তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাঁর দম প্রায় বের হওয়ার জোগাড়। হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া প্রায় বন্ধ হয়ে কিডনি ও মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলেছে। নেই জ্ঞান। তড়িঘড়ি হাজি মকবুল আলির জন্য পেসমেকার প্রয়োজন। কিন্তু রোগীর বয়স জিজ্ঞাসা করে চিকিৎসকরা খানিকটা থতমত খেয়ে ভাবতে বসেন। নলবাড়ির হোজাই গ্রামের বাসিন্দা হাজি মকবুল আলির বয়স ১১০! এই বয়সে, পেসমেকার বসাবার ধাক্কা কী সামলাতে পারবেন তিনি!
“জীবনে কত বার আর শতায়ু রোগীর চিকিৎসা করার সুযোগ আসে?” বলছিলেন গুয়াহাটির জিএনআরসি
|
১১০ বছরের হাজি
মকবুল আলি |
হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর জে পি শর্মা। তিনি বলেন, “মকবুল আলির বয়স জানার পরে আমরা প্রথমে তাঁর বুকে সাময়িক পেসমেকার বসাবার সিদ্ধান্ত নিই।
তাঁর উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা ছিল। মস্তিষ্ক ও কিডনির অবস্থাও ভাল ছিল না।
সাময়িক পেসমেকার তাঁর অবস্থা খানিকটা স্থিতিশীল করে। এরপরেই আমরা সাহস করে পাকাপাকি পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।” হাসপাতালের হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা মকবুল আলির চিকিৎসা বিষয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসেন। ঠিকা করা হয়, সে দিনই পেসমেকার বসানো হবে। শর্মা জানান, সফল ভাবেই মকবুল আলির বুকে যন্ত্র বসানো হয়েছে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা উড়িয়ে, আশাতীত দ্রুততায় সুস্থ হয়ে উঠছেন আলি সাহেব।
মকবুল আলির ৬৫ বছরের ছেলে আবদুল হামিদ বলেন, “বাবা সারাজীবন নিয়ম মেনে জীবন কাটিয়েছেন। ১০০ বছর পার করার আগে কখনও তিনি সে ভাবে অসুস্থ হননি। শতায়ু হওয়ার পরে তাঁর ব্রঙ্কাইটিস হয়। তারপর থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু। তবে কখনও কাজ করা বন্ধ করেননি।” ডাক্তাররাও বলছেন, এই বয়সে আলির শরীরের জোর ও প্রতিরোধ ক্ষমতা অবিশ্বাস্য রকমের বেশি।
মকবুল আলির চিকিৎসায় পেসমেকার, হাসপাতালের খরচ, ওষুধ-পথ্য মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ট্যাঁকের জোর তেমন ছিল না। তবু ধার করে, অন্যের সহায়তা নিয়ে বাবাকে ভাল করতে পেরে বেজায় খুশি পরিবারের মানুষজন। তাঁর ছেলের কথায়, “মনের জোরে এই বয়সেও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে জিতে ফিরলেন বাবা। আশা করি, যন্ত্রের হৃদয়কে যত্নে রেখে আরও অনেকদিন তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন।” |