সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিপূরণের দাবি অসীমের
পরাধীদের কড়া শাস্তি এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবি ছিলই। এ বার তার সঙ্গেই সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের নতুন দাবি পেশ করলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। দলের ছাত্র, যুব ও মহিলা গণসংগঠনের প্রতি সিপিএমের রাজ্য কমিটির এই বর্ষীয়ান সদস্যের পরামর্শ, সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে শাসক দলের ওতপ্রোত যোগাযোগের কাহিনির পাশাপাশিই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক পুনর্গঠনের দাবি নিয়ে রাজ্যের সর্বত্র প্রচার শুরু হোক।
সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে শুক্রবার ভারত সভা হলে বামফ্রন্টের ১৬টি ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের কনভেনশনে প্রধান বক্তা ছিলেন অসীমবাবু। সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরেই রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তাঁর তোলা কয়েকটি প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশিই ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের লক্ষ্যে নতুন দাবি এ দিনের মঞ্চ থেকে তুলেছেন অসীমবাবু। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, সারদা গোষ্ঠী এবং তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত সব ধরনের ব্যক্তি (যে দলেরই হোক না কেন) বা সংস্থার সম্পত্তি আটক করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া উচিত। এর জন্য জনতার উপরে কর চাপিয়ে তহবিল করা নীতিগত ভাবে ঠিক নয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলতে চলতেই প্রতারিত মানুষজনের ক্ষতিপূরণের দিকটাও মাথায় রাখা দরকার। সেই লক্ষ্যেই অসীমবাবুর দাবি, রাজ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা সহজ সুদে ঋণ দেওয়া হোক ক্ষতিগ্রস্তদের। আর কর্মচ্যুত এজেন্টদের কাজে লাগানো হোক স্বনির্ভর প্রকল্পে।

ভারত সভা হলে অসীম দাশগুপ্ত। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাবে এ রাজ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৪ লক্ষ কোটি টাকা জমা আছে। সেই হিসাব ধরেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে সহজ সুদে ১ লক্ষ কোটি টাকা সারদা-র প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষকে ঋণ বাবদ দিক। সেই টাকা নিজেদের ছোট ছোট জীবিকার কাজে লাগিয়ে মানুষ ঋণ শোধ করবেন। অসীমবাবুদের যুক্তি, ঋণ পেলে তা শোধ করার জন্য ওই টাকা নিজেদের উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে কাজে লাগানোর তাগিদ থাকবে সর্বস্বান্ত মানুষের। এরই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অসীমবাবুর আর্জি, সারদা গোষ্ঠীর যে সব সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ফের চালু করার নামে তা যেন আবার কোনও অর্থলগ্নি সংস্থারই হাতে না যায়, সেই দিকে নজর রাখা হোক। অসীমবাবুর কথায়, “এই কাজগুলো করতে পারলে আর্থিক পুনর্গঠনের দিকে কিছুটা যাওয়া যাবে। রাজ্যে কিছুটা উৎপাদন বাড়বে, খানিকটা কর্মসংস্থানও হবে।”
বস্তুত, সিপিএম মনে করছে, স্রেফ সারদা-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি চেয়ে ময়দানে নামার চেয়ে ‘গঠনমূলক’ কিছু প্রস্তাব সঙ্গে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মনের কাছাকাছি পৌঁছতে সুবিধা হবে। অসীমবাবু এ দিন বলেওছেন, “প্রতি ব্লকে, প্রতি ওয়ার্ডে যেতে হবে। ভিন্ন রাজনীতিতে যাঁরা বিশ্বাস করেন, এই বিপদে তাঁদেরও কাছে টেনে নিতে হবে।”
তবে সারদা-কাণ্ডে শাসক পক্ষের রাজনৈতিক মোকাবিলাও করতে হচ্ছে সিপিএমকে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক গণেশ দে-কে বিধাননগর পুলিশ ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই ব্যাপারে এ দিন অসীমবাবু বলেছেন, “আমি জানি না, কী জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে স্পষ্ট ভাবে জানাতে চাই, রাজ্য সরকারে যখন কাজ করেছি, সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল এ সব ক্ষেত্রে কোনও নথি বা ফাইল কোনও আপ্ত-সহায়ক দেখবেন না। এই সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত রাজ্য অর্থ দফতর, গোয়েন্দা বিভাগ, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ যৌথ ভাবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে কেউ আমাকে প্রভাবান্বিত করতে পারেনি, পারবে না!” একই সঙ্গে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর সংযোজন, “তা সত্ত্বেও এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি বিচ্যুতি ঘটিয়ে থাকেন, তা হলে অর্থ বা সম্পত্তি আটকের শাস্তি তাঁর উপরেও প্রয়োগকরতে হবে। কোনও দ্বিধা নেই। কিন্তু সেই প্রয়োগে যেন নিরপেক্ষতা থাকে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন কাজ না করা হয়!”
আদালতের নজরদারিতে সিবিআই এবং সেবি-কে নিয়ে তদন্তের কথাই বলেছেন অসীমবাবু। বর্ধমানে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন ফের একই দাবি করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, বামেরা আগে অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়নি কেন? অসীমবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ২০০২-’০৩ সালে বেশ কিছু প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পরে রাজ্যের অর্থ দফতরের অধীনে আর্থিক অপরাধ অনুসন্ধান শাখা (ইকনমিক অফেন্স উইং) খোলা হয়। নারায়ণ ঘোষের মতো বেশ কয়েক জন দক্ষ পুলিশ অফিসারদের সেখানে নিয়োগ করা হয়। এই নতুন শাখা রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের সাহায্যে ১৭টি লগ্নি সংস্থার কর্ণধারদের গ্রেফতার করে এবং প্রায় আড়াই হাজার আমানতকারী অর্থ ফেরত পান। কিন্তু এখন সেই শাখাকে প্রায় অকেজো করে রাখা হয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার চাইলে এই শাখাকেই শক্তিশালী করে বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলিকে লাগাম দিতে পারত বলে মনে করছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.