|
|
|
|
ক্ষুব্ধ বিজেপি, বিশেষজ্ঞরাও |
জনমত সমীক্ষাও বন্ধের প্রস্তাবে সায়
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নির্বাচন চলাকালীন বুথ ফেরত সমীক্ষার ওপর তিন বছর আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল নির্বাচন কমিশন। এ বার ভোট-পূর্ববর্তী জনমত সমীক্ষাও যাতে কোনও ভাবেই ভোটারদের প্রভাবিত করতে না পারে, সে জন্য ভোটের এক-দেড় মাস আগে থেকেই জনমত সমীক্ষাও বন্ধ করতে চাইছে সরকার। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে সায় দেওয়ার জন্য দু’দিন আগে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রককে সুপারিশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল গুলাম বাহানবতী।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সব রকম জনমত সমীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু কমিশনের মতে, অবাধ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া এমনিতেই বিপুল আয়তনের একটি জনমত সমীক্ষা। তার অব্যবহিত আগে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা রাজনৈতিক দলের তরফে আরও এক বা একাধিক জনমত সমীক্ষার ফলাফলে মূল প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তা ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার তরফে জনমত সমীক্ষার জন্য যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেই প্রক্রিয়ার সততা এবং তা কতটা ত্রুটিমুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সেই কারণেই সরকারের কাছে কমিশনের প্রস্তাব, ভোটের নোটিফিকেশন জারি হওয়ার মুহূর্ত থেকে সব রকম জনমত সমীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যবস্থা করা হোক। কমিশনের এই প্রস্তাব মেনে নিলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন আনতে হবে সরকারকে।
নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই কমিশন ও সরকারের এই সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের আবার অভিযোগ, আসলে এই পদক্ষেপ সরকারেরই। লোকসভা ভোটের আগে সরকারের জনপ্রিয়তা এখন এত তলানিতে যে তা নিয়ে সব রকম আলোচনা বন্ধ করতে চাইছে সরকার। তাই কমিশনের মাধ্যমে এই প্রস্তাব আনছে কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেস।
বিশিষ্ট সেফোলজিস্ট যোগেন্দ্র যাদবের বক্তব্য, “ভোটের আগে জনমত সমীক্ষা বন্ধ করার ব্যাপারে যে যুক্তি সরকার বা কমিশন দিচ্ছে, তা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে ঠিক মতো প্রতিষ্ঠিতও করতে পারছে না তারা।” তাঁর কথায়, এটা ঠিকই যে, জনমত সমীক্ষার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, কেবল জনমত সমীক্ষা বন্ধ করলেই ভোট প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হয়ে যাবে তা নয়।”
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের অনেকে আবার এ-ও মনে করেন, ভোটের আগে আলোচনা ও বিতর্ক আখেরে ভোটারদেরই আরও সচেতন করতে সাহায্য করে। জনমত সমীক্ষা ভোট প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে, শুধু মাত্র এই যুক্তিতে তা বন্ধ করা যায় না। সে রকম হলে ভোটের আগে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনও বন্ধ করা উচিত বলে মত তাঁদের। কারণ তা-ও মানুষকে প্রভাবিত করে।
যাঁর সুপারিশ ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক, সেই গুলাম বাহানবতী বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হওয়া জরুরি। তার আগে জনমত সমীক্ষার মাধ্যমে ভোটাররা কোনও একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রভাবিত হতেই পারেন।” সেই সঙ্গে তাঁর ও সরকার পক্ষের যুক্তি হল, সম্প্রতি সব জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কোনও বিষয়ে একটা বড় অংশের মানুষ পক্ষে বা বিপক্ষে কোনও মত দিচ্ছেন না। কারণ ওই ব্যাপারে তাঁরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে দ্বিধায়। জনমত সমীক্ষা এই সব ভোটারদের সবথেকে বেশি প্রভাবিত করতে পারে বলেই মনে করছে সরকার।
লোকসভা ভোটের আগে সরকারের এই তৎপরতার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন অনেকেই। রাজনীতির কারবারিদের মতে, ভোটের আগে বিভিন্ন বেসরকারি সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই জনমত সমীক্ষা শুরু করে দিয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট যে, দুর্নীতি, নীতি পঙ্গুত্ব, অর্থনীতির দুর্দশা, মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কাজকর্মে বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষুব্ধ। যা ভোটের আগে সরকারের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। তা ছাড়া উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম দেশের সর্বত্রই কংগ্রেসের আসন কমার ইঙ্গিতও মিলছে একাধিক সমীক্ষায়। স্বাভাবিক ভাবেই তা কংগ্রেসকে আরও অস্বস্তিতে ফেলছে। জনমত সমীক্ষার পক্ষে সওয়াল করে বিজেপি মুখপাত্র বিজয় সোনকার শাস্ত্রী বলেন, “জনমত সমীক্ষা বন্ধ হওয়া উচিত নয়। দল সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে।”
জনমত সমীক্ষা বন্ধের প্রস্তাবকে সমর্থন করে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “২০০৪ এবং ২০০৯ সালে একাধিক জনমত সমীক্ষা এনডিএ-কেই এগিয়ে রেখেছিল। কিন্তু দু’বারই দেখা গিয়েছে, ইউপিএ-র আসন সংখ্যা বেশি হয়েছে। ফলে কংগ্রেস জনমত সমীক্ষা নিয়ে ভীত নয়। বরং নির্বাচনের স্বচ্ছতার পক্ষে।” তাঁর বক্তব্য, এই সব কারণেই বুথ ফেরত সমীক্ষা ও জনমত সমীক্ষা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস। |
|
|
|
|
|