সে বার ছিলেন এক জন। তাতেই বেশ নাজেহাল হতে হয়েছিল। এ বার আবার তিন জন। নাওয়া-খাওয়া, রাতের ঘুম উড়েছে পানাগড় রেলপাড়ের বাসিন্দা সঞ্জীব প্রসাদের।
গত বার তবু খানিক সুবিধা ছিল। তাঁদের দল তখন রাজ্যের ক্ষমতায় না থাকায় সাফল্য না এলেও উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু এ বার তাঁরাই শাসকপক্ষ। তাই ফলের দিকে শ্যেন দৃষ্টি থাকবে উচ্চ নেতৃত্বের।
গত পঞ্চায়েত ভোটে কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির ২০ নম্বর আসে ন তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন দলের ব্লক যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তরফে তাঁর হয়ে ভোটের কাজকর্মের প্রধান দায়িত্ব পেয়েছিলেন সঞ্জীববাবু। পল্লববাবু হারেন। এ বার পল্লববাবু তো বটেই, প্রার্থী হয়েছেন তাঁর স্ত্রী এবং ভাইও। সঞ্জীববাবু এ বারও পল্লববাবুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। কিন্তু কাজ করতে হচ্ছে তিন জনের হয়েই। বলছেন, “দায়িত্ব যখন পেয়েছি, ভাল ফল করে তো দেখাতেই হবে। |
স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে প্রচারে পল্লব মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র। |
দুর্গাপুর মহকুমা জুড়েই বেশ কিছু পরিবারের একাধিক সদস্য এ বার পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন। কাঁকসার পল্লববাবু নিজে লড়ছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। তাঁর স্ত্রী বৈশাখীদেবী জেলা পরিষদের প্রার্থী। পল্লববাবুর ভাই প্রসূন তৃণমূলের কাঁকসা অঞ্চল যুব সভাপতি। তিনি কাঁকসা পঞ্চায়েতের প্রার্থী। প্রচারে সাধারণত তাঁরা সবাই এক সঙ্গে বেরোচ্ছেন। পল্লববাবুর দাবি, প্রথম থেকে এই এলাকায় দলের সংগঠন গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তাঁদের পরিবারের। সিপিএমের হাতে ‘আক্রান্ত’ও হতে হয়েছে। দল তা মনে রেখেছে।
এক সময়ে দলের অভ্যন্তরে পল্লবাববুর বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন কাঁকসা ব্লক সভাপতি দেবদাস বক্সী। সম্প্রতি তিনি দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক হয়েছেন। তবে পারিবারিক প্রার্থীপদের বিচারে এ বার তিনি পল্লববাবুর থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। দেবদাসবাবু নিজে দাঁড়িয়েছেন জেলা পরিষদে। আর তাঁর স্ত্রী মৌসুমিদেবী প্রার্থী হয়েছেন কাঁকসা পঞ্চায়েতে। দেবদাসবাবু বলেন, “এই সব সংখ্যা বিচার করা পাগলামি। দল যাঁকে যেখানে যোগ্য মনে করেছে, তাঁকে সেখানে প্রার্থী করেছে।”
শুধু কাঁকসা বা পানাগড় নয়। একই ছবি দেখা গিয়েছে পাশের গলসি ১ ব্লকেও। বুদবুদ পঞ্চায়েতের একটি আসনে লড়ছেন তৃণমূল প্রার্থী প্রবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর স্ত্রী সীমাদেবী টিকিট পেয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। পাণ্ডবেশ্বরের ছোড়া গ্রামের উজ্জ্বল বাউড়ি দাঁড়িয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতে। তাঁর স্ত্রী রিনাদেবী লড়ছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। এতশত কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। সেখানে মাত্র কয়েকটি পরিবারের হাতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের অধিকাংশ টিকিট চলে যাওয়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে না? তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে কে কোন পরিবারের তা দেখা হয়নি। কে কেমন কর্মী, সংগঠক বা দলের পিছনে কতটা সময় দেন, শুধু তা মাথায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “যিনি টিকিট পাননি তাঁর হয়তো কষ্ট হতে পারে। কিন্তু সবাইকে তো আর টিকিট দেওয়া যায় না। যাঁরা দাঁড়িয়েছেন তাঁরা কোনও পরিবারের নন, দলের প্রার্থী। সেটাই সবার মনে রাখা উচিত।” |