ধর্মঘটের জেরে উৎপাদন না-হওয়ায় এক দিনে অন্তত ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন কোচবিহারের চকচকা শিল্প তালুকের ব্যবসায়ীরা। কোচবিহার ইন্ড্রাস্টিয়াল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, চকচকার ওই শিল্পকেন্দ্র চত্বরে সার, পাটজাত সামগ্রী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্লাস্টিক পাইপ, ইস্পাতের আসবাব ছাড়াও আটা চাল ও সর্ষের তেলের মিল মিলিয়ে ৪০টির বেশি কারখানা রয়েছে। সব মিলিয়ে ওই সব কারখানায় দৈনিক ২ কোটি টাকার সামগ্রী উৎপাদন হয়। বুধবার ধর্মঘটের জেরে বেশির ভাগ কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি কম থাকায় ওই উৎপাদন মার খেয়েছে। কিছু কারখানা অন্যদিনের মত খোলা ছিল। সেখানে উপস্থিতির হার অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। বেশ কিছু কারখানা আবার শ্রমিকের অভাবে পণ্য উৎপাদন করতে পারেনি।
চকচকা শিল্পকেন্দ্রে সুব্রতবাবুর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও স্টিল ফার্ণিচার তৈরির দুটি কারখানা রয়েছে। শ্রমিকদের গরহাজিরার জেরে এদিন তাঁর কোনও কারখানায় কাজ হয়নি। ওই শিল্পকেন্দ্র চত্বরে থাকা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সুকুমার সাহার সরষের তেল উপাদনের কারখানাতেও কাজ বন্ধ ছিল। সুকুমারবাবু বলেন, “আমার কারখানায় স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে ৪০ জন কর্মী। কেউই আসেননি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কারখানা চালানো যায়নি। কী ভাবে ওই ক্ষতি পূরণ করা যাবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।”
তবে বিপরীত ছবিও ছিল। চকচকার পাটজাত সামগ্রী উপাদনের কারখানাগুলি চালু ছিল। একটিতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি মহিলা শ্রমিকদেরও উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ওই কারখানার কর্তা কিঙ্কর পাল বলেন, “৩ দফায় আমাদের কারখানায় নিয়মিত কাজ হয়। উপস্থিতির হার সামান্য কিছু কম ছিল।”
চকচকা শিল্পকেন্দ্র সূত্রেই জানা গিয়েছে, ধর্মঘটের সমর্থনে কোচবিহারের ওই শিল্পকেন্দ্রে পিকেটিং হয়নি। আবার ধর্মঘটের বিরোধিতায় প্রকাশ্যে সরব হননি ধর্মঘট বিরোধীরাও। গোলমাল কিংবা উত্তেজনার কোন ঘটনাও নেই। শিল্প কারখানাগুলির বেশির ভাগের গেটও খোলা হয়। বেলা বাড়ার পরে অবশ্য দেখা যায়, তার মধ্যে বহু কারখানায় শ্রমিকরা যাননি। ফলে দুপুরের আগেই সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলির কর্তারা হাল ছেড়ে দেন।
চকচকা শিল্পকেন্দ্রের মধ্যে একটি পাটজাত সামগ্রী উৎপাদন কারখানার আইএনটিটিইউসি ইউনিটের সহকারী সম্পাদক দেওয়ান যাদব বলেন, “বড় কারখানাগুলিতে গড়ে ষাট শতাংশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কাজও হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য মালিক পক্ষের উদাসীনতার কারণে কারখানায় কাজ হয়নি।” আইএনটিটিইউসির কোচবিহার জেলা সম্পাদক প্রাণেশ ধর এ দিন দাবি করেন, চকচকার সমস্ত কারখানা চালু ছিল। তাঁর দাবি, “স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।” যদিও সিটুর কোচবিহার জেলা সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত অবশ্য ধর্মঘটে চকচকা শিল্পকেন্দ্রের শ্রমিকরা ভাল সাড়া দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “কোনও পিকেটিং হয়নি। কিন্তু, শ্রমিকরা স্বতঃস্ফর্ত সাড়া দিয়েছেন।” |