বাহিনী নিয়ে জটে বাড়তে পারে ভোট-দফা
ঞ্চায়েত ভোটে পর্যাপ্ত বাহিনী মেলার আশা দূর অস্ত্। তাই আদালতের হস্তক্ষেপে দফা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন, দু’পক্ষই।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে তিন দফায় ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে মনোনয়ন পর্বও শেষ, সেখানে এ ভাবে দফা বাড়ানো কি সম্ভব? কারণ, রাজ্য বা কমিশন, যে-ই দফা বাড়াতে যাক না কেন, তা হলেই পুরো প্রক্রিয়া প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। প্রশাসনে যাঁরা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া চলেছে, তাকে সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। আর এমন হলে ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাওয়ার আশঙ্কা। তা হলে কী ভাবে দফা বাড়ানো সম্ভব? প্রশাসন সূত্রেই বলা হচ্ছে, যদি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, তবেই এই বেনজির ঘটনা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, সে জন্যই তারা হাইকোর্টকে পুরো পরিস্থিতি জানাতে চায়। তবে তার আগে তারা জেনে নিতে চায়, রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে কী বলে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কী ভাবে ভোট করা সম্ভব, তা নিয়ে শুক্রবার আলাদা ভাবে কমিশন এবং রাজ্য প্রশাসন, দু’জায়গাতেই আলোচনা হয়। বৈঠক হয় দফায় দফায়। মহাকরণে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য শীর্ষকর্তাদের নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। আদালত যে ভাবে কমিশনকে ভোট পরিচালনার যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব দিয়েছে, তাতে সরকার কোনও ভাবে বেকায়দায় পড়তে পারে কি না, সে কথা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। চলতি পরিস্থিতিতে ভোট পিছিয়ে যেতে পারে কি না, সে নিয়েও কর্তাদের প্রশ্ন করেন তিনি।
মহাকরণের খবর, আইনি দিক পর্যালোচনা করে প্রশাসনিক কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, যদি পর্যাপ্ত বাহিনী না মেলে, তা হলে অন্তত পাঁচ দফায় পঞ্চায়েত ভোট করতে হবে। কারণ, রাজ্যের হাতে ৫০ হাজার সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনী দিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ মতো মোট ৫৮ হাজার বুথে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের কাছে নতুন করে বাহিনী চাওয়ার ব্যাপারে এখনও মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। এ দিকে, নতুন করে চিঠি না লিখলে দিল্লিও বাহিনী পাঠাতে নারাজ।” ওই কর্তা বলেন, “পঞ্জাব মৌখিক ভাবে কিছু পুলিশ দেবে বললেও মধ্যপ্রদেশ এবং ওড়িশা চিঠির কোনও জবাবই দেয়নি। ফলে, কমিশন যদি এখন ভোটের দু’দিন আগে থেকে বাহিনী মোতায়েনের বিস্তারিত হিসেব চায়, তা হলে কী জবাব দেওয়া হবে, জানি না।”
একই ভাবে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশনের সামনেও প্রধান বাধা সেই বাহিনী-সমস্যা। এ দিন আইনি পরামর্শের পরে কমিশনেরও মনে হয়েছে, একমাত্র দফা বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এই প্রশ্নে তারা নিজেরা কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। বরং ফের আদালতে যাবে। তবে তার আগে সরকারি ভাবে কমিশন জেনে যেতে চায় যে, প্রয়োজনীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্য কী বলে। সরকারি ভাবে রাজ্য যদি জানিয়ে দেয়, বাহিনী দেওয়া সম্ভব নয়, তা হলে সে কথা আদালতকে জানাবে তারা। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের কাছে বাহিনী মোতায়েন নিয়ে হিসেব চাইব। যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তার পরেই নেব।”
কমিশনের পরিকল্পনা, রাজ্য যে বাহিনী দিতে পারল না, সে কথা আদালতে বলে পঞ্চায়েত আইনের ১৩৭ ধারা প্রয়োগ করে পাঁচ দফায় ভোট করানোর অনুমতি চাইবে তারা। সাধারণ ভাবে আইন অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তি জারির ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ভোট হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি জারির পরে ভোট শুরু হতে কোনও কোনও দফায় (পাঁচ দফা হলে) ৪০-৪২ দিন লেগে যেতে পারে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে? কমিশনের ব্যাখ্যা, আদালতে যাওয়া হবে তিন দফা ভোটের মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পরে। সে ক্ষেত্রে ভোট প্রক্রিয়ার একটা বড় অংশ শেষ হয়ে থাকছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা কয়েক হাজার প্রার্থীকে জয়ীর শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি বাস্তবসম্মত নয়। তাই আদালতকে জানিয়েই কমিশন ভোটের দফা বাড়িয়ে দিতে চায়। প্রথম দফাকে ভেঙে তিনটি দফা করা হতে পারে। কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, বিহারে ১০ দফায় পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। সেই ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও নতুন করে নির্ঘণ্ট বদল হতে পারে। সবটাই হবে আদালতকে জানিয়ে, তাদের নির্দেশে। কমিশন মনে করছে, তা হলেই আরআগের প্রক্রিয়া বাতিল করার প্রয়োজন থাকবে না, নতুন করে আইনি জটিলতাও তৈরি হবে না। রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা পাঁচ দফা ভোটের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিলেও নিজেরা কখনওই তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন না। তবে রাজ্য চাইছে ভোট। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে বলেন, “আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, ভোট হবেই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.