বনধের সকালে দুবাই থেকে কলকাতায় এসে নেমেছিলেন সুইডেনের যুবক ক্লাস নরডিন। নেমেই মাথায় হাত। এ কোন শহর? যেখানে এটিএমে তালা মারা!
নরডিন জানালেন, বহু দেশে ঘুরেছেন। কোথাওই পকেট ভর্তি ডলার নিয়ে যাননি। সর্বত্র ডেবিট কার্ডে টাকা তুলেই খরচ মিটিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এখন তো প্লাস্টিক মানি-র (ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড) যুগ। যেখানে যাই, কার্ডে সে দেশের কারেন্সি তুলি। এই প্রথম এটিএমে তালা দেখলাম।”
ধর্মঘটের দু’দিন যে ব্যাঙ্কের দরজাও বন্ধ থাকবে, তা আগেই জানতেন গ্রাহকেরা। শুধু আগে থেকে টাকা ভরে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকায় আশার সলতে ছিল এটিএম। অবশ্য সেখানেও টাকা তোলার সুযোগ কতটা মিলবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছিল মঙ্গলবার থেকেই। বনধের সকালে ঝাঁপ বন্ধ ছিল শহরের সিংহ ভাগ এটিএমেরই। ফলে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে নরডিনের মতো বিপত্তিতে পড়লেন স্থানীয় গ্রাহকরাও। |
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগরের দাবি, রাজ্যের ৮০% এটিএম-ই বন্ধ ছিল। কারণ, ইউনিয়ন সদস্য হিসেবে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটে সামিল হন তার নিরাপত্তা ও সাফাই কর্মীরা। বৃহস্পতিবারও এটিএম পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। ধর্মঘট জারি থাকবে ব্যাঙ্কগুলিতেও। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর এটিএমের নিরাপত্তা কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে বলে রাজেনবাবুর দাবি। এর ফলে, সন্ধ্যা থেকে এটিএম খোলা পাওয়ার আশা করছেন অনেকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রায় সমস্ত শাখা এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের অধিকাংশ শাখায় এ দিন কোনও কাজ হয়নি। কোথাও কোথাও বন্ধ বিরোধীরা ধর্মঘটকারীদের ফেস্টুন ছিড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ জানান ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)-এর আহ্বায়ক নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় ব্যাহত হয়েছে চেক ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়া। অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ জানান, ‘‘প্রতি দিন প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার চেক ক্লিয়ারিংয়ে যায়। দু’দিন ওই ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় যাঁরা মঙ্গলবার চেক জমা দিয়েছেন, তাঁদের তা ক্যাশ হতে সোমবার গড়িয়ে যাবে।” দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও দক্ষিণের অধিকাংশ রাজ্যে ছবিটি ছিল আলাদা। তবে ধর্মঘটী ইউনিয়নগুলির দাবি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে ধর্মঘটে ভাল সাড়া মিলেছে। |