জবাবেরও প্রস্তুতি
সরকার পাল্টা জড়াল গৌতমের পরিবারকে
তিনি নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীকে। এ বার শাসক পক্ষের পাল্টা নিশানায় তিনি। সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারকে জড়িয়ে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। শাসক পক্ষও পাল্টা অভিযোগে টেনে আনল তাঁর পরিবারকে।
তৃণমূল বনাম গৌতম দেব লড়াইয়ের মাত্রা চড়ল আরও!
প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের আত্মীয়ের বিরুদ্ধে সরকারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনলেন রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। সাংবাদিক সম্মেলন করে শুক্রবার এর পাশাপাশিই মন্ত্রীর অভিযোগ, গৌতমবাবুর ভাই হাসনাবাদে একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নানা রকম অনুদান এবং ব্যাঙ্ক থেকে ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। সেই কারখানা এক মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উজ্জ্বলবাবুর এমন অভিযোগের জবাবে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গৌতমবাবুও।
এরই মধ্যে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে এ দিনই ফৌজদারি মানহানির মামলা দায়ের করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যবসায়িক সংস্থা নিয়ে সম্প্রতি গৌতমবাবু যে মন্তব্য করেছেন, তাতে অভিষেকের সম্মানহানি হয়েছে বলে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ। প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই অভিষেক তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির হয়ে মামলা দায়ের করেন। গৌতমবাবু এ দিন অবশ্য মামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অভিষেকের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার জানান, গৌতমবাবু জনসভা ও সংবাদমাধ্যমে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেছেন। এই সব অসত্য, কুৎসায় অভিষেকের সম্মানহানি হয়েছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ দিন মামলাটি বিচারের জন্য গ্রহণ করেছেন বলেও রাজদীপ জানান। আগামী ১৭ মে এ ব্যাপারে সমন জারি হওয়ার কথা।
আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবেও আক্রমণ করা হয়েছে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে। মন্ত্রী উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, ২০০৫-এ কারিগরি শিক্ষা সংক্রান্ত বিশ্বব্যাঙ্কের একটি প্রকল্পের ভার টেন্ডার ছাড়াই গৌতমবাবুর ভগ্নীপতি কুন্দেন্দুকুমার সেনগুপ্তের সংস্থাকে দেওয়া হয়। তখন কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী। প্রকল্পটির ফাইল উধাও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্য, “কুন্দেন্দুবাবু ১০ লক্ষ টাকা দফতরের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। সেই টাকারও হদিশ নেই!” ওই ঘটনার তদন্তের জন্য দুই সদস্যের কমিটি গড়েছে কারিগরি শিক্ষা দফতর।
উজ্জ্বলবাবু জানান, ২০০৫-এ পলিটেকনিক এবং আইটিআইয়ের পঠনপাঠনের জন্য কম্পিউটার ভিত্তিক কিছু পাঠ্যবিষয় (ই-কনটেন্ট) তৈরির জন্য একটি প্রকল্প চালু করে কারিগরি শিক্ষা দফতর। তাই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে সাড়ে ৯ কোটি টাকা অনুদানও মঞ্জুর হয়। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “ওই প্রকল্পের ফাইল নেই। কারিগরি সংসদের সঙ্গে কুন্দেন্দুবাবুর যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়, তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না।” তদন্ত কমিটি এ সব বিষয় দেখে রিপোর্ট দেবে বলে মন্ত্রী জানান।
গৌতমবাবু এ দিন দিনভর ব্যস্ত ছিলেন দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠকে। উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। দলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক বলেছেন, “আগে ওই নামে এক জন ভগ্নীপতি খুঁজে বার করি! তার পরে তো জবাব দেব!”
সারদা-কাণ্ডের পরে গৌতমবাবু যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন, তার পাল্টা হিসাবে উজ্জ্বলবাবু এ দিন গৌতমবাবু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদেরই ‘কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেছেন। মন্ত্রীর কথায়, “সিপিএম বলে দিচ্ছে সারদার ২২ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। ওরা এ সব জানে। কারণ সিপিএম গোটাটার সঙ্গে যুক্ত! কমরেডরা সব টাকা ভাগ করে নিয়েছে! তাই কখনওই সারদা টাকা ফেরত দিতে পারবে না।”
গৌতমবাবুর ভাই প্রদীপ দেবের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন উজ্জ্বলবাবু। তিনি জানান, ২০০৬-এ হাসনাবাদে একটি কারখানার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। কারখানার অন্যতম কর্তা ছিলেন প্রদীপবাবু। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নানা রকম অনুদান ও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে সেই কারখানা চালু হলেও মাসখানেকের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ উজ্জ্বলবাবুর। তাঁর বক্তব্য, “সেই টাকা কোথায় গেল? কারখানারই বা কী হল? খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছি।” সিপিএম সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, গৌতমবাবুর দাদা, বৌদি বা ভাইপোরা সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। সরকারি অনুদান নিয়ে কিছু করতে যাওয়ার প্রয়োজন তাঁদের নেই।

পুরনো খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.