|
|
|
|
বদলায়নি মানসিকতা |
হাইকোর্টে আইনজীবীরা নেই, বসল না এজলাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দিয়েই কর্মসংস্কৃতির উপরে জোর দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র। তবে মানসিকতা না বদলালে যে আদালতকে সচল রাখা সম্ভব নয়, বলেছিলেন সে কথাও। বুধবার পরিস্থিতি দেখে অনেকেই বলছেন, আর এক বার প্রমাণ হল যে, মানসিকতা বদলায়নি।
জরুরি পরিষেবা হিসেবে বনধের আওতা থেকে হাইকোর্টকে ছাড় দেওয়ার নির্দেশ ছিল। নির্দেশ মেনে সকাল সকাল অফিসে আসেন হাইকোর্টের অফিসার ও কর্মীরা। তবু উচ্চ আদালতকে পুরোপুরি চালু করা গেল না। কারণ, আইনজীবীদের বড় অংশই গরহাজির। সরকারি আইনজীবীরা অনেকে এলেও অন্যরা আসেননি। দুই পক্ষের আইনজীবী না থাকায় হাইকোর্টে কার্যত কোনও কাজই হল না।
সম্প্রতি বনধ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা যায় না। বিষয়টি মানুষের অন্তর থেকে আসতে হয়। অন্তর সায় না দিলে কাজ করার সংস্কৃতি আসে না।” তাঁর বক্তব্য ছিল, “আইনজীবী বা চিকিৎসকেরা যদি কাজ করতে না চান, তা হলে হাইকোর্ট কড়া নির্দেশ দিয়েও কিছু করতে পারবে না।”
এ দিন কার্যত সেটাই ঘটল। আইনজীবীদের বড় অংশ গরহাজির থেকে প্রধান বিচারপতির সংশয়কেই সত্যি প্রমাণিত করলেন।
এ দিন সকাল থেকেই হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের এজলাসে হাজির ছিলেন। হাজির ছিলেন কোর্ট অফিসারেরাও। তখন মনে হচ্ছিল, প্রধান বিচারপতির ডাকে মানসিকতা বদলাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাড়া মিলল না আইনজীবীদের বড় অংশের কাছ থেকেই। অথচ সকাল থেকে যানবাহন চলতে থাকায় কয়েক জন মক্কেলও তখন কোর্টে উপস্থিত। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে আদালতের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে একটি মামলার শুনানিও হয়েছে।
বনধ সংক্রান্ত মামলা নিয়েও বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আবেদনকারী আইনজীবী ইদ্রিশ আলি। এমনকী, একটি মামলায় বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সরকার পক্ষের বক্তব্য শুনে এক জনের জামিনও মঞ্জুর করে।
কিন্তু অধিকাংশ আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় এর বেশি কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। বেলা ১১টা পর্যন্ত এজলাসে বসে বিচারপতিরা নিজেদের চেম্বারে ফিরে যান। বেলা দু’টোর পরে বিচারপতিরা ফের এজলাসে বসেন। কিন্তু অবস্থা তখনও বদলায়নি। কিছু ক্ষণ দেখে তাই বিচারপতিরা ফের চেম্বারে ফিরে যান। এ দিনের মতো হাইকোর্টে যে আর কাজ হবে না, তা-ও স্পষ্ট হয়ে যায়।
আইনজীবীরা অনুপস্থিত থেকে এ ভাবে হাইকোর্টের কাজ বন্ধ করে দিলেন কেন? কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভাস্কর বৈশ্য বলেন, “বার অ্যাসোসিয়েশন আইনজীবীদের কাজে হাজির থাকা বা না-থাকার ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। ধর্মঘটে যোগ দেওয়া বা না দেওয়া আইনজীবীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বারের একটিই বক্তব্য, দু’পক্ষের বক্তব্য না শুনে যেন মামলা খারিজ করে দেওয়া না হয়।”
কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। কাজে যোগ দেওয়ার দিনেই বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করে দেন। রেওয়াজ মেনে সে দিন দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু কর্মসংস্কৃতির স্বার্থে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময়েই সংবর্ধনা নিতে চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অনুষ্ঠান দীর্ঘায়িত হওয়ায় ওই দিন দ্বিতীয় পর্বের কাজ আর হয়নি। একই ভাবে কলকাতা হাইকোর্টের সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের পরদিন প্রধান বিচারপতির ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করেন। তার পরে এ দিন ফের আইনজীবীদেরই বড় অংশের অনুপস্থিতিতে বিচারের কাজই কার্যত হল না কলকাতা হাইকোর্টে। |
|
|
|
|
|