রাতে শাসন-সংলগ্ন বেলিয়াঘাটায় সিপিএমের বারাসত ২ জোনাল কমিটির অফিসে হামলা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় সেখানে যান মজিদ। যিনি দীর্ঘদিন ধরেই শাসন-ছাড়া। পুলিশ তখনই তাঁকে ধরে। জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেনের বক্তব্য, “মজিদ ওই এলাকায় গেলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, সেই আশঙ্কায় তাঁকে ধরা হয়।” মজিদ বলেন, “কমিউনিস্টদের কাছে গ্রেফতার হওয়াটা সাধারণ ব্যাপার।”
তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসনে গণ্ডগোল পাকাতে গিয়েছিলেন মজিদ।” সিপিএম অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মাস্টারকে নিয়ে দলও কম বিব্রত হয়নি। ২০১১-তে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল কর্মী নুর আলি খুনে মূল অভিযুক্ত মজিদ হাজির হন আলিমুদ্দিনে। সঙ্গে জেলার সিপিএম নেতারা। অস্বস্তিতে পড়ে বাম শিবির। বিরোধীরা সমালোচনা শুরু করে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ধরতে বলেন মজিদকে। ধরা পড়ার পর থেকে বছর দু’য়েক এলাকাছাড়া ছিলেন মজিদ।
২০০৯-এর লোকসভা ভোটের পর থেকেই শাসনে ক্রমে মুঠো আলগা হয়েছে সিপিএমের। জাঁকিয়ে বসেছে তৃণমূল। তবে মজিদ-সহ এলাকার কিছু সিপিএম-তৃণমূল নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করায় ইদানীং নিয়মিত বোমা-গুলির শব্দ আর শোনা যাচ্ছিল না শাসনে। যদিও উত্তেজনার রসদ থেকেই গিয়েছিল। শাসনের ঘরছাড়াদের ফেরাতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জেলা বামফ্রন্ট। জ্যোতিপ্রিয়বাবু পাল্টা জানিয়েছেন, “মজিদরা শাসনে ঢুকলে আঁশ-বঁটি নিয়ে সবাই তৈরি!” জেলা তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ, “যে মজিদ দীর্ঘকাল এলাকায় ঢুকছিলেন না, তিনিই হঠাৎ পার্টি অফিসে হামলার খবরে শাসন সংলগ্ন এলাকায় গেলেন কেন? আসলে তাঁকে সামনে রেখে সিপিএম এলাকা দখলের রাজনীতি করতে চায়।” সিপিএম নেতা অমিতাভ নন্দীর বক্তব্য, কার্যালয়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তো যেতেই পারেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য!
শাসনে এলাকা দখলের রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে স্থানীয় ভেড়ি-অর্থনীতি। সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্য কুতুবউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, “আগে মাছ চাষ করে এলাকার চাষিরা টাকা পেতেন। এখন শাসন-খড়িবাড়ির ভেড়িগুলো থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে তৃণমূলের এক-এক জন নেতা। ওই টাকা আদায় নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটির জেরেই এলাকা থেকে শান্তি চলে গিয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার সাঁপুই বলেন, “সিপিএমের চাপে শাসনের মানুষ এত দিন না খেয়ে ছিলেন। এখন খেতে পাচ্ছেন। সে জন্যই ওরা এলাকায় ঢুকতে পারছে না। তাই ওরা উঠে-পড়ে লেগেছে।” তবে কি ফের হিংসা অনিবার্য? পুলিশ সুপার বলেন, “শাসনে পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। দু’পক্ষকেই বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার ফের অবনতি হোক, এটা নিশ্চয় কোনও দলই চাইবে না।”

পুরনো খবর





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.