|
|
|
|
বাজপেয়ী চাইলে ফিরিয়ে দেব, জবাব অমর্ত্যের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নরেন্দ্র মোদীকে যে তিনি পছন্দ করেন না, সে কথা প্রকাশ্যে বলেছেন সম্প্রতি। আর তার জেরেই তাঁর ভারতরত্ন সম্মান ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি তুললেন এক বিজেপি সাংসদ। সেই দাবির নিন্দায় পঞ্চমুখ কংগ্রেস।
লোকসভা ভোটের মুখে
শাসক-বিরোধী তরজায় জড়িয়ে গেলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
অর্থনীতির মডেল হিসেবে গুজরাতকে যে তিনি অগ্রগণ্য বলে মনে করেন না, তা আগেও বহু বার বলেছেন অমর্ত্য সেন। তুলনায় বিহার তাঁর অনেক বেশি পছন্দ। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীও যে তাঁর অপছন্দের, সেটা জানিয়েছেন দিন কয়েক আগে। এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য বলেছেন, “ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চাই না। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কাজ করেননি।”
দলের মধ্যেই যথেষ্ট ঝড়-ঝাপটা সামলে মোদী যখন শেষ পর্যন্ত আসন্ন লোকসভা ভোটে কার্যত বিজেপি-র মুখ হয়ে উঠেছেন, তখন এই মন্তব্য ভাল চোখে দেখেনি তাঁর শিবির। বিজেপি সাংসদ চন্দন মিত্র আজ টুইট করেছেন, “নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান না অমর্ত্য সেন। তিনি কি ভারতের ভোটার? পরের এনডিএ সরকারের উচিত তাঁর ভারতরত্ন সম্মান কেড়ে নেওয়া।”
চন্দন মিত্রের এই আক্রমণের প্রাথমিক জবাব দিয়েছেন অমর্ত্য সেন নিজেই। তিনি ফের বলেছেন, ২০০২ সালে মোদীর চোখের সামনে হাজার হাজার সংখ্যালঘুর মৃত্যু আজ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। বিজেপি সাংসদের মন্তব্যে ‘বিস্মিত ও হতাশ’ অমর্ত্যের পাল্টা মন্তব্য, “ভারতের নাগরিক হিসেবে কী ধরনের প্রধানমন্ত্রী চাই, তা বলার অধিকার আমার আছে। চন্দন মিত্রেরও অধিকার আছে আমার ভারতরত্ন কেড়ে নেওয়ার কথা বলার। তবে সেটা তিনি করতে পারেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। চন্দন মিত্রের হয়তো জানা নেই যে, এনডিএ আমলেই আমাকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে। অটলবিহারী বাজপেয়ীই তা দিয়েছেন। বাজপেয়ী চাইলে তা ফিরিয়ে দেব।” |
নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান না অমর্ত্য সেন। তিনি কি ভারতের ভোটার? পরের এনডিএ সরকারের উচিত তাঁর ভারতরত্ন সম্মান কেড়ে নেওয়া।
চন্দন মিত্র,
বিজেপি সাংসদ |
|
চন্দন মিত্রের হয়তো জানা নেই যে, এনডিএ আমলেই আমাকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে। অটলবিহারী বাজপেয়ীই তা দিয়েছেন। বাজপেয়ী চাইলে আমি তা ফিরিয়ে দেব।
অমর্ত্য সেন,
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ |
|
এর পর আসরে নেমেছে কংগ্রেসও। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মনীশ তিওয়ারির প্রশ্ন, “এমন একটা দাবি তোলা কি ফ্যাসিবাদী মনোভাবের পরিচয় নয়? বিজেপি কি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে?” আর টুইটারে শাকিল আহমেদের মন্তব্য, “অমর্ত্য সেন মোদীকে নীতীশ কুমারেরও নীচে জায়গা দিয়েছেন। আর এই অপরাধে বিজেপি তাঁর ভারতরত্ন কেড়ে নেওয়ার কথা বলছে! এটি কি অসহিষ্ণুতার চরম নিদর্শন নয়?”
বিজেপি অবশ্য দলগত ভাবে এই বিতর্ক থেকে দূরে থাকার চেষ্টাই করছে। মুরলীমনোহর জোশীর কথায়, “এটা চন্দন মিত্রের ব্যক্তিগত অভিমত। বিজেপি এই মতের সমর্থক নয়।” কিন্তু ঘটনা হল, মোদীপন্থীরা ঘরোয়া ভাবে অমর্ত্যের মন্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, অমর্ত্য সেন গোড়া থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। নীতীশ কুমারের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু তাই বলে তিনি কোনও এক জন রাজনৈতিক নেতার বিরোধিতা করবেন কেন? তিনি নীতির সমালোচনা করতে পারেন, প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু মোদী-বিরোধীদের সুরে রাজনৈতিক মন্তব্য করবেন কেন?
রাজনৈতিক মন্তব্যের পিছনে অবশ্য অর্থনীতির বৃহত্তর বিতর্কও রয়েছে। অর্থনীতির প্রশ্নে গুজরাতের সাফল্যের কাহিনিকে অনেক দিন ধরেই চ্যালেঞ্জ করছেন অমর্ত্য সেন। গুজরাতের উন্নয়ন নিয়ে বিজেপি যখন মুখর, তাকে অস্ত্র করেই যখন ভারত-বিজয়ের লক্ষ্যে নেমেছেন মোদী তখন অমর্ত্য সেনের বক্তব্য: এই উন্নয়ন তেমন চমকপ্রদ নয়। স্বাধীনতার আগে থেকেই অর্থনীতির অনেক মাপকাঠিতে এগিয়ে ছিল গুজরাত। তুলনায় অনেক পিছিয়ে থেকেও নীতীশ কুমারের আমলে বিস্ময়কর ভাবে উন্নতি হয়েছে বিহারের। বিশেষ করে সামাজিক উন্নয়নের নিরিখে।
জগদীশ ভগবতীর মতো অর্থনীতিবিদরা অমর্ত্য সেনের এই তত্ত্বের ঘোর বিরোধী। তাঁদের মতে, গুজরাতের বৃদ্ধির মডেল সারা দেশকে পথ দেখাতে পারে। আর বৃদ্ধির হাত ধরেই ঘটবে দারিদ্রমুক্তি। অমর্ত্যকে আর এক দফা বিঁধে ভগবতী আজ বলেন, “উনি ভারতরত্নের যোগ্য কিনা, তা আমার বিচার্য বিষয় নয়। কিন্তু অধ্যাপক সেন একমাত্র অর্থনীতিবিদ, যিনি ভারতের গরিবদের দু’-দু’বার আঘাত করেছেন। প্রথম বার, ১৯৯১-এর সংস্কারের বিরোধিতা করে। যে সংস্কার ভারতকে বদলে দিয়েছে, গরিবদের সামনে সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। কুড়ি কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছেন। এখন আবার একই কাজ করছেন।”
এই মুহূর্তে অবশ্য অমর্ত্যকে ঘিরে রাজনৈতিক কাজিয়াটাই মুখ্য হয়ে উঠছে। দিনের শেষে যাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক আর নিষ্ফলা’ই বলছেন অমর্ত্য সেন। |
|
|
|
|
|