তদন্ত শেষ হলে সব বলবেন বলে জানিয়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। আর তদন্তের মধ্যেই গোয়েন্দাদের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এবং সিকিওরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)-র কয়েক জন অফিসারকে হাত করে তিনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে জেরায় স্বীকার করে নিয়েছেন সারদা-প্রধান। তাঁর এই স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারীরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দ্রুত সারদার বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা এবং সব নিয়মবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তছরুপ চালিয়ে যাওয়াটা কী ভাবে সম্ভব হল, তদন্তকারীদের কাছেও সেটা একটা রহস্য। প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রী-সাংসদের সঙ্গে ওঠাবসার কথা আগেই বলেছিলেন সুদীপ্ত। এ বার তিনি আরবিআই এবং সেবি-র ঘরে সিঁধ কাটার কথা কবুল করায় ব্যাপারটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দারা জানান, জেরায় সুদীপ্ত বলেছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন এক মধ্যস্থতাকারী। সেই মধ্যস্থতাকারী এক জন ব্যবসায়ী। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই কর্তা সংস্থার ‘নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্স’ বিভাগটি দেখতেন। সুদীপ্ত জেরায় জানান, নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালানোর জন্য ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে তিনি নিয়মিত টাকা দিতেন। গোয়েন্দারা জানান, ২০১১ সালের শেষে ওই ম্যানেজার চাকরি থেকে অবসর নেন।
জেরায় সুদীপ্ত জানিয়েছেন, তিনি অনেককে মাসোহারা দিতেন। সারদার মাসোহারা পাওয়া ১০ জনের তালিকা তৈরি করে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এক সময় তিনি বহু লোককে মাসোহারা দিলেও এখন তাঁর পরিবার আর্থিক সমস্যায় পড়েছে বলে জানান সুদীপ্ত। তিনি বলেছেন, তাঁর সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আটকে দেওয়ায় পরিবারের লোকজন টাকা তুলতে পারছেন না।
এ দিন এসএফআইও বা সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিসের দুই কর্তাও গোয়েন্দাদের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা করেন। গোয়েন্দারা কী কী নথি জোগাড় করতে পেরেছেন, তা নিয়েই আলোচনা হয়। তদন্তকারীরা জানান, সুদীপ্ত গা-ঢাকা দেওয়ার পরেও সারদার এজেন্টরা বাজার থেকে সমানে টাকা তুলে গিয়েছেন। ওই সময় গড়ে দৈনিক এক থেকে দেড় কোটি টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকারও হদিস পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তাঁদের সন্দেহ, ওই টাকা এজেন্টরাই সরিয়ে ফেলেছেন। সেই এজেন্টদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা এ দিন সুদীপ্তকে জেরা করে জেনেছেন, রিসর্ট তৈরির জন্য ২০১১ সালে ২০ কোটি টাকা দিয়ে শিমলায় ১০০ বিঘা জমি কেনেন তিনি। ওই জমির নথি জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দারা জানান, এত দিন ওই জমির কথা চেপে রেখেছিলেন সারদা-প্রধান। গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ধরনের আরও অনেক সম্পত্তির কথা এখনও তাঁদের জানাননি সুদীপ্ত।
সারদা কাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার হওয়া সংস্থা-কর্মী মনোজ নাগেলকে এ দিন বিধাননগর আদালতে তোলা হয়। সারদার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে টাকা তোলার দায়িত্বে ছিলেন নাগেল। তিনি এত দিন জেল-হাজতেই ছিলেন। তাঁকে ফের ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতেই পাঠানো হয়।
|