নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
একশো দিন কাজ প্রকল্পে কাজের উৎপাদন পরিমাণ (আউটপুট) যথাযথ রাখার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হল আরামবাগ ব্লক প্রশাসন। প্রতিটি পঞ্চায়েতের সংসদ ধরে ধরে সভার আয়োজন করে শ্রমিকদের উদ্দীপ্ত করার লক্ষে আধিকারিকেরা পৌঁছে যাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে। গত শুক্রবার থেকেই সেই কাজ শুরু হয়েছে তিরোল পঞ্চায়েত এলাকার নৈসরাই গ্রামের ৪টি সংসদে। আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “প্রাথমিক ভাবে বিশেষ অসুবিধার জায়গাগুলিতে আমরা পৌঁছচ্ছি। পর্যায়ক্রমে ১৫টি পঞ্চায়েতের ১৭৭টি গ্রাম সংসদেই আমরা যাব।”
প্রকল্প যথাযথ রূপায়ণে অসুবিধাগুলি কী?
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অনেক জায়গাতেই শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের বদলে মাত্র ৪ ঘণ্টা কাজ করে পুরো বেতনের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং অশান্তি সৃষ্টি করছেন। কাজের পরিমাপ নিয়ে সুপারভাইজারদের সঙ্গে শ্রমিকদের মারপিট হয়েছে। এমনকী পঞ্চায়েত আধিকারিক নির্মাণ সহায়ককেও মারধর এবং পঞ্চায়েত প্রধানকেও হেনস্থা বা ঘেরাওয়ের একাধিক নজির আছে। এই রকম অশান্তি, পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই নৈসরাই গ্রামের ৪টি সংসদে গত দেড় বছর ধরে সমস্ত রকম কাজ বন্ধ ছিল। অবশেষে স্থানীয় কিছু উদ্যোগী মানুষ ঝুঁকি নিয়ে মাসখানেক ধরে কাজ শুরু করলেও কাজের সময়সীমা এবং উৎপাদন পরিমাণের সমস্যা একই আছে। একজনের মাটি কাটার কথা ৬৯ কিউবিক ফুট। নরম-শক্ত ইত্যাদি মাটির চরিত্র অনুযায়ী গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ কিউবিক ফুট কাটলেই পুরো দিনের পারিশ্রমিক পেয়ে যাবেন। কিন্তু শ্রমিকেরা মাত্র ৪ ঘণ্টা কাজ করে তার অনেক কম কাটছেন বলে অভিযোগ। অথচ সেই শ্রমিকরাই গৃহস্থের কাজে অবলীলায় ৯০ কিউবিক ফুট অবধি পুকুরের মাটি তুলে ফেলেন।
প্রশাসনিক এই অভিযোগ অবশ্য শ্রমিকরা অস্বীকারও করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিকের বক্তব্য, “এক সঙ্গে ১৫০-২০০ জন কাজ করি। সুপারভাইজাররা গ্রামের ছেলে। তাদের কথা শুনে চলার মতো মানসিকতা নেই। সরাসরি প্রশাসনিক তদারকি না থাকলে বরং কে কত কম কাজ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতাই চলে।’’ তবে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রমিকদের উদ্দীপ্ত করার প্রয়াসের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা আশাবাদী। যেমন চারটে গ্রাম সংসদের যথাক্রমে অমল সর্দার, ভীষ্মদেব কোনার, ইমরান খান এবং মরসেদ আলি খানদের বক্তব্য, ‘‘ব্লকের এপিও কৌশিক চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর পুরো টিম এসেছিলেন। আমরা বুঝেছি প্রত্যেকে নিজের কাজটুকু করলেই গ্রামের চেহারাই বদলে যাবে।’’ শ্রমিকদের এই উপলব্ধির উপরেই ভরসা করছেন বলে জানিয়েছেন বিডিও প্রণব সাঙ্গুই। |