|
|
|
|
আমার পরিবার নেই: মমতা |
আইনি নোটিসের পরেও তোপ জারি গৌতম দেবের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সারদা-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তোপ দাগা অব্যাহত রাখলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা তৃণমূল ‘যুবা’র সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে প্রকাশ্য জনসভায় অভিযোগ করায় তাঁর বিরুদ্ধে উকিলের নোটিস দিয়েছে শাসক দল। আইনজীবী মারফত সেই চিঠির জবাব দিয়েও বৃহস্পতিবার ফের ওই বিষয়ে সরব হয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতমবাবু। আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠক করে এ বার তাঁর অভিযোগ, অভিষেক তাঁর সংস্থা সম্পর্কে ওয়েবসাইটে ‘অসত্য তথ্য’ দিয়েছেন। প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীর দাবি, যে হেতু সংস্থার দুই অংশীদারের ঠিকানা হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মুখ্যমন্ত্রী-নিবাস, তাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য গৌতমবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই অর্থলগ্নি সংস্থার টাকায় তৃণমূলের কাজকর্ম চলছে বলে লাগাতার সরব গৌতমবাবু। তাঁর সাম্প্রতিক অভিযোগের পরে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা কড়া ভাষায় পাল্টা আক্রমণ করেছেন। আইনি নোটিসও দেওয়া হয়েছে। সরাসরি গৌতমবাবুর অভিযোগের জবাব না-দিলেও এ দিন শ্যামবাজারে দলীয় সভা থেকে পাল্টা বার্তা দিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীও। মমতা বলেছেন, “আমার কোনও পরিবার নেই। আমি একা। আমার নামের সঙ্গে কাউকে জড়াবেন না!” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমার উপরে বিশ্বাস রাখুন, আস্থা রাখুন, ভরসা রাখুন। দলের কেউ অন্যায় করলে বা বাড়ির কেউ অন্যায় করলেও আমি ছাড়ি না! বারবার বলা হচ্ছে, আমি চোর! আমার পরিবার চোর! দল চোর! এই কুৎসার কাসুন্দি মানুষ আপনাদের বুঝিয়ে দেবে!” |
 |
আলিমুদ্দিনের সাংবাধিক বৈঠকে। —নিজস্ব চিত্র |
বিরোধীদের দাবি, আক্রমণ একেবারে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েছে দেখে কৌশলে নিজেকে সব কিছুর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখাতে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী যে চাপে পড়েছেন, শ্যামবাজারে এ দিন তাঁর বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার! পরিবারের দিকে আঙুল উঠছে দেখে পরিবারেই কেউ নেই বলে দাবি করেছেন!” ঘটনাচক্রে, যাঁকে নিয়ে গৌতমবাবুদের অভিযোগ, তৃণমূল ‘যুবা’র সভাপতি সেই অভিষেককে এ দিন শ্যামবাজারে তৃণমূলের মঞ্চে দেখা গিয়েছে।
এ দিন গৌতমবাবু অভিযোগ করেন, অভিষেকের সংস্থা কোম্পানি হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। কিন্তু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংস্থাটি জানাচ্ছে, ২০০৯ সাল থেকে নথিভুক্ত সংস্থা হিসাবে ব্যবসা করছে তারা। অসত্য তথ্য দেওয়ার জন্য কেন কোম্পানি আইনে এই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “অভিষেকের সংস্থার বিভিন্ন ব্যবসার মধ্যে মাইক্রো-ফিনান্স ছাড়াও বিমা, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, নির্মাণকার্য, পানীয় জল ও দিল্লির কাছে প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। কিন্তু সেবি, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোথাও এই সব সংস্থা নথিভুক্ত করা হয়নি।”
তৃণমূলের তরফে গৌতমবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে অভিষেক যৌথ অংশীদারিত্বে ব্যবসা করার জন্য কলকাতা পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স নেন। সেই ব্যবসাকেই ২০১২ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে নথিভুক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে ‘মিথ্যা’ কোথায়? সেই সঙ্গেই তৃণমূল বলেছে, অভিষেকের মাইক্রো-ফিনান্সের ব্যবসা এখনও প্রস্তাব আকারে রয়েছে। ওয়েবসাইটেই তা বলা রয়েছে। তাই গৌতমবাবুর অভিযোগ ধোপে টেঁকে না। তৃণমূলের দাবি, গৌতমবাবুকে দেওয়া অভিষেকের আইনজীবীর চিঠিতেই যাবতীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। অভিষেকের সংস্থার ব্যালান্স শিট, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন থেকেও স্পষ্ট, এই সব কুৎসা ভিত্তিহীন। তৃণমূলের একটি অংশের বক্তব্য, পানিহাটির সভায় গৌতমবাবু বলেছিলেন, অভিষেকের সংস্থা ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে। গৌতমবাবুকে তা প্রমাণ করতে হবে। তৃণমূলের মতে, গৌতমবাবু বুঝতে পেরেছেন পানিহাটিতে তিনি যা বলেছেন, তা ভিত্তিহীন। তাই অন্য অভিযোগ এনে প্রসঙ্গ ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। |
 |
শ্যামবাজারের জনসভায়। —নিজস্ব চিত্র |
গৌতমবাবুরা যখন লগ্নি সংস্থা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে বিঁধতে ব্যস্ত, তখন সারদা-কাণ্ডের ছায়া পড়েছে সিপিএমের অন্দরেও। গৌতমবাবুর আমলে হিডকো দফতরে জনসংযোগ আধিকারিক হিসাবে কর্মরত অঞ্জন ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের আপ্ত-সহায়ক গণেশ দে-কে বুধবার ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। পুলিশের দাবি, তৎকালীন শাসক দলের বদান্যতা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি সুদীপ্ত সেনের সংস্থার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছিলেন বলে গণেশবাবু এক প্রকার কবুল করেছেন। অঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। এই সূত্রে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক বলেন, “বলা হচ্ছে,
অঞ্জন আমার আপ্ত-সহায়ক ছিলেন। কোনও দিনই উনি আমার আপ্ত-সহায়ক ছিলেন না। আমার আপ্ত-সহায়ক ছিলেন রাজীব বিশ্বাস। যদি দেখা যায়, আমার আপ্ত সহায়ক সারদার সঙ্গে যুক্ত, তা হলে আমি
পার্টি ছেড়ে দেব!”
গৌতমবাবু এ দিন আরও বলেন, “মমতা যে কাজকর্ম করছেন, যে ভাবে আমাদের পিছনে পুলিশ লাগিয়েছেন, তা সবই করছেন সিবিআই তদন্ত ঠেকাতে। কিন্তু পারবেন না! সিবিআই আসবেই। দেখবে কে মমতা, কে গৌতম দেব, কে অসীম দাশগুপ্ত! কার কী কাজ!” তৃণমূল শিবির মনে করছে, সারদা-কাণ্ডে গণেশবাবু এবং অঞ্জনবাবুকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেই এ দিন আলিমুদ্দিন থেকে মমতাকে পাল্টা আক্রমণের পথে গিয়েছেন গৌতমবাবু। সাংবাদিক বৈঠকের সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী। |
|
|
 |
|
|