বিধায়ক তহবিল থেকে কেনা অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে রয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির বাইরে। তার উপর শুকোতে দেওয়া হচ্ছে জামা-কাপড়। আর রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন গাড়ি ভাড়া করে। গত দেড় বছর ধরে মানবাজারের চেপুয়া গ্রামে ভালুবাসা পঞ্চায়েতের প্রধান নরেন কালিন্দীর বাড়ির সামনে এ ভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে।
মানবাজারেরই বড়সাগেন গ্রামে চাঁদড়া পায়রাচালি পঞ্চায়েতের প্রধান জয়দেব সিং-র বাড়ি। তাঁর খামারে গোবর গাদার পাশে কয়েক মাস ধরে পড়ে রয়েছে বিধায়ক তহবিলে পাওয়া অন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সগুলির সদগতি হয়নি। এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “রোগীদের কাজে না লাগিয়ে এ ভাবে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি ফেলে রেখে ওই দুই পঞ্চায়েত প্রধান ঠিক কাজ করছেন না। অ্যাম্বুল্যান্সগুলি নিয়ে কী করা যায় ভেবে দেখা হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, মানবাজারের তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক সাম্যপ্যারি মাহাতোর বিধায়ক তহবিল থেকে সিপিএম পরিচালিত ওই দুই পঞ্চায়েতকে অ্যাম্বুল্যান্স কেনার জন্য ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬০৩ টাকা করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২০ জুন ওই দুই পঞ্চায়েতের তহবিলে সেই টাকা জমা পড়ে। মাস তিনেকের মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্স কিনে ফেলেন ভালুবাসা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। গাড়ির উপর লাল কালিতে লেখা হয় বিধায়কের নাম। |
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাড়া আর দেওয়া হয়নি। সেই অ্যাম্বুল্যান্স এখন পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির সামনে ফেলে রাখা হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, ওই অ্যাম্বুল্যান্স আদৌ ভাড়া দেওয়া হবে কি না, জানি না। লোকেরা তো ওই গাড়ির উপর কাপড় শুকোতেও দেন। ভালুবাসার বাসিন্দা প্রবোধ মাহাতো, সমীর মাহাতোরা বলেন, “বিধায়ক দেওয়ার পরেও আমরা ওই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে পারছি না। উল্টে মোটা টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে।”
ভালুবাসার পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, “গাড়ি নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এ জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। শর্ত ছিল, গাড়ির চালকের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ হাজার টাকা একাকলীন জমা এবং মাসিক ২৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। কিন্তু টেন্ডারে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। এখন কী করা যায়, তা নিয়ে বিডিও-র সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।” যদিও মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেছেন, “ভালুবাসার পঞ্চায়েত প্রধান কী করবেন আমি জানি না। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার কথাও হয়নি।”
চাঁদড়া পায়রাচালির পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, “পঞ্চায়েত অফিসের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সটি রাখা নিরাপদ নয় ভেবেই আমার বাড়ির কাছে রেখে দিয়েছি। আমরা ঠিক করেছি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নয়, সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের হাতেই ওই গাড়ি তুলে দেব। এ নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গেও কয়েকবার কথা হয়েছে।” পায়রাচালির বাসিন্দা দেবাশিস মুখোপাধ্যায় তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিধায়ক এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সগুলি দিয়েছেন। অথচ, প্রধান কেন ফেলে রেখেছেন বোঝা যাচ্ছে না।” মানবাজারের বিডিও বলেন, “চাঁদড়া পায়রাচালি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অ্যাম্বুল্যান্সটি তাঁরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে দেবেন। তাতে এলাকার মানুষের কাজে লাগবে।”
মানবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ সিং হাঁসদা বলেছেন, “অ্যাম্বুল্যান্সগুলি নিয়ে অনেকবার প্রধানদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি জানিয়েছে, সে ক্ষেত্রে ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকার রোগীদের বহন করায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁরা এখনও অ্যাম্বুল্যান্স কেন দিচ্ছেন না বুঝতে পারছি না।” দলের দুই প্রধানের বিরুদ্ধে অবশ্য প্রাক্তন বিধায়িকা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। তাঁর জবাব, “ওঁরা কেন ফেলে রেখেছেন, তা ওঁদের কাছেই জানতে চান।” |