এক বছর বন্ধ কেদারনাথ |
বৃষ্টি কমতেই সামনে এল ভয়াবহ ধ্বংস-চিত্র |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বাহাত্তর ঘণ্টা পরে বর্ষণ কিছুটা কমেছে। আর তার পরেই সামনে এসেছে চামোলি, শ্রীনগর, গৌরীকুণ্ড ও উত্তরকাশীর ভয়াবহ ধ্বংসের ছবিটা। আট ফুট গভীর কাদা-মাটি-পাথরের নীচে চাপা পড়েছে সড়ক, বাড়িঘর। যমুনা নদীর উৎস যমুনোত্রীর জনপদও হড়পা বানে কার্যত মুছে গিয়েছে। তার জেরে কূল ছাপিয়ে দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকা ভাসিয়েছে সারা বছরের ক্ষীণতণু যমুনা। আকাশ থেকে আজ উত্তরাখণ্ডের ধ্বংস দেখেন সনিয়া গাঁধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। উত্তরাখণ্ডের জন্য এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণ-সাহায্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক বছরের জন্য কেদারনাথের মন্দির বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা। নেপাল সীমান্তে ধারচুলার কাছে রাস্তা মুছে যাওয়ায় এ বছরের মতো মানস যাত্রাও স্থগিত করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
দুর্যোগের ৭২ ঘণ্টা পরে উঁকি দিচ্ছে একটাই প্রশ্ন। শুধু বর্ষা আগেভাগে আসাতেই কি উত্তরাখণ্ড আর হিমাচল জুড়ে এই বিপর্যয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত অরণ্য নিধন এবং পর্যটক টানতে নিয়ম ভেঙে একের পর এক বহুতল নির্মাণ ডেকে আনছে বিপদ। উত্তরাখণ্ডের ১৪টি নদী উপত্যকায় ২২০টিরও বেশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং খননের কাজ চলছে। খননের সময় বা সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তাতেই বেড়ে যাচ্ছে ধসের সম্ভাবনা। ২০১১-১২ সালে উত্তরকাশীতে যে বিপর্যয় ঘটেছিল, তার জন্য দায়ী ছিল অসিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ওই প্রকল্প এলাকায় বাঁধ তৈরির জন্য নিয়মিত বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছিল। আর সেই বিস্ফোরণে পাহাড় থেকে পাথরের টুকরো ভেঙে জমা হচ্ছিল নদীতে। সেগুলো পরিষ্কার না হওয়ায় নদীর জলস্তর বাড়তে থাকে। এর পর ভারী বৃষ্টি হলেও হড়পা বানের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বর্ষাকালে এমনটা ঘটতে থাকে প্রায়শই। নদীর গতিরোধ করেও বিপর্যয় বাড়ছে। পার্বত্য এলাকার স্বাভাবিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে মানুষ। প্রকৃতি যেন ফুঁসে উঠেছে তারই বিরুদ্ধে। |
|
নদীর গর্ভে রাস্তা। হৃষীকেশে বুধবার। ছবি: পিটিআই। |
এ দিন দুপুরে দেরাদুন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধী বিমানে দুর্গত এলাকা দেখেন। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণাকে বলেন, ত্রাণ ও উদ্ধারে কেন্দ্র সব রকম সাহায্য করবে। মনমোহন বলেন, “অবিশ্বাস্য বিপর্যয়। যেন পাহাড়ে সুনামি!” স্বজনহারাদের দু’লক্ষ ও গৃহহীনদের এক লক্ষ টাকা করে সাহায্যের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেদারনাথে আটক তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে বায়ুসেনার ২২টি হেলিকপ্টার। এখনও সেখানে আটকে রয়েছেন হাজার ১২ পুণ্যার্থী। উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচলপ্রদেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৮।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের উখীমঠ আশ্রমেরদায়িত্বে থাকা সুধীর মহারাজ জানিয়েছেন, কেদার ও গৌরীকুণ্ডের অতিথিনিবাস ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। সেখানকার মহারাজদেরও কোনও খবর নেই। কাল তিনি কপ্টারে কেদার যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কেদার থেকে কিছু মানুষকে উদ্ধার করে ফাটা-র হেলিপ্যাডে রাখা হয়েছে। কাল তাঁরা অন্য পথে হেঁটে উখীমঠের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। সিয়ালসোর ও কুণ্ডের মধ্যে সেতু ভেসে যাওয়ায় কেদারের প্রচলিত রাস্তাটি বন্ধ। বদ্রীনাথও বিচ্ছিন্ন। |
|
উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে। ছবি: এএফপি |
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা জানিয়েছেন, কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহ অক্ষত থাকলেও তার আশপাশে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত এক বছর লেগে যাবে। তাই আগামী এক বছর পুণ্যার্থীরা ওই মন্দিরে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বহুগুণা জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডে ৫০০ রাস্তা ও ১৭৫টি সেতু ভেঙে পড়েছে। রাজ্য জুড়ে আটকে রয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। গৌরীকুণ্ডে ৫ হাজার মানুষের খোঁজ নেই।
চামোলির অতিরিক্ত জেলাশাসক সঞ্জয় কুমার বলেছেন, আপাতত মৃতদেহ উদ্ধারের পরিবর্তে দুর্গতদের দ্রুত সাহায্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। পু-এ আটকে থাকা দূরদর্শনের দলটিকে উদ্ধার করতে পাঠানো হয়েছে চপার।
|
পুরনো খবর: লাগামছাড়া বৃষ্টি, বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড-হিমাচল
|
|