কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই গ্রামের বাড়িতে বা স্কুলে ঢুকে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই সেখানে ভিড় জমে যায়।
স্কুলবাড়ি কিংবা রাস্তার ধারের চায়ের দোকান সুরক্ষিত কিনা, তা পরীক্ষা না করিয়েই মুখ্যমন্ত্রী ঢুকে যান সেখানে। বসে যান মিড ডে মিল কিংবা চা খেতে।
রাস্তার পাশে ভিড়-করে থাকা জনতা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কিছু দিতে চাইলে তিনি নিজেই তা গ্রহণ করেন, প্রাথমিক কোনও সুরক্ষার পরীক্ষা ছাড়াই।
ভিড়ের মধ্যে থেকে অপরিচিত মানুষকে ডেকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন। এলাকাটা কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে মাথা ঘামান না।
এই চারটি বিষয়ই লক্ষ করেছে মাওবাদীদের ‘স্পেশ্যাল অ্যাকশন টিম।’ যাকে এখন ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এ পরিণত করছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, মাওবাদী লিঙ্কম্যানেরা মমতার গতিবিধি সম্পর্কে সংগঠনের নেতাদের অবহিত করেছেন। তার ভিত্তিতেই এই চারটি পর্যবেক্ষণ তৈরি করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, মুখ্যমন্ত্রীর এই অভ্যাসগুলি তাঁকে ‘সফট টার্গেট’ করে তুলেছে। ভিড়ে মিশে গিয়ে মাওবাদীরা সহজেই তাঁকে নিশানা করতে পারে। |
বুধবার মন্ত্রকের তরফে রাজ্য সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিহারে ট্রেনে মাওবাদীরা হামলা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। মহাকরণ সূত্রের খবর, মাওবাদীদের হামলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের টেলিফোনে কথা হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহ থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের জন্য প্রথম দফার ন’টি জেলায় যাবেন মমতা। এই সফরে জঙ্গলমহলের কয়েকটি জেলাও রয়েছে। তার ঠিক আগে এল কেন্দ্রের এই সতর্কবার্তা। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা শুক্রবার বৈঠকের পর আশ্বাস দেন, মুখ্যমন্ত্রীর সুরক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, যুব তৃণমূল সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী এবং জঙ্গলমহলের বেশ কয়েক জন দলীয় নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের মাওবাদীরা ‘টার্গেট’ করেছে বলে ওই সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে। তার কারণও ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বলেছেন, কিষেণজির হত্যার প্রতিশোধের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হত্যা করতে চায় মাওবাদীরা। জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের নিকেশ করার কৌশল তৈরির জন্য মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করা হতে পারে বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। এ ছাড়াও জঙ্গলমহলের কিছু মন্ত্রী ও নেতার নাম রয়েছে মাওবাদীদের তালিকায়।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডের অনুন্নত এলাকা থেকে নতুন সদস্য আনা হয়েছে সুইসাইড স্কোয়াড তৈরি করতে। এরা খুব সহজেই নিজেদের জীবন দিয়ে ‘টার্গেট’কে উড়িয়ে দিতে পারবে। তাতে সংগঠনের খুব ক্ষতি হবে না। অথচ কাজও হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার ঝুমরা পাহাড় এলাকায় ওই তরুণ স্কোয়াড সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকা মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির অন্তর্ভুক্ত। মাওবাদীদের পলিটব্যুরোর তরফে প্রশিক্ষণ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইস্টার্ন রিজিওনাল কমান্ডার দেবকুমার সিংহ ওরফে অরবিন্দজি এবং স্কোয়াড লিডার প্রমোদ মাঝি ওরফে সমীর পালকে।
|