কমিশনই শেষ কথা, বলল ডিভিশন বেঞ্চও
ঞ্চায়েত মামলা নিয়ে হাইকোর্টে আবার ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার।
এ বারে প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চও জানিয়ে দিল, পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনই শেষ কথা। এর আগে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার তাঁর রায়ে নিরাপত্তা বাহিনী থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এক্তিয়ারের প্রশ্নে কমিশনকে এগিয়ে রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ যে রায় দিয়েছে তাতে বিচারপতি সমাদ্দারের রায়ই কার্যত মেনে নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৪৩কে ধারার উল্লেখ করে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনই। শুধু তাই নয়, গত ১৪ মে ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ জারি করেছিল, কমিশনের আপত্তি মেনে তারও সংশোধন করা হল এ দিন। সেই নির্দেশে ‘উভয়পক্ষের সম্মতি’ কথাটি প্রত্যাহার করতে এই বেঞ্চের কাছেই আবেদন করেছিল কমিশন। এ দিন সেই মামলার নিষ্পত্তি করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। কী ভাবে? ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন ১৪ মে-র নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেছে, উভয়পক্ষের সম্মতিতে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই এতে কোনও পক্ষ অসন্তুষ্ট হলে তারা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। প্রাথমিক ভাবে নির্বাচন কমিশন এ দিনের নির্দেশে খুশি। তাই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পথ খুললেও তারা সেই রাস্তায় হাঁটবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রশ্ন হল, রাজ্য কী করবে? এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ নিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাবে কি না, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। সুব্রতবাবু বলেন, “নির্বাচন হবে, হই হই করে হবে।” আইনমন্ত্রী বলেন, “রায়ের প্রতিলিপি এখনও দেখিনি। তবে যা শুনলাম, তা নতুন কিছু নয়। সংবিধানে যা বলা আছে তা নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে।”
এ দিনের নতুন নির্দেশের ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য বাহিনীর পরিমাণও ঠিক করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকারকে সেই বাহিনী জোগাড় করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু থাকার সময় জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে ডিজি পর্যন্ত প্রশাসনিক স্তরের সব অফিসার কমিশনের এক্তিয়ারে থেকে কাজ করবেন। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও সমস্যার সৃষ্টি হলে কমিশন প্রয়োজনে পঞ্চায়েত আইনের ১৩৭ ধারা প্রয়োগ করে ভোটের দফা বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারে। আবার সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ অথবা পুরো নির্বাচন ছ’মাসের জন্য স্থগিতও করে দিতে পারবে।
নির্দেশ তাদের পক্ষে গেলেও বাহিনী নিয়ে এখনও সংশয়ে কমিশন। প্রথম দফার ভোট করাতে কমিশনের দাবি ১ লক্ষ ১৮ হাজার সশস্ত্র পুলিশ। রাজ্য ৫৫ হাজারের বেশি জোগাড় করে উঠতে পারেনি। উপরন্তু তারা মনে করে, এই বাহিনী দিয়েই সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করানো সম্ভব। কমিশন সূত্রে এ দিন বলা হয়েছে, বাহিনী জোগাড় করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। এ বারে তারা রাজ্য সরকারের কাছে বাহিনীর তালিকা চেয়ে পাঠাবে।
কমিশন মনে করে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এবং প্রত্যাহার পর্বে পর্যাপ্ত বাহিনী না থাকার ফলেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল হয়েছে। প্রথম দফায় যে ৯টি জেলায় ভোট হবে, সেখানে ১৪.৫ শতাংশ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। এঁদের ৯৮ ভাগই শাসক দলের প্রার্থী। কমিশন মনে করে, মনোনয়ন পর্বে যথেষ্ট বাহিনী থাকলে (মূলত বিরোধী) প্রার্থীরা আরও বেশি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারতেন। তাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা প্রার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমতো। রাজ্যের গণতান্ত্রিক কাঠামোও আরও শক্ত হতো। পরবর্তী দুই দফায় মনোনয়নপত্র পরীক্ষার কাজ শেষ হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কত প্রার্থী জিতেছেন, তা পরিষ্কার হবে। ২০০৩ সালে ১১ শতাংশ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এটাই রেকর্ড।
১৪ মে-র নির্দেশ ‘উভয়পক্ষের সম্মতি’ শব্দবন্ধ নিয়েও কমিশনের আপত্তি ছিল। বুধবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের মধ্যে তর্ক হয়। ওই নির্দেশের কোনও কোনও অংশে তাঁদের সম্মতি থাকলেও গোটা নির্দেশটি কমিশনের সম্মতিতে হয়েছে বলে মানতে চাননি সমরাদিত্যবাবু। তিনি জানিয়ে দেন, প্রধান বিচারপতি যখন নির্দেশ দিচ্ছিলেন, তখন ‘উভয়পক্ষের সম্মতি’ কথাটি তিনি শোনেননি। প্রধান বিচারপতি অবশ্য সমরাদিত্যবাবুর সেই দাবি বুধবার মানতে চাননি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের এই বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ নতুন নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশে কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। বলা হয়, কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কমিশনই শেষ কথা বলবে। সংবিধান নির্দেশিত পথে আইন অনুযায়ী কমিশনই নির্বাচন পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং যে কোনও ধরনের নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী। ১৪ মে-র নির্দেশে এই বিষয়টির উল্লেখ ছিল না। এ দিন সংশোধিত নির্দেশে তা যুক্ত করা হয়। কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল, এ দিনের নির্দেশে তা কেটে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
নির্দেশে আরও বলা হয়, ভোটারদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি, এলাকায় ভয়হীন পরিবেশ তৈরি করা, প্রচারের সময় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, প্রার্থীদের নিরাপত্তা, গণনার সময়ে শান্তি বজায় রাখা এই সব কাজ করার জন্য কমিশন যত বাহিনী চাইবে, তা-ও দিতে হবে রাজ্যকে। এই নির্দেশের ফলে আগের নির্দেশ নিয়ে কমিশনের আপত্তির জায়গাগুলি মূল্যহীন হয়ে গেল। নির্দেশ নিয়ে নতুন করে যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে বা সমস্যা দেখা না দেয়, সে জন্য রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় ও সমরাদিত্য পালকে বিকেল ৪টে ১৫ নাগাদ প্রধান বিচারপতি তাঁর চেম্বারে ডেকে পাঠান। সেখানে দু’জনকেই লিখিত নির্দেশ দেখান তিনি। সমরাদিত্যবাবু বলেন, “বিচারপতি সমাদ্দারের রায়কেই সমর্থন করা হল এ দিনের নির্দেশে। সংবিধানে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাকেই স্বীকার করে নেওয়া হল। ফলে এই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রইল না। সন্দেহের অবকাশ রইল না বাহিনীর পরিমাণ স্থির করা নিয়েও।”
রাজ্য পর্যাপ্ত বাহিনী দিতে না পারলে কী হবে? সমরাদিত্যবাবু বলেন, “কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হবে।” কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “রাজ্য ঠিক কত বাহিনী দিতে পারবে, আগামী ক’দিনের মধ্যেই জানতে চাইব। রাজ্যের জবাব আসার পরেই আমাদের পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।” রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “কত বাহিনী দেব, কমিশন জানতে চাইলেই আমরা জানাব।” কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য রাজ্য যে আর আবেদন করবে না, তা পরিষ্কার। বাহিনীর ঘটাতি যে থাকবেই, তা নিয়ে দ্বিমত নেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদেরও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.