খাবার-জল নেই, আটকে বহু
কেদারে গিয়ে নিখোঁজ সস্ত্রীক কংগ্রেস নেতা
বিবার বিকেলে শেষ বার কেদারনাথ থেকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি ব্রজবাসী বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী মণিকা বিশ্বাস। আর তাঁদের খোঁজ নেই।
বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির নিখিলচন্দ্র সাহা ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যারানির। এক জনের বয়স একাত্তর, অন্য জনের একষট্টি। সঙ্গে রয়েছেন নিখিলবাবুর ভাইপো, কলকাতার বাসিন্দা বরুণকুমার সাহা ও তাঁর স্ত্রী বন্দনা।
বর্ধমানের কুলটি থেকে চার ধাম বেড়াতে যাওয়া ইসিএল কর্মী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও দুলাল দাস আটকে রয়েছেন দেরাদুন থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বরকোটে। চড়া দরে খাবার ও জল কিনতে গিয়ে তাঁদের পকেট ফাঁকা হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থেকে গৌরীকুণ্ডে হোটেলে রান্নার কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ১৬ জন। বদ্রীনাথে আটকে পড়া সোনামুখী ও কোতুলপুরের ২৭ জন পর্যটকের কাছেও উদ্ধারকারী দল পৌঁছয়নি।
রাজ্যের দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “উত্তরাখণ্ডে যাওয়া দুই মন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে ঠিক মতো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে এটুকু জেনেছি, সেনাবাহিনীকে উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে। উত্তরকাশীর জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, গঙ্গোত্রী এবং গোমুখ এখনও বিচ্ছিন্ন। বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে। কেদার-বদ্রী থেকে হৃষিকেশ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। মানুষ স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে রানিখেত হয়ে যে রাস্তা গিয়েছে, তা রাতের মধ্যে খুলে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।”
খাদের ধারে আটকে গাড়ি। উত্তরাখণ্ডের টিহরিতে। ছবি: পিটিআই।
গত ১১ জুন বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্র সরণির বাড়ি থেকে সস্ত্রীক রওনা দিয়েছিলেন ব্রজবাবু। তাঁর ছেলে পদ্মনাভ বলেন, “রবিবার বিকেলে যখন শেষ কথা হয়, বাবার বেশ জ্বর। ওঁরা কেদারনাথ মন্দিরের কাছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের একটি আশ্রমে ছিলেন। বাবা বলেছিলেন, আশ্রমের ভিতরে জল ঢুকতে থাকায় হয়তো কেদারনাথ মন্দিরে আশ্রয় নেবেন। তার পর থেকে আর ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কী হয়েছে বুঝতে পারছি না।”
বাঁকুড়ার এক মাত্র কংগ্রেস বিধায়ক, কোতুলপুরের সৌমিত্র খাঁ বলেন, “উত্তরাখণ্ড প্রশাসন এবং দল সূত্রে জেনেছি, কেদারনাথ মন্দিরেও জল ঢুকেছিল। জানি না, ওঁরা কী অবস্থায় রয়েছেন!” ব্রজবাবুর পুরনো সহযোগী, রাজ্যের শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও রচপাল সিং উত্তরাখণ্ডে গিয়েছেন। ওঁদের ব্রজবাবুর খোঁজ করতে বলেছি।”
গৌরীকুণ্ডের কাছে মুন্ডুকাটা গণেশ এলাকায় হোটেলে রান্নার কাজ করতে গিয়েছেন হিড়বাঁধের মশিয়াড়া গ্রামের ১৬ জন। তপন পরামানিক নামে তাঁদেরই এক জন এ দিন গ্রামে ফোন করে জানান, তাঁরা যে হোটেলে আছেন, তার একাংশ ভেঙে পড়েছে। পানীয় জলও ঠিক মতো মিলছে না। বিদ্যুৎ নেই ক’দিন ধরে। মজুত খাবার ফুরিয়ে আসছে। মশিয়াড়ার বাসিন্দারা ওঁদের উদ্ধারের আর্জি জানাতে গেলে মহকুমাশাসক (খাতড়া) শুভেন্দু বসু জানান, উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন।
শিলিগুড়ির নিখিলবাবুর মেয়ে, মালবাজারের স্কুলশিক্ষিকা নীতা সাহা বলেন, “রবিবার বিকেলে ওঁরা কেদার ঘুরে গৌরীকুণ্ডে পৌঁছে ফোন করেন। তারপর থেকে আর ফোনে পাচ্ছি না। খুব চিন্তায় রয়েছি।” বদ্রীনাথে আটকে পড়া ২৭ জন পর্যটকের অন্যতম, সোনামুখীর বিজন ঘোষাল ফোনে বলেন, “রোদ উঠলেও উদ্ধারকারী দলের খবর নেই। রসদ ফুরিয়ে এসেছে। কিন্তু দোকানপাট খোলেনি। বিদ্যুৎ আসেনি। খাবার জলও পাওয়া যাচ্ছে না। কী হবে জানি না।”
দমকল মন্ত্রী জানান, উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়া পর্যটকদের দেরাদুন থেকে কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য বিশেষ ট্রেন দিতে রেল বোর্ডের কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা আটকে পড়া পর্যটকদের দিল্লি থেকে কম খরচে কলকাতা উড়িয়ে আনার জন্য শুক্রবার থেকে অতিরিক্ত বিমান পরিষেবা শুরু করছে। যোগাযোগ রাখার জন্য দিল্লির বঙ্গভবনে রাজ্য সরকার কন্ট্রোল রুম খুলেছে।

(০১১) ২৩৭২ ১৯৯৬, (০১১) ২৩৭১ ০৩৬২। টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০১ ১৩৩৩০।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.