|
|
|
|
বনধে দোকান খোলা রাখার ইনাম কর মকুব |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
এর আগে বেতন কাটার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্ধের দিনে সরকারি কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দোকান খোলা রাখতে ইনামের কথা ঘোষণা করলেন তিনি। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বনধ-বিরোধী দোকানিদের জন্য কিছু কর মকুবের কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি কারা দোকান বন্ধ রেখেছেন, থানা ধরে সেই হিসেবও চাওয়া হয় মহাকরণ থেকে। যদিও স্পষ্ট কোনও শাস্তির কথা এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানাননি।
এ দিন মহাকরণে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন কর মকুবের কথা শোনাচ্ছেন, তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দিকে তাকিয়ে মমতা বলেন, “যাঁরা সকাল থেকে দোকান খুলে রেখেছেন, পুরসভার তরফে তার একটা সমীক্ষা করার জন্য মেয়রকে অনুরোধ করব।”
সেই নির্দেশ মেনেই পুরসভায় ফিরে গিয়ে সব ওয়ার্ডের লাইসেন্স অফিসারকে ফের বিভিন্ন বাজারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পাঠান মেয়র। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা যে রিপোর্টটি পাঠান মেয়রকে, তাতেই বলা হয়, বেলা ২টো পর্যন্ত কলকাতার পুর-বাজারগুলির ৬৮ শতাংশ দোকানই বন্ধ ছিল। সেই রিপোর্টই পৌঁছয় মহাকরণে। এ দিন সকাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসে দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা দোকান খোলেননি, তাঁরাও খুলতে শুরু করেছেন। আগে ১০০ শতাংশ দোকানই বন্ধ থাকত। এ দিন তো অন্তত ৪০ শতাংশ দোকান খুলেছে। সন্ধের পরে সেটাই ১০০ শতাংশ হয়ে যাবে।” এর মধ্যেই যে সব হকার এ দিন দোকান খুলে বা ডালা নিয়ে বসেছিলেন, তাঁদের জন্যও ইনাম ঘোষণা করেছেন তিনি। বলেছেন, “আমি হকার ভাইদের কৃতজ্ঞতা জানাব, বিশেষত যাঁরা রাস্তায় ডালা নিয়ে জিনিস বিক্রি করেন। হকারদের আমরা আইনত অধিকার দেব।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “কোর্ট তো বলেই দিয়েছে, বনধে কোনও ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরাও জানিয়ে দিয়েছি, রাজ্য সরকার নিজেই ক্ষতিপূরণ দেবে।” |
|
মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র |
মমতার এই সব ঘোষণার ফলে বিকেলে পরিস্থিতি কি বদলালো?
পুরকর্তাদের একাংশের দাবি, বিকেলের পরে বহু এলাকায় বড় দোকান বা পুর-বাজারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয়নি। বড়বাজার, পোস্তা, গড়িয়াহাট, দেশপ্রিয় পার্ক কিংবা ধর্মতলা চত্বর এই সব এলাকারই বড় দোকানে সকাল থেকে তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরেও সেই তালা খোলেনি। এ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি শোভনবাবু। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে যা বলেছেন, তার পরে আর কিছু বলার নেই।” দোকান খোলা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) দেবব্রত মজুমদারও। তবে লাইসেন্স অফিসারদের একাংশ বলেন, “বন্ধ দোকানের সংখ্যা জানতে আমরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। সকালের দিকে যাও বা দু’-এক জন দোকানির খোঁজ মিলেছে, বিকেলের পরে তা-ও পাওয়া যায়নি।” দোকান খুলতে না পেরে শেষ পর্যন্ত দোকানির নামধাম জোগাড় করেই পুরসভায় ফিরেছেন বেশির ভাগ লাইসেন্স অফিসার।
অনেকেই কিন্তু বলছেন, পুরকর্তারা যে সব এলাকায় খোঁজ নিয়েছেন, সেখানে দোকানপাট ছুটির দিনে বন্ধই থাকে। অফিসের দিনেও সন্ধের পরে অনেক দোকানেই ঝাঁপ পড়ে যায়। পক্ষান্তরে বিভিন্ন পাড়ায় ছোট দোকান কিন্তু অনেকাংশই খোলা ছিল। শুধু চা, পান, ওষুধ, স্টেশনারি-ই নয়, খোলা ছিল বিভিন্ন এলাকার বাজারও। তবে পুর-বাজারের চেহারা ছিল একেবারে উল্টো। সেই বাজারগুলি যাতে খোলা থাকে, সে জন্য মঙ্গলবারই পুরসভার তরফে লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। এ দিন পুর অফিসারেরা যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকার কথাই বলা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। সন্ধের পরে এ নিয়ে মেয়রকে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি জবাব এড়িয়ে তিনি বলেছেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বন্ধ দোকানপাট সম্পর্কে এ দিন পুলিশকেও খোঁজখবর নিতে বলা হয়। মহাকরণ থেকে প্রতিটি থানায় এই নির্দেশ যায়। বলা হয়, এলাকায় যে সব দোকান বন্ধ, তার ছবি তুলে এবং দোকান সম্পর্কে তথ্য দিয়ে বিভাগীয় ডিসি-র অফিসে জমা দিতে হবে। রাতেই রিপোর্ট জমা পড়ে গিয়েছে।
এই রিপোর্ট ধরে কি কোনও শাস্তিরও ব্যবস্থা করা হবে? এই নিয়ে প্রশাসনের কেউই কিছু জানাননি। মমতার মুখে অবশ্য এ দিন শাস্তি নয়, ছিল ‘পুরস্কারের’ কথা। তিনি বলেন, “যাঁরা দোকান খোলা রেখেছেন, সরকার তাঁদের সাহায্য করবে। তাঁরা ‘অ্যাডভান্টেজ’ পাবেন।” জানান, এই বিষয়ে পুরসভা সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ইনাম ঘোষণা বা পুরসভার শাস্তির হুঁশিয়ারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের বক্তব্য, এ ভাবে দোকান চিহ্নিত করা কঠিন। কেউ যে দোকান বন্ধ রেখেছিল, তা প্রমাণ করাও খুবই কঠিন। মামলা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষও বলেন, “দোকান বন্ধ রাখলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা বা খোলা রাখলে পুরস্কার দেওয়া, কোনওটারই আইনগত ভিত্তি নেই।” সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা এঁদের নেই।” শ্রমিক নেতৃত্বের বড় অংশের প্রশ্ন, কে কোথায় দোকান খোলা বা বন্ধ রাখল, তা সরেজমিনে দেখার মতো ব্যবস্থা প্রশাসনের হাতে আদৌ আছে কি? যদিও অন্য একটি অংশ বলছে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন কাটা নিয়েও হইচই হয়েছিল। মামলাও হয়। কিন্তু সেই পদক্ষেপে যে কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে, এ দিনের হাজিরা তার প্রমাণ।
তবে মাইক হাতে পুলিশি প্রচার সত্ত্বেও এ দিন বড়বাজার ও পোস্তার ছবি ছিল অন্য বন্ধের মতোই। প্রায় সব আড়ত ও দোকান বন্ধ ছিল। রাস্তার দু’ধারে সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছিল ছোট-বড় লরি, ঠেলা ও ভ্যানরিকশা। ব্যবসায়ী পবন ভুজবল বলেন, “মুটে-মজুর, ভ্যান, লরিচালকদের বেশির ভাগই জানিয়েছিলেন, কাজ করবেন না। তা হলে আড়ত খুলে লাভ কী?”
|
দোকান-দফতর দুই চিত্র |
দোকান খোলা |
মদ, পান, ওষুধ
• আরজি কর রোড • বিধান সরণি
• নিমতলা ঘাট স্ট্রিট • শিয়ালদহ |
স্টেশনারি
•বাগবাজার • উল্টোডাঙা মেন রোড
• বিধাননগর রোড •সন্তোষপুর |
কিছু দোকান খোলা
• চৌরঙ্গি রোড •মির্জা গালিব স্ট্রিট
• পার্ক স্ট্রিট
• বেহালার কিছু অংশ • রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড |
দোকান বন্ধ
• চিৎপুর রোড • শ্যামবাজার
• রাসবিহারী অ্যাভিনিউ |
পুরসভার রিপোর্ট অনুযায়ী |
সরকারি দফতর |
বুধবার গড় হাজিরা ৮৮% |
কৃষি ১৪৭/১৬৪ |
অর্থ ৯৬৫/১০৭২ |
শিল্প-বাণিজ্য ১৮৪/১৯৭ |
শিল্প-বাণিজ্য ১৮৪/১৯৭ |
স্বরাষ্ট্র ৬৯৫/৭৭০ |
(বুধবার হাজির/মোট কর্মী) |
আগে ১০০ শতাংশ দোকানই বন্ধ থাকত।
এ দিন তো অন্তত ৪০ শতাংশ খুলেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
মমতার বনধ-নামচা |
১০টা ৩০:
মহাকরণে ঢুকছেন। |
১২টা: বিভিন্ন দফতর পরিদর্শন।
সঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। |
১২টা ৪৫: একটি ফোন পেয়ে মহাকরণ থেকে বেরোন। |
১টা ৩০: শহরের পরিস্থিতি দেখে মহাকরণে ফেরেন। |
১টা ৪০: সাংবাদিক বৈঠক।
২টো: নিজের ঘরে। আসেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। |
২টো ৩০: মহাকরণের ক্যান্টিনে। সঙ্গে লকেট, মেয়র এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
যাওয়ার সময়ে বলে যান,
“যে যাঁর ইচ্ছেমতো খেয়ে নেবেন। পয়সা দিতে হবে না।” |
৩টে: ফের নিজের ঘরে।
৬টা ১৫: মহাকরণ ছাড়েন। মাঝে ছিল দফায় দফায় বৈঠক। |
|
|
|
|
|
|