চাপ বাড়াবে কংগ্রেস
বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে আর চিঠি দেবে না রাজ্য
ঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর কোনও প্রস্তাব পাঠাবে না রাজ্য সরকার। বাহিনী পাঠানো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মতপার্থক্যের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহাকরণ। এই অবস্থায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ বাড়ানোর জন্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
পঞ্চায়েত ভোটে ৩০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। গত সপ্তাহে কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অন্যান্য জায়গায় আগে থেকেই বাহিনী মোতায়েন থাকায় পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রাজ্যে বাহিনী পাঠানো সম্ভব হবে না। এর পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের মঙ্গলবারের মন্তব্য থেকেই যাবতীয় সংশয়ের সূত্রপাত।
মঙ্গলবার শিন্দে জানিয়েছিলেন, সোমবার তাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টেলিফোনে কথা হয়। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে অনুরোধ করেন মমতা। কেন্দ্রও বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শিন্দে জানিয়ে দেন, এ জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। শিন্দের কথার বিরোধিতা করে বুধবার মহাকরণের বক্তব্য ছিল, শিন্দের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তিনি কোনও বাহিনী চাননি। ছত্তীসগঢ়ে সাম্প্রতিক মাওবাদী হামলার প্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা সীমানা এলাকার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী চেয়েছিলেন। মহাকরণের দাবি, টেলিফোনে শিন্দে-মমতার ওই কথাবার্তার সময় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “ভোটে বাহিনী দিতে পারবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অবস্থায় তাদের অবস্থানের যদি কোনও পরিবর্তন হয়, তা হলে তাদেরই রাজ্যকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানাতে হবে। আমাদের যা বলার, তা ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।”
ঘটনা হল, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে রাজ্য চিঠি পাঠানোর পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ ব্যাপারে তাদের অপারগতার কথা জানিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই চিঠি পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতেও নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু এখন কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের চাপে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে রাজি হয়েছে বলে খবর।
কিন্তু মমতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নতুন করে আর চিঠি দেওয়া হবে না। এমতাবস্থায় সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ আজ বলেন, “এটা এখন জলের মতোই পরিষ্কার যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক তা গোড়া থেকেই চায়নি রাজ্য সরকার। শাসক দলের উদ্দেশ্য হল, রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে গায়ের জোরে একের পর এক পঞ্চায়েত দখল করা।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন নিজেই বলেছেন বাহিনী পাঠাবেন, তখন রাজ্য সরকার কেন গড়িমসি করছে? নিজের দুর্বলতা ঢাকতেই কব্জির জোরে আসন জিততে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে রাজ্য সরকার যদি কোনও অনুরোধ না পাঠায়, তা হলে বাহিনী পাঠাতে পারে না কেন্দ্র। তা ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আধাসামরিক বাহিনী পাঠালে রাজ্য সরকারকে তার খরচ বহন করতে হয়। ফলে বাহিনী নিয়ে চাপ বাড়াতে কংগ্রেসের কাছে এখন একমাত্র পথ হল, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়া। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে প্রচার চালিয়ে যাওয়া যে, তৃণমূল গায়ের জোরে পঞ্চায়েত দখলে মরিয়া।
তবে রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘না’ বলে দিলেও রাজ্য এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে সেটার সংখ্যা কত, তা জানে না রাজ্য। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রথম দিকে ৩০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ের ঘটনার পরে বাড়তি বাহিনী পাঠাতে হয়েছে সেই রাজ্যে। সুতরাং শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও তা সংখ্যায় খুব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি তাতে সন্তুষ্ট হবে? কমিশনের সচিব তাপস রায় এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ঠিক কত পরিমাণ নিরাপত্তা বাহিনী দিতে পারবে, আগামী ক’দিনের মধ্যেই আমরা সুনির্দিষ্ট ভাবে রাজ্যের কাছে তা জানতে চাইব।’’
বৃহস্পতিবারই তিনটি পর্যায়ে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন রাজ্য সরকারের সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী দিতে পারা না-পারার উপরেই ঝুলে রয়েছে ভোটগ্রহণ পর্ব। রাজ্য সরকারের কাছে নির্বাচন কমিশন ৯৫ হাজার ৩৯০ জন সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে ৪৮ হাজার ৪৬৬ জন লাঠিধারী নিরাপত্তাকর্মী চেয়েছে। এ দিন কমিশনের তরফে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম দফায় সশস্ত্র বাহিনীর জেলাওয়াড়ি চাহিদার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.