|
|
|
|
জেলায় জেলায় ধরপাকড় |
এমপিএসের অফিস সিল করার আর্জি জানাল পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সারদা-কাণ্ডের জেরে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পুলিশি ফাঁস ক্রমেই শক্ত হচ্ছে। কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় লগ্নি সংস্থার অফিস সিল করা হচ্ছে, কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। সারদা-সহ বিভিন্ন সংস্থার কর্তা-কর্মীদের ধরপাকড়ও অব্যাহত। ওই সব সংস্থা কী ভাবে বাজার থেকে টাকা তোলে, কত টাকা ইতিমধ্যেই বাজার থেকে তুলেছে, কত জন আমানতকারী বা এজেন্টএ সব তথ্য জানতেই এই পুলিশি তৎপরতা।
এই অভিযানেরই অঙ্গ হিসাবে অর্থলগ্নি সংস্থা ‘এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেড’-এর কলকাতার কর্পোরেট অফিসে বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশ কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ এ দিন বলেন, “ওই সংস্থার অফিস ১ মে (বুধবার) থেকে বন্ধ। অফিসের দরজায় তালা। পুলিশ ওই তালা লাগায়নি। তবে, অফিস থেকে কেউ কোনও নথি বা কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক যাতে না সরাতে পারে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস সিল করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে পুলিশ অফিস সিল করে দেবে।” ‘এমপিএস’ কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না এ দিন বলেন, “আদালতের নির্দেশেই ব্যবসা চালাচ্ছি। সেবি-র ‘প্রভিশনাল রেজিস্ট্রেশন’ও রয়েছে আমাদের। পুলিশ যদি আমাদের অফিস সিল করার জন্য আদালতে আবেদন জানায়, তা হলে আমরা পাল্টা আদালতে যাব।” তাঁর দাবি, তাঁদের সংস্থা লোক ঠকানোর কারবার করে না। আমানতের মেয়াদ ফুরোলে প্রত্যেক আমানতকারীকে তাঁর প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া হয়।
কলকাতার ৩২ নম্বর জওহরলাল নেহরু রোডে ‘ওম টাওয়ার’-এ ছ’টি অফিস রয়েছে ওই লগ্নি সংস্থার। লালবাজার সূত্রের খবর, সংস্থার ছ’টি অফিসই বন্ধ। তালা খুলে যাতে কেউ অফিসগুলিতে না ঢোকে, তা নিশ্চিত করতে পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওই অফিসগুলির বিভিন্ন কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে রাখা আছে আমানতকারী, এজেন্ট সম্পর্কিত সব তথ্য। কোথায় কোন প্রকল্পে কত টাকা লগ্নি হয়েছে, তারও হিসেব রয়েছে অফিসে। সেই সব তথ্য পাচার ঠেকাতেই অফিসগুলিতে ঢোকা ও বেরোনোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।” মঙ্গলবার রাতে অন্য একটি অর্থলগ্নি সংস্থার বেহালা ও এন্টালির অফিসও বন্ধ করে পুলিশ।
বহু গ্রাহককে প্রতারণার অভিযোগে বুধবার রাতে কোচবিহারের সুভাষপল্লি এলাকা থেকে ‘তোর্সা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’ নামে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস ম্যানেজার দেবাশিস দাসকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অফিসটিও ‘সিল’ করেছে পুলিশ। সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর অরুণ মাঝি বলেন, “অফিস সিলের খবর পেয়েছি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” বালুরঘাটের যুবশ্রী মোড় এলাকায় সারদা গোষ্ঠীর জেলা অফিসের যাবতীয় নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। মিলেছে নগদ ১৭,৫৩২ টাকা এবং ছবির অ্যালবাম। ২২ এপ্রিল অফিসটি ‘সিল’ করা হয়। পুলিশ সারদার একটি অ্যাম্বুল্যান্সও বাজেয়াপ্ত করেছে। জলপাইগুড়িতেও সারদার অফিস ‘সিল’ করা হয়।
এ দিন সকালে ঘাটাল থানার পুলিশ সারদার এক কর্মী ও এজেন্টকে ধরে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সংস্থার দু’টি গাড়ি। গাড়ির কাগজপত্র পুলিশ পায়নি। বুধবার রাতে ‘প্রয়াগ’ গোষ্ঠীর এমডি বাসুদেব বাগচি, তাঁর ছেলে অভীক, স্ত্রী শম্পা ও ভাই গোবিন্দ-সহ একাধিক কর্তার নামে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন চন্দ্রকোনা রোডের মেটাডহরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান খান। তাঁর স্ত্রী ওই সংস্থার চন্দ্রকোনা রোড শাখায় টাকা রেখেছিলেন।
বুধবার সকালে আরামবাগের বাসুদেবপুর মোড়ে ‘সোনালি অ্যাগ্রো ইনড্রাস্ট্রিজ’-এর অফিসের তালা ভেঙে কম্পিউটার ও কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় সংস্থার মালিক শ্যামসুন্দর দাস কর্মকার ও এক কর্মীকে। আমানকারীদের অভিযোগে ঝাড়গ্রামে এটিএম গোষ্ঠীর অফিস থেকে চার কর্মীকে পুলিশ ধরেছে। |
|
|
|
|
|