জঙ্গলমহলে ফের বন্ধ হতে পারে রাতের ট্রেন
বিহারের জামুইয়ে মাওবাদীরা যে ভাবে দিনেদুপুরে যাত্রীবোঝাই ট্রেনে হামলা চালিয়েছে, তাতে চিন্তিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উদ্বিগ্ন রেল কর্তারাও। জামুইয়ের মতো ঘটনা এড়াতে মাওবাদী প্রভাবিত জঙ্গলমহল দিয়ে চলা ট্রেনগুলির জন্য এ বার দিনের বেলাতেও নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতরের কর্তারা। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বিগ্ন রেল মন্ত্রক জঙ্গলমহল দিয়ে যাতায়াতকারী রাতের কয়েকটি ট্রেন কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, যে ট্রেনগুলি গভীর রাতে জঙ্গলমহল দিয়ে যায়, সেগুলির রুট বদলের কথা ভাবা হচ্ছে। শুক্রবার রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “যা অবস্থা, তাতে প্রয়োজনে জঙ্গলমহল এলাকায় কয়েকটি রাতের ট্রেন সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা এই ব্যাপারে আলোচনা করছি। আমরা সব সময়ে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিই।”
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকে তাড়া খেয়ে মাওবাদীদের একটি দল পশ্চিমবঙ্গের সীমানা বরাবর অবস্থান করছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তারা এ রাজ্যে বড়সড় নাশকতার চেষ্টায় রয়েছে, এমন গোয়েন্দা-তথ্য পাওয়ার পর আগামী কিছু দিন ঝুঁকি নিতে চাইছে না রেল। বিশেষত ২০১০ সালের মে-তে জঙ্গলমহলেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও অনেকের মনে টাটকা। মাওবাদী হামলার ওই ঘটনায় প্রায় ১৫০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে ২০১৩-র জানুয়ারি পর্যন্ত জঙ্গলমহলে রাতে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
ছত্তীসগঢ় ও বিহারে সাম্প্রতিক মাওবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে মোতায়েনের জন্য আরও ছয় কোম্পানি সিআরপিএফ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা এ দিন বলেন, “ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার অরক্ষিত সীমানা দিয়ে এ রাজ্যে মাওবাদীরা ঢুকে পড়ছে, এ কথা কেন্দ্রকে বহু বার জানানো হয়েছে। আমাদের আর্জি মেনে কেন্দ্র ছ’কোম্পানি সিআরপিএফ দিচ্ছে।” জঙ্গলমহলে এখন ৩৪ কোম্পানি সিআরপিএফ এবং ছয় কোম্পানি সশস্ত্র নাগাল্যান্ড পুলিশ রয়েছে।
কিন্তু তাতে রেল পথ নিয়ে উদ্বেগ কাটছে কই? এ রাজ্যের খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর-মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া, পুরুলিয়া-বলরামপুর-বিরামডি ও ঝাড়খণ্ডের পাকুড় ঘেঁষা বীরভূমের অংশ মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেলপথ হিসেবে পরিচিত। এই পথের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে গত বছর মে মাসে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এবং ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে ৭৫০ জনকে স্পেশাল পুলিশ অফিসার (এসপিও) হিসেবে নিয়োগ করেছিল রাজ্য পুলিশ। এই এসপিও-দের মাসে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে কেন্দ্র দেয় ২৪০০ টাকা ও রাজ্য ৬০০ টাকা। এসপিও-দের কাজ, মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় রাতের ট্রেন যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা। তাঁরা যাতে গোপনে খবর সংগ্রহ করতে পারেন, তা মাথায় রেখে নিয়োগের ব্যাপারটিও গোপন রাখা হয়েছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে বাঁকুড়া থেকে ১০০, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া জেলার প্রতিটি থেকে ২০০ জন এবং ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা থেকে নিয়োগ করা ২৫০ জন এসপিও হিসেবে কাজ করছেন।
রেলপথে কেউ নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা করছে কি না, সে ব্যাপারে গোপনে খবর নিয়ে পুলিশকর্তাদের জানানোই এসপিও-দের মূল কাজ। সেই সঙ্গে জঙ্গলমহলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ রেল পথ ও সংলগ্ন এলাকায় রাতে গোপনে নজরদারি চালানোর কাজও করেন তাঁরা। লাইনের কোথাও ফিশপ্লেট কিংবা দু’টি লাইনের জোড়ের জায়গার যন্ত্রাংশ খোলা আছে কি না, সিগন্যাল উল্টো করা আছে কি না, এমন নানাবিষয়ে রাতভর নজর রাখেন এসপিও-রা। রেল লাইনে সন্দেহজনক কিছু পড়ে থাকতে দেখলে কিংবা সন্দেহজনক ভাবে লোকজন জড়ো হতে দেখলে মোবাইল ফোনে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। রাত আটটা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় এসপিও-দের ডিউটি ভাগ করা আছে। কিন্তু এ বার ওই কাজ তাঁদের দিনের বেলাতেও করাতে হবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “এসপিও-দের জন্য জঙ্গলমহলে রাতে নিরাপদে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত আমরা সাফল্য পেয়েছি। জামুইয়ের ঘটনার পর এখন দিনেও তাঁদের ওই কাজ করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, দিনেও কাজ করানোর মতো অত সংখ্যক এসপিও আমাদের নেই। তা ছাড়া, রাতে যে ভাবে গোপনে কাজ করা যায়, দিনে সেটা করা কঠিন। তবুও চেষ্টা করা হবে গোপনীয়তা বজায় রেখেই নতুন করে এসপিও-দের কাজ ভাগ করে দেওয়ার।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য বলেন, “এসপিও-দের কাজ যেখানে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ করা, সেই জায়গায় দিনরাতের পার্থক্যটা কোনও সমস্যা নয়। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি।” তবে রেলের সাফ বক্তব্য, জামুইয়ের মতো ঘটনায় যেখানে ১০০-র বেশি মাওবাদী ট্রেনে হামলা চালিয়েছে, সেখানে ট্রেনে আরপিএফের সংখ্যা বাড়িয়েও তেমন কোনও লাভ নেই। রেলপথ সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা রাজ্যকেই নিশ্চিত করতে হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.