রাতে ব্যবস্থা হল খিচুড়ির। জিরিয়ে নেওয়ার জন্য পেতে দেওয়া হল শতরঞ্চি। মশার কয়েল জ্বালানো হল। ব্যবস্থা পাকা। তবে মঙ্গলবার রাতভর এই পরিষেবা নিয়ে দফতরেই কাটাতে হল গোঘাট ১ ব্লকের সিপিএম পরিচালিত রঘুবাটি পঞ্চায়েতের ১১ জন কর্মী-আধিকারিককে।
তাঁদের দফতর-বন্দি করে রেখেছিলেন তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী। পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পের গাছ কেটে বিক্রির টাকায় গরমিল করা হয়েছে। প্রশাসনিক তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ঘেরাও-কর্মসূচি। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “গরমিল নিয়ে অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।”
সরকারি কর্মীদের ঘেরাও প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ব্লক প্রশাসনের তৎপরতায় অভাবেই অনভিপ্রেত ঘটনাটি ঘটেছে। গোঘাট ১ বিডিও কেন পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেননি, তা তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সারা রাত ধরে কর্মীদের আটকে রাখার ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” সংশ্লিষ্ট বিডিও দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মঙ্গলবার বিকেলে ঘেরাওয়ের খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে যাননি বলে অভিযোগ। |
অফিসেই সারতে হল নৈশভোজ। ছবি: মোহন দাস। |
তাঁর যুক্তি, “সন্ধ্যায় আমি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু রঘুবাটি ঢোকার আগে কুমুরশায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে যেতে পারিনি। পুলিশকে পাঠিয়েছিলাম।” বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ মহকুমাশাসক-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তৎক্ষণাৎ অডিটের ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কী বলছে তৃণমূল? সরকারি কর্মীদের রাতভর আটকে রেখেও বিন্দুমাত্র দমেননি দলের নেতা প্রদীপ রায়। এ দিন তাঁর হুমকি, “মহকুমাশাসকের তত্ত্বাবধানে তদন্তে দেরি হলে বা একটা টাকাও গরমিল ধরা পড়লে যদি দোষীদের গ্রেফতার করা না হয় তবে মহকুমা প্রশাসনের কতার্দেরও সারা রাত ঘেরাও করা হবে।” এ দিন সন্ধের পরে বিডিও জানান প্রাথমিক তদন্তে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা গরমিল পাওয়া গিয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
মঙ্গলবার এই দুর্ভোগ পোয়াতে হয়নি পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। নানা কারণে তাঁরা দুপুরের পরেই বেরিয়ে যান। বিকেল ৫টার পর থেকে শুরু হয় ঘেরাও। সিপিএমের গোঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ পাত্র বলেন, “সরকারের মধ্যে থেকে সরকারি কর্মীদের এ ভাবে আটকে রাখা অশিক্ষার পরিচয়। ঘেরাওকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত।
কী বলছেন প্রধান গুণধর মণ্ডল? তাঁর দাবি, “আমার কার্যকালের মধ্যে গরমিলের কোনও প্রশ্নই নেই।” ঘেরাওয়ে আটকে পড়া এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আশিস কাঞ্জিলাল বলেন, “গাছ বিক্রির প্রাপ্ত টাকা এবং তা খরচের কাগজপত্র নেই এটা বাস্তব। ঘেরাওকারীরা দুর্ব্যবহারও করেননি। তবে সারা রাত ধরে এ ভাবে আটকে রাখাটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।” বিষয়টি জেলাস্তর পর্যন্ত জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আশিসবাবু। ঘেরাওকারীরা রাতে খাওয়া-দাওয়া-শোওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন ওই সরকারি কর্মীরা। |