উত্তরে বন্দি
স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে চা আর পাঁউরুটি খেয়ে কাটছে দিন
ক কাপ চায়ের দাম কুড়ি টাকা। চার টুকরো পাউরুটি পনেরো টাকা। সকালে জলখাবার থেকে নৈশভোজ, গত চার দিন ধরে সব সারতে হচ্ছে এই দিয়েই। পানীয় জলের বড় টানাটানি। দু’এক বোতল জল পাওয়া গেলেও তা কিনতে হচ্ছে চার গুণ দামে। আস্তে আস্তে টান পড়ছে পকেটেও। বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট হাতে। কিন্তু রাস্তায় তো হারিয়ে গিয়েছে। কবে রাস্তা ঠিক হবে, কবে আবার গাড়ি চলবে, জানে না কেউই। উত্তরাখণ্ডে চারধাম ভ্রমণে গিয়ে তাই বেজায় বিপাকে কুলটির দুই পর্যটক।
ইসিএলের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও নিরাপত্তাকর্মী দুলাল দাস থাকেন নিয়ামতপুরে সংস্থার আবাসনে। চারধাম বেড়ানোর জন্য শুক্রবার সকালে হরিদ্বার স্টেশনে তাঁরা যখন নামেন, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, কী অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফোনে জানালেন আতঙ্কের সেই কাহিনীই।
প্রদীপবাবুরা জানান, ট্রেন থেকে যখন নেমেছিলেন তখন আকাশ ছিল ঝলমলে। বিকেলে অল্পস্বল্প বৃষ্টি শুরু হয়। শনিবার সকালেও আবহাওয়া মেঘলা ছিল। কিন্তু তা বিশেষ পাত্তা না দিয়ে তাঁরা খারাডি রওনা হন।
কিন্তু কিছু দূর যেতে না যেতেই শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। বৃষ্টির তোড় দেখে ভয় পেয়ে যান গাড়ির চালকও। কোনও মতে খারাডি পৌঁছতেই আটকায় পুলিশ। জানানো হয়, বাণে রাস্তা ভেসে গিয়েছে। প্রশাসনের সতর্কবার্তা শুনে সামান্য অপেক্ষা করে পিছনের দিকে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা।
কিন্তু সে দিকেও বেশি দূর যেতে পারেননি তাঁরা। দুলালবাবুরা জানান, বরকোট পৌঁছে বুঝতে পারেন, আর কোথাও এগোনোর জো নেই। রাস্তা বোঝা যাচ্ছিল না। তখন থেকে বরকোটেই রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। চারদিকে পাহাড়। দু’চারটে চটি এলাকা, ছোট একটি বাজার, সেখানে গোটা কয়েক দোকান। এ ছাড়া আর কিছু নেই। একটি চটিতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। জল নেই, খাবার নেই, শোওয়ার জায়গা স্যাঁতস্যাঁতে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। দু’দিন বাড়ির সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি। শেষে মঙ্গলবার রাতে কথা হয়েছে।
দুলালবাবু ও প্রদীপবাবু ফোনে বলেন, “এখান থেকে দেরাদুন প্রায় দু’শো কিলোমিটার। প্রশাসন জানিয়েছে, মাঝে রাস্তা বলে কিছু নেই। সারিয়ে তুলতে দিন কয়েক সময় লাগবে। খাবার, জল কিছুই পাচ্ছি না। কী ভাবে এখান থেকে বেরোব জানি না।” জানালেন, তাঁরা যেখানে রয়েছেন সেখান থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে একটি আইটিআই স্কুলে শরণার্থীদের রেখে দু’বেলা খিচুড়ি খাওয়ানো হচ্ছে বলে জেনেছেন তাঁরা। কিন্তু দুর্গম রাস্তা ভেঙে তাঁদের পক্ষে অত দূরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বুধবার নিয়ামতপুরে গিয়ে দেখা গেল, প্রদীপবাবু ও দুলালবাবুর বাড়ির সামনে প্রতিবেশীর ভিড়। বাড়ির লোকজনের চোখ সব সময় টিভিতে। প্রদীপবাবুর স্ত্রী শিউলি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি বাঙালি পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে দিল্লি পাঠানো হয়েছে। আদৌও তাঁদের ফেরানো সম্ভব কি না বুঝতে পারছি না।” দুলাল দাসের ছেলে দিব্যেন্দু জানান, টিভিতে প্রথম বার বিপর্যয়ের খবর শোনার পর থেকেই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বাবার সঙ্গে কথা হওয়ার পরে উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। কিন্তু ভালয় ভালয় দু’জন ঘরে না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি নেই তাঁদের।

এই সংক্রান্ত অন্য খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.