ধর্মঘটের দিন হাত গুটিয়ে বসে না-থেকে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের স্টেশন, বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পথে নামলেন ট্যুর অপারেটররা। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এনজেপি স্টেশন, বাগডোগরা বিমানবন্দরে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের ‘আশ্বাস’ পেয়ে বাড়তি সাহস নিয়েই গাড়ি জোগাড় করে পর্যটকদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন ওঁরা। সম্রাট সান্যালের মতো ট্যুর অপারেটরদের কথায়, “এটা যে কোনও বনধ, ধর্মঘটেই করতে হবে। না হলে আগামী দিনে পাহাড়-সমতলের পর্যটন ব্যবসা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। বহু ছেলেমেয়ের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা পথে নেমেছি।” তবে ট্যুর অপারেটরদের আক্ষেপ, পর্যটন মরসুমে যে ভাবে সরকারি ভাবে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়, ধর্মঘট-বনধ-এর সময়ে তা হয় না। তা হলে অন্তত পর্যটকেরা নিরাপদ বোধ করতেন। দুর্ভোগও কমত। |
এনজেপি স্টেশন থেকে সিকিম যাওয়ার প্রস্তুতি।—নিজস্ব চিত্র। |
দুর্ভোগ অবশ্য এদিনও গোড়াতে অনেকে পর্যটকের হয়েছে। সাত সকালে দার্জিলিং মেলে শিলিগুড়িতে নামেন স্পেনের তিন নাগরিক। তাঁদের মধ্যে এস নোয়ে বলেন, “প্রথমে মিরিক যাওয়ার কথা ছিল। গাড়ি পাইনি। কেউ সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছিলেন না। গ্যাংটকের একটি গাড়ি পাওয়ায় সিকিম যাচ্ছি।” একই অভিজ্ঞতা হয় দিল্লির বাসিন্দা প্রতীক প্রসাদ, অজয় শর্মাদের। প্রতীকবাবু বলেন, “মিলনপল্লি যেতে রিকশা ২০০ টাকা চাইছে। কেউ দেখার নেই।” অজয়বাবুর কথায়, “জংশন অবধি যেতে অটো ১৫০ টাকা চাইছে। বাধ্য হয়ে যেতে হবে মনে হচ্ছে।” পালদেন লেপচাকে গ্যাংটক যেতে ছোট গাড়ির একটি আসনের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।
পরিস্থিতির আঁচ করে পর্যটন ব্যবসায়ীরা নিজেদের মত করেই সকাল থেকে কাজ করে গিয়েছেন। সম্রাটবাবুরা যেমন মঙ্গলবার বিমানবন্দরের কাছে হোটেলে পর্যটকদের রাখার ব্যবস্থা করেন। শহরের আর এক পর্যটন ব্যবসায়ী দীপক গুপ্তা বলেন, “আমাদের পর্যটকদের সিকিম, দার্জিলিং পাহাড় ঘুরিয়ে সকালেই নামিয়ে আনি। আগে থেকে শহরে রাখলে সমস্যা হতে পারত। এ রকম চললে তো গরমের মরশুমে দেশের অন্য প্রান্ত থেকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ব।”
পর্যটন ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, কেরলে সরকারপক্ষের শ্রমিক সংগঠন ধমর্ঘটে থাকলেও খোদ মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চ্যান্ডি উদ্যোগী হয়ে কয়েকদিন আগেই বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। পর্যটকদের গাড়িতে সরকারি স্টিকার, হেলপ ডেক্স, পুলিশ পাহারায় পর্যটকদের নির্দিষ্ট এলাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতটা না হলেও এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এদিন ভোর ৬টা নাগাদ বিমানবন্দর শুধু খুলে রেঁস্তোরাও চালু করে দেন। এতে পর্যটকেরা অনেকটাই বাড়তি সুবিধা পান।
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সাধন রায় বলেন, “গতকালই আমরা পুলিশ কমিশনার সাহায্যের আশ্বাস ছাড়াও একটি টেলিফোন নম্বরও দেন। সেখান থেকে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জাতীয় সড়কের খোঁজখবর নেন। বাকিটা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কাজ করেছি।” সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর সুনীল অগ্রবালও। তিনি বলেন, “এনজেপি-র স্থায়ী হেল্প ডেস্ক ছিল। তবে সম্প্রতি রেল তা স্টেশনের ১-এ প্ল্যাটফর্মের পিছনের দিকে সরিয়ে দিয়েছে। এতে পর্যটকেরা তা খুঁজেই পান না।” আর পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেছেন, “পর্যটকদের সাহায্য করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। কন্ট্রোল রুম ছাড়া ১০০ নম্বরেও পর্যটকেরা টেলিফোন করতে পারেন।” |