নারায়ণগড়ে সিপিএম অফিস ভাঙচুর
বাস নেই, বন্ধ দোকান ছুটির মেজাজেই শহর
বাম-ডান মিলিয়ে মোট ১১টি ট্রেড ইউনিয়ের ডাকে দেশ জুড়ে দু’দিন ব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। এ দিন জঙ্গলমহল বাদে পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্যত্র ধর্মঘটের প্রভাব পড়ে। বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ ছিল। বাসও চলেছে হাতে গোনা। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম। তবে জেলার সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। মেদিনীপুর কালেক্টরেটে এ দিন কর্মীদের হাজিরা ছিল প্রায় ৯৬ শতাংশ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনি বলেন, “আগে থেকে যাঁরা ছুটি নিয়েছিলেন, তাঁরাই কেবল এ দিন আসেননি। ধর্মঘটের কারণে কোনও কর্মী অনুপস্থিত ছিলেন এমন নয়।”জেলা পুলিশ সুনীল চৌধুরী বলেন, “কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
বিভিন্ন এলাকাতেই এ দিন বাম কর্মী-সমর্থকেরা ধর্মঘটের পক্ষে মিছিল করেন। বিপক্ষে পথে নামেন তৃণমূল-কর্মী সমর্থকেরাও। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, বন্ধ রুখতে দলের কেউ রাস্তায় নামবে না। যা করার প্রশাসন করবে। তারপরেও এ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের মিছিল বেরোয়। কিন্তু কেন? তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের ব্যাখ্যা, “প্রশাসন তো তার কাজ করবেই। তবে মানুষকে ভরসা দিতে আমরা মিছিল করেছি।”
ধর্মঘট অবশ্য পুরোপুরি নির্বিঘ্ন ছিল না। গোলমাল বাধে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বিধানসভা এলাকা নারায়ণগড়ে। অভিযোগ, সকালে মিছিল করে এসে তৃণমূলের লোকজন সিপিএমের নারায়ণগড় লোকাল কমিটির কার্যালয়ে হামলা চালায়। লোকাল কমিটির সদস্য মুকুল ভুঁইয়া সহ পাঁচ জন কর্মী-সমর্থককে মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় চেয়ার, টেবিল ও মোটর সাইকেল। সিপিএমের বেলদা জোনাল কমিটির সম্পাদক ভাস্কর দত্তের বক্তব্য, “এলাকায় সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করতে এই হামলা।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, “আমাদের এক কর্মীকে সিপিএমের লোকেরা খুন করেছে। অপরাধ ঢাকতেই এমন প্রচার।” মুড়াবনির দলীয় কর্মী উপেন খাটুয়ার মৃত্যুতে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে এ দিন নারায়ণগড় ও বেলদায় মিছিল করে তৃণমূল।
ঘাটালে বাস মালিকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দুপুরে তৃণমূলের মোটর বাইক বাহিনী ঘাটাল বাসস্ট্যান্ডে হাজির হয়। দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলি চালানোর জন্য মালিকদের ধমক দেওয়া হয়। তখন বাস ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে উপস্থিত ছিলেন সমিতির জেলা-সহ সম্পাদক প্রভাত পান ও বাস মালিক সঞ্জীব দে। বাস না চালানোয় তাঁদের উপর চড়াও হন তৃণমূল কর্মীরা। মারধরও করা হয়। প্রভাতবাবু বলেন, “পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে আমরাও বাস চালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মীরা না এলে কী ভাবে বাস চলবে। কিন্তু ওরা কোনও কথা না শুনেই আমাদের মারধর করল।” বন্ধের সমর্থনে প্রচার চালানোয় এসইউসি নেতা জগবন্ধু মাঝিকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আক্রমণকারীরা বনধ-বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক। কয়েকটি বাসের ক্ষতি করে ওরা। ওদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন আমাদের সংগঠনের সহ-সভাপতি মোহন বাগও। আমরা বুধবার পরিবহণমন্ত্রীর কাছে এর প্রতিবাদ করব।” যদিও ঘাটালের তৃণমূল নেতা অরুণ মণ্ডলের বক্তব্য, “কোথাও মারধরের ঘটনা ঘটেনি। আমরা শুধু বেরিয়েছিলাম মানুষকে ভরসা জাগাতে।”
সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও জেলা জুড়েই এ দিন বাস চলেছে খুবই কম। সকালের দিকে কয়েকটি বাস চললেও দুপুরের পর বাস চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এক বাস মালিকের কথায়, “বন্ধের ঘোষণা হলেই সাধারণ মানুষ বাইরে বেরোতে চান না। একপক্ষ সমর্থন ও অন্যপক্ষ বিরোধিতা করলে আবার গণ্ডগোলের আশঙ্কাও থাকে। স্বাভাবিক কারনেই মানুষ বাইরে বেরোন না। যাত্রী না থাকলে বাস চালিয়ে তো ক্ষতি। এমনিতেই দীর্ঘদিন কম ভাড়ায় বাস চালাতে হয়েছিল, তার উপরে রাস্তা খারাপের জন্য রক্ষণাবেক্ষনে খরচ বেড়েছে, তার উপর দু’চারটি যাত্রী নিয়ে যেতে বাস চালাতে হয় তাহলে ক্ষতির বোঝা বাড়ত।”
ধর্মঘটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে এ দিন শহর চষে বেড়ান মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত। তাঁর হস্তক্ষেপে খোলা হয় বন্ধ এটিএম কাউন্টার। বেলা ১১টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে কালেক্টরেট মোড় থেকে মেদিনীপুর বিএড কলেজের পাশ দিয়ে কেরানিতলা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন অমিতাভবাবু। কলেজ পেরোনোর পরই দেখলেন, একটি ব্যাঙ্ক বন্ধ, ঝাঁপ খোলেনি পাশের এটিএমের। সামনে বসে নিরাপত্তারক্ষী তারকনাথ কুণ্ডুকে পেয়ে মহকুমাশাসক প্রশ্ন করলেন, “কেন ব্যাঙ্ক খোলেনি?” রক্ষী বলছিলেন, “অফিসার-কর্মচারীদের কেউ আসেননি।” অমিতাভবাবুর পরের প্রশ্ন, “এটিএম কাউন্টারও বন্ধ?” থতমত খেয়ে রক্ষী বলছিলেন, “না মানে...।” তাঁর মুখের কথা কেড়ে মহকুমাশাসক বলেন, “মানে আবার কী। এখনই এটিএম খুলুন। নিরাপত্তার দিক থেকে কোনও সমস্যা হবে না। শহরে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।” কথা না বাড়িয়ে এটিএম খুলে দেন নিরাপত্তারক্ষী। গ্রাহকদের ভিড় জমতে দেরি হয়নি। এলআইসি মোড়েও মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে এটিএম খোলা হয়।
মেদিনীপুর আদালতেও যান মহকুমাশাসক। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। দেখা করেন মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায় এবং সিজেএম কল্লোল দাসের সঙ্গে। পরে মহকুমাশাসক বলেন, “বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা ছিল। অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
খড়্গপুরেও বেশিরভাগ দোকানপাট ছিল বন্ধ। এ দিন সকালে লোহানিয়া মাদ্রাসায় সিপিএম পতাকা টাঙিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অবশ্য স্কুল খুলে দেয়। খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলে ঘুরে বেড়ান তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ। তাঁর দাবি, “শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু করে জেলার সর্বত্রই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। জেলায় বন্ধের কোনও প্রভাবই পড়েনি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.