|
|
|
|
বনধের পথ বন্ধ করেই নজির তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
পুরোদমে কাজ করে বনধের বিরোধিতা করল সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক। কলসেন্টার ও বিপিও সংস্থাগুলিতে কাজ তো হলই, সফ্টওয়্যার শিল্পেও বুধবার হাজিরা ছিল চোখে পড়ার মতো। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘সেক্টর ফাইভ স্টেক হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কর্তারা মনে করছেন, কাজের নিরিখে এ দিন তাঁরা বেঙ্গালুরুকে নিশ্চিত ভাবে হারাতে পেরেছেন। আর আজ, বৃহস্পতিবার শিল্পতালুকের সব কিছু আরও স্বাভাবিক থাকবে বলে তাঁদের দাবি।
এ দিন সকালে সেক্টর ফাইভে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাথের অধিকাংশ খাবারের দোকানই খোলা। যাঁরা অফিসে এসেছেন, অনেকেই সকালের খাবার খেয়ে নিচ্ছেন সেখানে। রাস্তায় প্রচুর সরকারি-বেসরকারি বাস। চলছে রিকশা, অটো সবই। কে বলবে বনধ! কয়েকটি কলসেন্টার ও বিপিও অফিসে গিয়েও দেখা গেল, তথ্যপ্রযুক্তি-কর্তারা ভুল বলেননি। অধিকাংশ অফিসেই পুরোদমে কাজ হচ্ছে। শহরের কোথাও কোথাও বনধের ফাঁকা ছবি চোখে পড়লেও সেক্টর ফাইভ ছিল কর্মব্যস্ত।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির ওই সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ কর জানান, বনধে কর্মীরা অনেকেই বাসে করে এসেছেন। মোটরবাইক বা নিজের গাড়ি নিয়েও অনেকে সময়মতো অফিসে হাজির হয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “বনধেও কাজ করে মুখরক্ষা করেছে কলকাতার তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক।” |
|
সেক্টর ৫-এর একটি অফিসে বনধের সকাল। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
অন্যান্য বার শ্রমিক সংগঠনগুলি বনধ ডাকলে সিটু-সমর্থকদের ঝান্ডা হাতে সেক্টর ফাইভের বিভিন্ন মোড়ে ‘পিকেটিং’ করতে দেখা যায়। গাড়ি আটকানোও হয়। বন্ধ থাকে দোকানপাট। কিছু রিকশা এবং অটো ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বাস চলার কোনও প্রশ্নও থাকত না। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে জরুরি পরিষেবা হিসেবে রাজ্য সরকার ঘোষণা করলেও সিটু কোনও দিনই তা মানতে চায়নি বলেই কাজ বন্ধ রাখার হুমকি থাকত। আর এ দিন ছিল তার একেবারেই উল্টো চিত্র।
এ দিন নিকো পার্কের দিক থেকে ইনফিনিটি বিল্ডিংয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তায় কয়েক জন সিটু-সমর্থককে শুধু বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া, রাজারহাটের নিউ টাউন এক্সপ্রেসওয়ে থেকে শুরু করে ডিএলএফ মোড়, টেকনোপলিস মোড় অথবা বাইপাসের কাছে চিংড়িঘাটা মোড় কোথাও বনধ সমর্থকদের চোখে পড়েনি। কাজ করতে আসছেন এমন কোনও কর্মীকে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেনি বলে সংস্থাগুলি জানাচ্ছে। শুধু সকাল ৯টা নাগাদ উইপ্রো মোড়ের দিক থেকে করুণাময়ীর দিকে সিপিএমের একটি মিছিল বেরিয়েছিল। ফলে এ দিনের বনধে সেক্টর ফাইভ-সহ তার আশপাশের অঞ্চল ছিল এক প্রকার শান্তি ও স্বাভাবিক। যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, তাঁরা কাজের জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন।
একটি বড় সফ্টওয়্যার সংস্থার কর্মী দীপাঞ্জন কর্মকার শুধু জানালেন, “বনধের মুখ ভোঁতা করেছি আমরাই। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কলকাতার কর্মসংস্কৃতি নিয়ে ভাবমূর্তি ফেরাতে গেলে বনধের বিরোধিতা করে কাজই করতে হবে।”
এ দিকে, একেবারে উল্টো চিত্র দেখা গেল শহরের শিক্ষামহলে। শিক্ষামন্ত্রীর কথার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বুধবার স্কুল-কলেজ সব খোলা থাকল ঠিকই, কিন্তু বিচ্ছিন্ন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় কোথাওই ক্লাস হল না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কমবেশি উপস্থিত থাকলেও সর্বত্রই ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা ছিল কম। পরীক্ষার্থী কম থাকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাসে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বি-টেক এবং এম-টেক পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। ক্লাস হচ্ছে কি না, তা দেখতে অনেক স্কুলের সামনে পুলিশকর্মীরা হাজির হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
কোনও কোনও কলেজে কিছু ক্লাস হয়েছে বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দাবি। যদিও সেগুলিতেও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। যেমন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে মাত্র দু’জন পড়ুয়া নিয়ে কিছু ক্লাস হয়েছে বলে খবর। কয়েকটি কলেজে কিছু পরীক্ষাও হয়েছে। তবে সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, কলেজের নিজস্ব পরীক্ষা।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দাবি, এ দিনের বনধ শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি যত দূর জানি, অধিকাংশ জায়গাতেই ক্লাস হয়েছে। স্কুলগুলিতে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার কেমন ছিল, সে বিষয়ে বিভাগীয় আধিকারিকদের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছি।” এ দিন যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল-কলেজে হাজির থাকেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, “ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।” |
|
|
|
|
|