চাঁদা চাইবেন তৃণমূলের কাছেও
ভাঙা অফিসে বিক্ষোভের মুখে গৌতম-অশোক
ভাঙা, পোড়া দলীয় কার্যালয় দেখতে গিয়েও তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল বামফ্রন্ট নেতৃত্বকে! বাম কর্মীদের মানবশৃঙ্খল বেষ্টিত হয়ে ভাঙা কার্যালয় দেখে বেরিয়ে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব ঘোষণা করলেন, ভাঙার পর্ব শেষ হলে তা গড়ে তোলার চাঁদা নিতে তাঁরা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেও যাবেন!
দিল্লিতে সিপিএমের হাতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে নেমে রাজ্য জুড়েই প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বাম শরিকের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের নামে। আক্রান্ত হয়েছেন বাম নেতা-কর্মীরা। রবিবারও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধীদের কর্মী ও কার্যালয়ের উপরে শাসক দলের হামলা অব্যাহত। উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে এ দিনই সন্ধ্যায় তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, এক কালের ডাকসাইটে নেতা মজিদ মাস্টার। আর সেই জেলাতেই এ দিন তৃণমূলের ‘গো ব্যাক’ স্লোগান-সহ বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সিপিএমের গৌতমবাবু, বামফ্রন্টের প্রবীণতম নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ এবং সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের ঝাউতলায় কয়েক দিন আগে সিপিএমের একটি কার্যালয়ে আগুন লাগানো হয়েছিল। অগ্নিদগ্ধ এবং জখম অবস্থায় এখনও ব্যারাকপুরের হাসপাতালে ভর্তি সিপিএমের এক প্রবীণ কর্মী। আক্রমণের মুখে কর্মীদের উৎসাহ দিতে ওই কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য এ দিন অশোকবাবু, গৌতমবাবুরা বাসুদেবপুর মোড়ে পৌঁছতেই কালো পতাকা নিয়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল সমর্থকেরা। হরিসভা দিয়ে ঘুরপথে ঝাউতলায় পৌঁছে তাঁরা দেখেন, সেখানেও বিক্ষোভ! সঙ্গে অশ্রাব্য কটূক্তি চলছিল বলেও বামেদের অভিযোগ। কিছু ক্ষণ গাড়িতে অপেক্ষা করার পরে বাম কর্মী-সমর্থকেরাই হাত ধরাধরি দিয়ে নেতাদের আড়াল করে কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেন। ওই কার্যালয় দেখে অশোকবাবুরা চলে যান শ্যামনগরের গাঙ্গুলিপাড়ায় ফ ব-র জেলা সম্পাদক হরিপদ বিশ্বাসের আক্রান্ত বাড়িতে। সেখানে মিনিটদশেক কাটিয়ে তাঁরা যান পিনকলে ফ ব-র রাজ্য পার্টি স্কুলে। পরে বারাসতে গিয়ে বসে জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক।
ফ ব-র পার্টি স্কুলে বসেই সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু বলেন, “কয়েক দিনে অজস্র কার্যালয় ভাঙা হয়েছে। ধরে রাখছি আরও কিছু কার্যালয় ভাঙা হবে। প্রায় ৮০-৯০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা কুপন ছাপিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে বলব, ভাঙা কার্যালয় গড়ে তুলতে সহযোগিতা করুন। কারা ভাঙছেন, ছবিও তুলে রাখছি। পরে তাঁদের বাবা-মায়ের কাছে গিয়েও বলব, দেখুন ছেলেরা কী করেছে! এদের হাতে ভাঙা বাড়ি গড়তে দশটা টাকা চাঁদা দিন!” অশোকবাবুর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাণ্ডব চলছে! জ্যোতি বসুর ছবি মাড়ানো হচ্ছে, নেতাজির ছবি ফেলে দেওয়া হচ্ছে।”
বারাসতের রবীন্দ্রভবনে এ দিনই শিক্ষক সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেন, “সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা যতটা নিন্দনীয়, ততটাই নিন্দনীয় দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের উপরে হামলার ঘটনা।” পাশাপাশি, দিল্লির ঘটনায় নিন্দায় যে বিশিষ্ট জনেরা ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পথে নেমেছেন, তাঁদের কারও পুত্র, কারও পৌত্রসম সুদীপ্তের মৃত্যুর তদন্ত চাইতে কেউ কেন কিছু বললেন না ফেসবুকে পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহ।
হামলার প্রতিবাদে পাল্টা হামলা অবশ্য অব্যাহত। শনিবার গভীর রাতে বারাসত-২ ব্লকে বেলিয়াঘাটায় সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। ওই জেলারই সন্দেশখালির দক্ষিণ নলকোড়া গ্রামে শনিবার রাতে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দু’পক্ষের ৬ জন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিন জন। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট রয়েছে গ্রামে। দু’দলের নেতৃত্বই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। বর্ধমানের রানিগঞ্জের সাহেববাঁধ পাড়ায় সিপিএমের একটি অঞ্চল কার্যালয়ে তৃণমূল ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা দাবি, সহানুভূতি আদায়ে সিপিএমই নিজেদের কার্যালয় ভাঙচুর করছে! আবার বাঁকুড়ার ইন্দাসে তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুরে আঙুল উঠেছে দলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। কলকাতার কাছে সন্তোষপুরে এ দিন সিটুর কার্যালয় তৃণমূল দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ। কসবার বোসপুকুরেও সিপিএমের একটি কার্যালয় ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে ১৯ এপ্রিল কলকাতায় মিছিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। তারা ২৩ তারিখ দ্বারস্থ হবে পুলিশ কমিশনারের। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ফ্রন্ট বারাসতে কনভেনশন করবে ১৯ তারিখেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.