সব বলব, তদন্ত শেষ হতে দিন, বললেন সুদীপ্ত
গায়ে সাদা ধবধবে হাফ হাতা পাঞ্জাবি-পাজামা, গালে কাঁচাপাকা দাড়ি। চকচকে স্যুট-টাই পরা চেনা ছবিটার চেয়ে অনেকটাই অন্য রকম। সিঁড়ি দিয়ে তাঁকে নামতে দেখেই ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্ন ধেয়ে এল।
একটু থমকে গেলেন সুদীপ্ত সেন। বললেন, “বলব, বলব। অবশ্যই বলব..।”
কথাটা শেষ করা হল না। হাত ধরে টেনে পুলিশ সুদীপ্তকে নিয়ে গেল গাড়ির দিকে। পুলিশ ভ্যানের মধ্যে থেকেই সারদা-কর্তা ফের বলে উঠলেন, “একটু অপেক্ষা করুন, তদন্ত শেষ হলে সব বলব।”
ধরা পড়ার পরে এই প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুললেন সুদীপ্ত সেন। তার কিছু ক্ষণ আগেই আদালত ফের ৯ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে সুদীপ্ত, দেবযানী এবং অরবিন্দ সিংহ চৌহানকে। এত দিন পুলিশি জেরায় নানা কথা উঠে এলেও সুদীপ্তর কোনও বয়ান সরাসরি পায়নি সংবাদমাধ্যম। এ দিনও গোড়ায় সংবাদমাধ্যমকে আদালতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল পুলিশ। বিচারকের অনুমতি ছাড়া পুলিশ কেন সংবাদমাধ্যমকে আটকাচ্ছে, জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। পুলিশ তখন কিছুটা পিছু হটে। কিন্তু সুদীপ্তকে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে আগলানোর চেষ্টা স্বাভাবিক ভাবেই চালিয়ে গিয়েছে তারা।
কিন্তু তদন্ত শেষে কী বলতে চান সুদীপ্ত সেন? বিধাননগর আদালতে জড়ো হওয়া আইনজীবী আর সাংবাদিকদের মধ্যে বৃহস্পতিবার এই নিয়েই চলল দিনভর জল্পনা। কোন নেতা-কর্মীদের জন্য ডুবল তাঁর সংস্থা, সেটা বলবেন? নাকি কলকাতা ছেড়ে পালানোর সময়ে সিবিআই-কে যা লিখেছিলেন, তার ব্যাখ্যা দেবেন?
সুদীপ্ত সেন এখন। আদালত থেকে রাজারহাট
থানায় আনার পর। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৌভিক দে।
পুলিশেরই একটি সূত্র জানিয়েছেন, রাজ্যের বাইরে গা-ঢাকা দেওয়ার সময়ে সুদীপ্ত শাসক দলের দুই নেতাকে ফোন করেছিলেন। সেই ‘কল ডিটেলস’ এ বার খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। পালানোর আগে কোন কোন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সারদা কর্তার বৈঠক হয়েছিল, তা-ও বিশদ জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশের একটি মহলের অনুমান, সুদীপ্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই নেতাদের নাম বলতে চেয়ে থাকতে পারেন।
এ দিন সুদীপ্তরা আদালতের লক আপে প্রায় ছ’ঘণ্টা বসে থাকার পরে মামলাটি ওঠে। এজলাসের লক-আপে ঢুকেই পিছন ফিরে বসে পড়েন সারদা-কর্তা। বেলা দেড়টা নাগাদ সওয়াল-জবাব শুরু হলে তিনি সামনের দিকে ঘুরে বসেন। তবে কী সওয়াল-জবাব চলছে, শোনার জন্য আলাদা করে তেমন উৎকর্ণ থাকতে দেখা যায়নি তাঁকে। তারই মধ্যে অন্য মামলার এক অভিযুক্ত এজলাসের লক-আপে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেখে রীতিমতো হাঁকডাক জুড়ে দেন সুদীপ্তই। ‘‘জল দিন, জল দিন, এ বার কি মরে গেলে জল দেবেন!’’ বলে চেঁচামেচি শুরু করেন তিনি। অরবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে লক-আপের ভিতরে শুইয়ে দেন ওই অসুস্থকে। তার পর নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়েন।
সারদা সংস্থায় সুদীপ্তর ছায়াসঙ্গী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও এ দিন বেশ হাল্কা মেজাজেই ছিলেন। বাদামি সালোয়ার কামিজ, সাদা ওড়না গায়ে ‘ম্যাডাম’-কে পাশে দাঁড়ানো মহিলা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে হেসে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে। গল্প করার ফাঁকে এক-দু’বার ‘সেন সাহেবের’ দিকে আড়চোখে দেখেছেন তিনি। পাল্টা তাকিয়েছেন ‘স্যার’-ও। তার পরেই অরবিন্দের কানে ফিসফিস করে কী যেন বলেছেন সুদীপ্তবাবু।
এ দিন শুনানি চলাকালীন হঠাৎ চন্দ্রশেখর বাগ নামে এক ব্যক্তি এজলাসে হাজির হন। তিনি নিজেকে হাইকোর্টের আইনজীবী ও সুদীপ্ত সেনের পরিচিত হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁকে দেখে উঠে দাঁড়ান সুদীপ্তবাবুও।
নিউ টাউন থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেবযানীকে। —নিজস্ব চিত্র
ওই ব্যক্তি বিচারকের কাছে গিয়ে বলেন, “আমি সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে কথা বলতে চাই।” কিন্তু বিচারক সেই আর্জি মঞ্জুর করেননি। তা দেখে মিটিমিটি হেসে ফের লকআপে বসে পড়েন সারদা কর্তা। সুদীপ্তর আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা এ দিন অন্য একটি সংস্থার বিরুদ্ধে সারদা গোষ্ঠীর সফটওয়্যার জালিয়াতির অভিযোগ আদালতকে জানান। আদালত তার শুনানি ২৩ মে পর্যন্ত মুলতুবি রেখেছে।
এ দিন সুদীপ্তর দু’টি মামলার শুনানি হয়। চ্যানেলের কর্মীদের বেতন না দেওয়া সংক্রান্ত মামলাটিতে সুদীপ্ত, দেবযানী ও অরবিন্দের জেল হেফাজত হয়েছে। তবে কনৌজ মণ্ডল নামে এক আমানতকারীর দায়ের করা সারদা ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে মামলায় তিন জনকে ৯ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
রায় শোনার পরে কিছু ক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন সারদা-কর্তা। তার পর এজলাসের লকআপ থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন। তখনই আচমকা উড়ে এল প্রশ্ন, “কাকে কাকে টাকা দিয়েছেন? কত টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে খবরের চ্যানেল?”
ঘুরে তাকিয়ে মুখ খুলতে গেলেন সুদীপ্ত। “বলব, বলব..।”
এর বেশি আর বলা হল না।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.