|
|
|
|
স্টেশনে ট্যাক্সি-বিভ্রাট, স্বাভাবিক ছন্দে বিমানবন্দর |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কোথাও কার্যত বনধে ভোগান্তির চেনা চেহারা, কোথাও আর পাঁচটা বনধের চেয়ে আলাদা হয়ে ওঠার স্বাভাবিকতা। বুধবার দু’রকম ছবিই দেখলেন কলকাতায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা। এক দিকে যখন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন থেকে নেমে ট্যাক্সি না পেয়ে হয়রান হলেন বহু যাত্রী, তখনই অন্য দিকে বিমানবন্দর চলল স্বাভাবিক ছন্দে। দিনভর সূচি মেনে উড়ান চলার পাশাপাশি যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ভল্ভো বাস, ট্যাক্সি বা সাধারণ গাড়ি সবই ছিল পুরোপুরি নিয়মমাফিক।
হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে সকালে দূরপাল্লার ট্রেন আসার সময়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে কয়েকটি ট্যাক্সির দেখা মিললেও বেলা বাড়তেই তারা উধাও হতে শুরু করে। ফলে বিকেলের দিকে আসা কিছু দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা ট্যাক্সি না পেয়ে প্রবল দুর্ভোগে পড়েন। শিয়ালদহ স্টেশনে সকাল ১০টার মধ্যে বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন আসে। সকালের দিকে স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের প্রি-পেড বুথে ট্যাক্সি থাকলেও পরে কিন্তু ট্যাক্সির সংখ্যা বেশ কমে যায়। ফলে ঝামেলায় পড়েন যাত্রীরা। শিয়ালদহ স্টেশনে ট্যাক্সি ও অটো কম থাকার সুযোগ নিয়ে কোনও কোনও চালক অস্বাভাবিক ভাড়া দাবি করেছেন বলে অভিযোগ। হাওড়া স্টেশনে পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটি সরকারি বাস স্টেশন চত্বরে নিয়ে আসা হয়। শুধু তা-ই নয়, যে সব ট্যাক্সিচালক হাওড়া স্টেশনে আসতে রাজি হননি, তাঁদেরও যাত্রী নিতে বাধ্য করেছে পুলিশ।
হাওড়া ও শিয়ালদহ, দুই স্টেশন চত্বরই এ দিন ঘুরে দেখেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। দুপুর ২টো নাগাদ স্টেশন চত্বরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মহাকরণ থেকে হাওড়া স্টেশন চত্বরে যান তিনি। প্রি-পেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বসে মন্ত্রী নিজেই যাত্রীদের থেকে ভাড়া নিয়ে স্লিপ কাটেন। পাশাপাশি, ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পাশে দাঁড়ানো সিটিসি বাসে বসা যাত্রীদের তিনি আশ্বাস দিয়ে জানান, ট্রেনযাত্রীদের সমস্যায় পড়া আটকাতে স্টেশন চত্বর থেকে সিটিসি ও ভল্ভো বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসগুলি প্রত্যেককে তাঁদের গন্তব্যে ঠিকমতো পৌঁছে দেবে। |
|
বিমানবন্দরের সামনে ভলভো বাস। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
স্টেশনে ট্যাক্সি কম চলছে কেন, সে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “ইট-পাটকেল খাওয়ার ভয়েই ট্যাক্সিচালকেরা হাওড়ায় কম এসেছেন। তাই ট্যাক্সি একটু কম চলেছে। তবে বাস-মিনিবাস এবং সরকারি বাস চলাচল সেখানে স্বাভাবিক।” মন্ত্রী জানান, এ দিন হাওড়ায় লঞ্চও স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করেছে।
অন্য দিকে, আর পাঁচটা ধর্মঘটে দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখেই এ দিন আর ঝুঁকি নিতে চাননি বহু বিমানযাত্রী। তাঁদের অনেকে দুপুর তিনটের উড়ান ধরতে ভোর পাঁচটাতেই পৌঁছে গিয়েছেন বিমানবন্দরে।
সারা দিন অবশ্য বিমান উড়েছে পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনেই। অন্য দিনের মতোই বিমানবন্দরের বাইরে নিয়মিত ভল্ভো বাসও ছিল। ট্যাক্সি ছিল তুলনায় কম। সাধারণ কিছু গাড়িও (কিছু বেশি টাকা নিয়েই) যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, এমন খবরও নেই। তবু চিত্রা মান্নার মতো অনেকেরই বন্ধ শুনলেই ভয়ে বুক কাঁপে। আগরতলায় ছেলের কাছে যাচ্ছেন। বাড়ি চন্দননগরে। আগে থেকে গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলেন। ভোর চারটেয় রওনা হয়ে পাঁচটার মধ্যে বিমানবন্দরে। উড়ান ক’টায়? জানান, বিকেল তিনটে নাগাদ। বাকিটা সময়ে টার্মিনালের বাইরে বসে কাটাতে হয়েছে তাঁকে।
জয়িতা রায়ের বাপের বাড়ি ইসলামপুরে। মায়ের অসুখের খবর পেয়ে যে সময়ে টিকিট কেটেছিলেন, তখন বনধের কথা জানতেন না। স্বামী ও দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে এ দিন সকাল ৬টায় হাজির বিমানবন্দরে। বাগডোগরার বিমান ছাড়ার কথা দুপুর দেড়টায়। জয়িতার কথায়, “সঙ্গে ছোট বাচ্চা। ঝুঁকি নিই কী করে? রাস্তায় কিছু হয়ে গেলে কে দেখত? তাই সকাল-সকাল চলে এসেছি। অত ভোরে ওঠার ফলে বাচ্চাটা সমানে কেঁদে চলেছে।” প্রশাসনের আশ্বাসে ভরসা নেই। উল্টে ভয় বন্ধ-সমর্থকদের রক্তচক্ষুর।
একদল ট্যাক্সিচালক সকাল আটটা নাগাদ বিমানবন্দরের বাইরে চিৎকার জুড়ে দেন। বিরাট লাইনে যাত্রীদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, তাঁরা কেউ স্বেচ্ছায় আসেননি। ইচ্ছে ছিল, ভোরে কোনও যাত্রীকে নামিয়ে বাড়ি যাবেন। পুলিশ ধরে জোর করে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। অথচ সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত যাত্রী ছিল না। কারণ, তার আগে অন্য শহর থেকে যাত্রীরা এসে পৌঁছন না কলকাতায়। পরে অবশ্য যাত্রী পেয়েছেন তাঁরা। তবে, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি কমতে শুরু করে। |
|
|
|
|
|