|
|
|
|
কাঠগড়ায় রাজ্য |
জমি-জটে ফেরত গেল মেট্রোর ৩ হাজার কোটি |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় |
বাজেট বরাদ্দের অভাব ছিল না। কিন্তু সেই টাকার সিংহভাগ খরচই করতে পারল না মেট্রো রেল। ফলে চারটি মেট্রো প্রকল্পের তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ফেরত চলে গেল। এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের তির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকেই। তাঁদের দাবি, রাজ্যের জমি নীতির গেরোয় পড়েই অন্তত তিনটি প্রকল্পের কাজ এগোতে পারছেন না তাঁরা।
রাজ্য সরকারকে দুষেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, “কেন্দ্র টাকা দেয় না বলে রাজ্য বার বার যে অভিযোগ তুলছে, তা মিথ্যা প্রমাণিত হল। এর পরে আমরা কী করে বাংলার জন্য টাকা চাইব? শিল্প আর সামাজিক উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে উৎসাহী নয়, তা-ও এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেল।”
অধীরের এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। মন্তব্য করতে চাননি রাজ্যের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। তিনি বলেন, “জমির বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে। এ নিয়ে এখন কিছু বলব না।” উল্লেখ্য, এর আগে জমির গেরোয় পড়ে কলকাতা-শিলিগুড়ি জাতীয় সড়ক চওড়া করার প্রকল্পের টাকাও খরচ করতে পারেনি ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি।
মেট্রো রেলের যে প্রকল্পগুলির টাকা ফেরত চলে গেল সেগুলি সবই ঘোষিত হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে। প্রকল্পগুলি হল: জোকা-বিবাদী বাগ, নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর-ব্যারাকপুর, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর ও দমদম-বারাসত। মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হয়ে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পগুলির জন্য মোট ৪০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরে মমতা একাধিকবার বিভিন্ন জনসভায় বলেছেন, তিনি রেলের সব প্রকল্পের টাকাই বরাদ্দ করে এসেছেন। তাই এই সব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু নতুন রেল বাজেট তৈরির আগে মমতার সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলে আগের বাজেটে বরাদ্দ করা টাকা মেট্রো কর্তৃপক্ষের হাত থেকে ফিরিয়ে নিল রেল মন্ত্রক।
চারটি মেট্রো প্রকল্প কী অবস্থায় রয়েছে জানাতে গিয়ে মেট্রো রেল সূত্রে বলা হচ্ছে, জোকা-বিবাদী বাগ প্রকল্পের কাজ কার্যত শুরু করাই যায়নি। বাম আমলেই ট্রাম লাইন সরানো নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতার টানাপোড়েন চলছিল। তৃণমূল আমলে কাজ শুরু হলেও প্রথম সমস্যা দেখা দেয়, মাটির উপরে স্টেশন তৈরির জমি পাওয়া নিয়ে। রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রতিটি জায়গাতেই দখলদার রয়েছেন। দখলদার সরানোর জন্য রাজ্য সরকারকে বার বার বলা সত্ত্বেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তারাতলায় টাঁকশালের সামনে ও সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা ময়দান এলাকায় কী ভাবে মেট্রোর জমি পাওয়া যাবে সেই সমস্যার সমাধানও হয়নি। ওই দু’টি জায়গায় মেট্রো মাটির তলা দিয়ে যাবে, না উপর দিয়ে, তা এখনও ঠিক করা যায়নি। এর ফলে নকশাই চূড়ান্ত হয়নি। মেট্রো রেল সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে ১০ শতাংশ কাজও হয়নি। বাকি কাজ কবে, কী ভাবে হবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না রেলকর্তারা।
জমি জটে আটকে গিয়েছে দমদম-বারাসত মেট্রো রেল প্রকল্পও। রেল সূত্রের খবর, মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসত পর্যন্ত রেলের জমিতেই এই প্রকল্প করার কথা হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ কিলোমিটার লম্বা ওই জমি প্রায় ১৬০০টি পরিবার দখল করে রেখেছে। রেলের দাবি, ওই জবরদখল উচ্ছেদ করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। জবরদখল হটাতে রেলের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে সাতটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। একাধিক বৈঠকও করা হয়েছে। মাস দু’য়েক আগে মহাকরণের সর্বশেষ বৈঠকে রাজ্যের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, জবরদখল উচ্ছেদ করা যাবে না। ফলে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ওই অংশে কাজ করার কথা ছিল বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা ‘লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো’ (এল অ্যান্ড টি)-র। বরাত পাওয়ার পর প্রায় এক বছর ধরে যন্ত্রপাতি ও কর্মী নিয়ে অপেক্ষা করে সম্প্রতি ওই সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে বলে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর-ব্যারাকপুর প্রকল্পেও। নোয়াপাড়া থেকে বরাহনগরের মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৫০০টি পরিবার রয়েছে। রেলের অভিযোগ, তাদের সরানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি। ব্যারাকপুর পর্যন্ত বি টি রোডের তলার জলের পাইপ কী ভাবে তা সরানো হবে, তা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। ফলে এই প্রকল্পের কাজও বিশেষ এগোয়নি।
জমি সমস্যা তুলনায় কম নিউ গড়িয়া-দমদম প্রকল্পটিতে। এখানে মেট্রো রেল ই এম বাইপাস, সেক্টর ফাইভ, নিউটাউন হয়ে বিমানবন্দরে ঢুকবে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, বাইপাস অংশের কাজ ভালই এগোচ্ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে আগের নকশার পরিবর্তন করে নতুন করে নকশা তৈরির জন্য।
নতুন নকশায় বিমানবন্দর স্টেশন মাটির তলায় করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভি আই পি রোডে তেঘরিয়ার পর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চার কিলোমিটার মাটির তলায় লাইন পাততে হবে। এ জন্য রেল বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে। ফলে এ বছর এই প্রকল্পের কাজ কিছুটা থমকে গিয়েছে।
|
বিদায় বরাদ্দ |
প্রকল্প |
কত টাকার |
দমদম-দক্ষিণেশ্বর-ব্যারাকপুর |
২২৯৬ |
নিউ গড়িয়া-দমদম |
৪২৫৯ |
দমদম-বারাসত |
২৩৯৭ |
জোকা-বিবাদী বাগ |
২৯১৪ |
মোট |
১১,৮৬৬ |
বাজেট বরাদ্দ (২০১২-’১৩) |
৪০০০ |
খরচ হল |
৭৬১ |
ফেরত গেল |
৩২৩৯ |
(সব অঙ্ক কোটি টাকায়) |
|
|
|
|
|
|