ফের বলল কোর্ট
ভুয়ো নয় বাটলা হাউস সংঘর্ষ
০০৮ সালে দিল্লির বাটলা হাউসে জঙ্গিদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের সংঘর্ষ ভুয়ো নয় বলে আগেই রায় দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। আজ ওই সংঘর্ষে দিল্লি পুলিশের ইনস্পেক্টর মোহনচন্দ শর্মার হত্যার দায়ে দায়রা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হল জঙ্গি শাহবাজ আহমেদ। ফলে, বাটলা সংঘর্ষে দিল্লি পুলিশের দাবিতে সিলমোহর দিলেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রাজেন্দ্রকুমার শাস্ত্রী।
মোহনচন্দ শর্মা।
২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল দিল্লি। ওই ঘটনায় নিহত হন ২৬ জন। তার ঠিক ছ’দিন পরে জামিয়ানগর এলাকার বাটলা হাউসে হানা দেয় দিল্লি পুলিশের ‘এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট’ মোহনচন্দ শর্মার নেতৃত্বাধীন একটি দল। দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত এক বা একাধিক জঙ্গি ওই বাড়ির এল -১৮ নম্বর ফ্ল্যাটে লুকিয়ে আছে বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বাটলা হাউসে নিহত হয় আতিফ আমিন মহম্মদ সাজিদ নামে দুই যুবক। পুলিশের দাবি, জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের বিস্ফোরক তৈরির পাণ্ডা আমিন। দিল্লি বিস্ফোরণের পিছনেও তারই হাত ছিল। ওই ফ্ল্যাট থেকে আরিজ খান ওরফে জুনেইদ শাহজাদ আহমেদ নামে দু’জন পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছিল পুলিশ। মহম্মদ সইফ বলে আরও এক জন যুবক ওই ফ্ল্যাটে থাকলেও তার সঙ্গে গোটা ঘটনার বা বিস্ফোরণের কোনও যোগ ছিল না বলে আদালতে জানিয়েছেন সরকারপক্ষের আইনজীবী।
জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন মোহনচন্দ শর্মাও। আহত হন বলবন্ত নামে এক হেড কনস্টেবল। আতিফ -সহ সব অভিযুক্তই উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা। পরে আজমগড়েরই একটি গ্রাম থেকে শাহজাদকে গ্রেফতার করা হয়। জামিয়ানগর এলাকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দাকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক।
বাটলা হাউসের ঘটনায় পুলিশের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন নিহত ধৃত যুবকদের পরিবার।

আদালতের রায় শোনার পর পরিবার। ছবি: পিটিআই
তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় নানা মানবাধিকার সংগঠন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পুরো ঘটনাটিই ভুয়ো সংঘর্ষ বলে দাবি করে নানা শিবির। এমনকী, মোহনচন্দ শর্মা পুলিশের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়। স্বভাবতই বিষয়টিতে রাজনীতির রং লাগে। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে সরব হয় সমাজবাদী বহুজন সমাজ পার্টি। এমনকী, ওই সংঘর্ষ ভুয়ো বলে দাবি করেছিলেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও। কিন্তু, দিগ্বিজয়ের দাবিকে আমল দেয়নি তাঁর দল বা কেন্দ্রীয় সরকার। পুরোপুরি দিল্লি পুলিশের দাবিকে সমর্থন করে তারা।
এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ওই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় দিল্লি হাইকোর্ট। বাটলার ঘটনা ভুয়ো নয় বলে রিপোর্ট দেয় কমিশন। সেই রিপোর্ট মেনে নেয় হাইকোর্ট। খারিজ হয়ে যায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি। আজ শাহবাজ দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ফের পুলিশের দাবিই প্রমাণিত হয়েছে।
স্বভাবতই হতাশ নিহত ধৃত যুবকদের পরিবার। পাশাপাশি অনেকটাই স্বস্তিতে মোহনচন্দ শর্মার স্বজন। মোহনচন্দের স্ত্রী মায়ার বক্তব্য, “আমার স্বামী যে জঙ্গিদের সঙ্গে প্রকৃত সংঘর্ষেই শহিদ হয়েছেন তা প্রমাণ হল। আমাদের অবশ্য বিচারবিভাগীয় তদন্তেও আপত্তি ছিল না।”
দিগ্বিজয়ের মন্তব্যের জেরে আজ আবার রাজনৈতিক অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস। দিগ্বিজয় এখনও তাঁর অবস্থানে অনড়। এই সুযোগে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ সরাসরি বলেছেন,“প্রয়াত মোহনচন্দ শর্মাকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দিয়েছিল কেন্দ্র। আবার শাসক দলের নেতারাই ওই সংঘর্ষ ভুয়ো কি না সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজ মোহনচন্দের আত্মা শান্তি পেল। নিরাপত্তাবাহিনীর মনোবলও বাড়বে।”
এই পরিস্থিতিতে দুকূল রক্ষা করতে চেয়েছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, “কংগ্রেস ভুয়ো সংঘর্ষের বিরোধী। তবে আজ আদালতের রায়ের পরে বাটলা হাউস নিয়ে আর কোনও বিতর্ক থাকা উচিত নয়।” বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে মতপার্থক্যও হয়েছিল দিগ্বিজয়ের। আজ দিগ্বিজয়ের নাম না করেই চিদম্বরম বলেছেন, “এক সহকর্মী বাটলা হাউস নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আমি এই মামলার সব তথ্য খুঁটিয়ে দেখেছিলাম। পুলিশ যে প্রকৃত সত্য আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছে তাতে আমি খুশি।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.