অমর্ত্য-অস্ত্রেই মোদীকে আক্রমণ চিদম্বরমের
থবা নয়, এবং। যে কোনও একটি নয়, দু’টিই।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অমর্ত্য সেন এবং জগদীশ ভগবতী, দু’জনের অর্থনীতির তত্ত্বই একই রকম প্রাসঙ্গিক বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। উন্নয়নের মডেল নিয়ে ওই দুই পৃথিবীখ্যাত অনাবাসী ভারতীয় অর্থনীতিবিদের তুল্যমূল্য আলোচনা করতে গিয়ে আক্রমণ শানালেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। তাঁরই খাস তালুক আমদাবাদে। আর তা করতে গিয়ে তুলে আনলেন অমর্ত্য সেনের যুক্তিকেই। যোজনা কমিশনের পরিসংখ্যান তুলে দেখালেন, বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে গুজরাত অনেককে টেক্কা দিতে পারে ঠিকই। কিন্তু সামাজিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে মোদীর রাজ্য মোটেই সবার আগে নয়।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের মতে, আর্থিক বৃদ্ধি উন্নয়নের মাধ্যম মাত্র। চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। তাই শুধু তার দিকে না-তাকিয়ে সরকারের উচিত সামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি লগ্নি করা। টাকা ঢালা স্বাস্থ্য-শিক্ষায়। তবেই গড়াবে উন্নয়নের চাকা। চড়বে বৃদ্ধির হারও। কেরল যে মডেলের অন্যতম উদাহরণ।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতী মনে করেন, বৃদ্ধিই উন্নয়নের আসল চাবিকাঠি। কারণ তার হার বাড়লে, তবেই সামাজিক খাতে ঢালার মতো টাকা আসবে সরকারের হাতে। তাই পাখির চোখ হওয়া উচিত বৃদ্ধিই। যার উদাহরণ হিসেবে বার বার গুজরাতের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
সোমবার এ প্রসঙ্গে চিদম্বরম বলেন, বৃদ্ধির জন্য আপোসহীন মনোভাবের পাশাপাশি একান্ত জরুরি গরীব মানুষের প্রতি সহমর্মিতা। কারণ, একমাত্র এই দু’য়ের মেলবন্ধন ঘটলে, তবেই সুখী, মজবুত অর্থনীতির দেশ হতে পারে ভারত। আর সেই কারণেই ভগবতীর তত্ত্বের সঙ্গে অমর্ত্য সেনের মডেল না-মিললে, অন্তত ভারতের জন্য তা অপূর্ণ রয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
আলোচনার এই পরিসরেই এ দিন মোদীকে আক্রমণ করেছেন চিদম্বরম। পরিসংখ্যানের বুনোটে প্রশ্ন তুলেছেন গুজরাতের সাফল্য নিয়েই। সেই গুজরাত, যাকে পুঁজি করে প্রধানমন্ত্রীর মসনদ হাসিলের স্বপ্ন দেখছেন মোদী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, গুজরাতের বৃদ্ধির হার ৯.৫%। মহারাষ্ট্রের ৮.৫%। কৃষি এবং আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রের বৃদ্ধির নিরিখেও বহু যোজন এগিয়ে মোদীর রাজ্য। কিন্তু তেমনই, শিশু মৃত্যু, জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু, তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টি ইত্যাদি বিষয়েও মহারাষ্ট্রের তুলনায় ‘এগিয়ে’ তারা। এমনকী টিকার সাফল্যেও গুজরাতকে টেক্কা দিয়েছে তার প্রতিবেশী রাজ্য। সুতরাং শুধু ভগবতীর বৃদ্ধি-নির্ভর মডেলে ভারতীয় অর্থনীতির পুরো ছবি ধরা সম্ভব নয় বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
তাই অনেকেই মনে করছেন, দু’জনের তত্ত্বকে একই রকম প্রাসঙ্গিক বললেও, আসলে এ দিন ‘অমর্ত্য-অস্ত্রে’ই মোদীকে ফের ঘায়েল করার চেষ্টা করলেন চিদম্বরম। কারণ, সম্প্রতি অমর্ত্যবাবু মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান না বলায়, তাঁর ভারতরত্ন কাড়তে বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপি নেতা চন্দন মিত্র। আজকের দিনে অমর্ত্য-তত্ত্ব আদৌ আর কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়েও ঠারেঠোরে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু তেমনই গুজরাত-মডেলকে ‘চ্যালেঞ্জ করা’ অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যকে বার বার তুলে আনছে কংগ্রেসও।
কিছু দিন আগেই কলকাতায় এসে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেছিলেন, গুজরাতে আর্থিক সূচক ইতিবাচক। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ক্ষেত্রে বহু পিছিয়ে তারা। এ দিন মোদীর রাজ্যে দাঁড়িয়ে চিদম্বরমও সেটাই মনে করিয়ে দিলেন বলে অনেকের অভিমত।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.