|
|
|
|
সনিয়ার সাক্ষাৎ চান কিরণ রেড্ডি |
তেলেঙ্গানা আজ দিল্লির অপেক্ষায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রশ্নে সম্ভবত আগামিকালই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। ঐতিহাসিক এই কারণেই যে, কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ অদূর ভবিষ্যতে দেশ জুড়ে ছোট রাজ্য গঠনের অন্যান্য দাবিকে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তার আগে আজ কংগ্রেসের একাধিক নেতা দাবি করেন, পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন সনিয়া গাঁধী। কাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাতেই অনুমোদন দেওয়া হবে। তাঁদের দাবি, হায়দরাবাদ শহরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল না করে আপাতত পাঁচ বছর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা, উভয় রাজ্যেরই রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তার পর অন্ধ্রের আলাদা রাজধানী হবে।
যদিও কারও কারও মতে, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব সবিস্তার পর্যালোচনা না করে কিছুই বলা যাবে না। কারণ, এখনও সমস্যা অনেক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ও সর্বভারতীয় কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিরোধী। রাজ্য ভাগের বিরোধিতা করছেন তেলেঙ্গানা বাদে অন্ধ্রপ্রদেশের বাকি অংশের নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি-সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার ১৫ জন মন্ত্রী এবং তিন-চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ইস্তফার হুমকি দিয়েছেন বলেও শোনা গিয়েছিল। তবে রেড্ডি আজ রাতে বলেন, “আমি ইস্তফার হুমকি দিইনি। তবে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনে আমার আপত্তি আছে। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে আমার বক্তব্য জানাব।” রেড্ডির মন্ত্রিসভার সদস্য টি জি বেঙ্কটেশ আজ বলেন, “রাজ্য ভাঙলে নতুন নতুন সমস্যা ও দাবি মাথাচাড়া দেবে। গোর্খাল্যান্ড সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে। এর পর মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, কাশ্মীরেও একই রকম দাবি উঠবে।” বস্তুত, গোর্খাল্যান্ড সমস্যা মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কায় তৃণমূল এবং সিপিএম যুযুধান দুই দলই অন্ধ্র ভাগের বিরোধী।
অন্ধ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা দিগ্বিজয় সিংহের কাছে আগামিকালের বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “যা সিদ্ধান্ত হবে, তা জাতীয় স্বার্থেই নেওয়া হবে।” তবে এ বিষয়ে শরিকদের মন আরও এক বার বুঝে নিতে চাইছে কেন্দ্র। সমস্যা হল, শরদ পওয়ার এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দিচ্ছেন। বিমানমন্ত্রী অজিত জোগীও ছোট রাজ্য গঠনের পক্ষে। উল্টো দিকে বিজেপির তরফেও মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেছেন, “কংগ্রেস পৃথক তেলেঙ্গানা গঠন করতে না পারলে বিজেপি ক্ষমতায় এসে সেই পদক্ষেপ করবে।” মজার কথা হল, অন্ধ্রে এনসিপি বা বিজেপি-র হারানোর কিছু নেই। কিন্তু কংগ্রেসের কাছে পরিস্থিতি শাঁখের করাতের মতো।
তাই অনেকের মতে, কাল এমন সম্ভাবনাও থাকছে যে, ওয়ার্কিং কমিটি হয়তো নীতিগত ভাবে পৃথক রাজ্য গঠনে সায় দিল। কিন্তু বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হল দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি গঠন বা মন্ত্রিগোষ্ঠীতে আলোচনার কথা বলে। এর মাধ্যমে তেলেঙ্গানার মন রাখাও যাবে, আবার এখনই অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগ করতে হবে না।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, ওয়ার্কিং কমিটি পৃথক তেলেঙ্গানায় সায় দিলে তখন এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। তার পর বিষয়টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হতে পারে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর বিবেচনার পর রাজ্য পুনর্গঠন বিল সংশোধন প্রস্তাব পাশ করাতে হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। সেটি তার পর পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে। রাষ্ট্রপতি ওই বিলটি পাশের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাজ্যের কাছে পাঠাবেন। সেই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য বিধানসভায় বিলটি পাশ হলে ভাল। নইলে প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ও পরে সংসদে বিলটি পাশ করাতে হবে। সম্প্রতি রাহুল গাঁধী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। সূত্রের খবর, প্রণববাবু রাহুলকে জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে অন্ধ্র ভাগের পক্ষপাতী নন।
এই অবস্থায় আগামী সপ্তাহে শুরু হতে চলেছে সংসদের অধিবেশন। কিন্তু বিরোধীদের বাধায় সংসদ কতটা চলবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্ধ্র বিধানসভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কদের বিরোধিতায় বিল পাশের সম্ভাবনা কম। ফলে যদি ওয়ার্কিং কমিটির পৃথক তেলেঙ্গানার পক্ষে মত দেয়ও, তার গঠন প্রক্রিয়া মসৃণ হওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। অন্ধ্রে গণ্ডগোলের আশঙ্কাও পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছে না কেন্দ্র। সে রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১২০০ আধাসেনা রয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে আরও এক হাজার আধাসেনা পাঠানো হয়েছে।
|
পুরনো খবর: তেলেঙ্গানা প্রশ্নে বিক্ষুব্ধ বাকি অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লিতে দরবার |
|
|
|
|
|