দাম কমিয়ে মুনাফা বাড়ানো!
বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলির কাছে এটাই আপাতত নতুন মন্ত্র। গত জানুয়ারি মাসে দশ লক্ষ সস্তার টিকিট বিক্রি করে স্পাইসজেট প্রায় দেড়শো কোটি টাকা মুনাফা করেছিল বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। এ বার কুড়ি লক্ষ সস্তার বিমান টিকিট বাজারে ছেড়ে মাত্র তিন-চার দিনে জেট এয়ারওয়েজ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লাভ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিমানসংস্থাগুলির মধ্যে এই মূল্য-যুদ্ধে আখেরে যাত্রীরাই লাভবান হতে চলেছেন।
মঙ্গলবার থেকেই খাতায়কলমে কলকাতা থেকে বেশ কয়েকটি রুটে বিমানের টিকিট সাড়ে তিন হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। জেট-এর টিকিটের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিতে গো এবং ইন্ডিগো এই দুই বিমানসংস্থাও তাদের টিকিটের দাম কমিয়ে দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে খবর, তারাও বাজারের উপরে নজর রেখে চলেছে। প্রয়োজনে তারাও টিকিটের দাম কমাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, এ ভাবে হুটহাট টিকিটের দাম কমিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা কতটা সঙ্গত? এতে কি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হবে বিমান পরিবহণের? বুধবার দিল্লিতে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, “বিমানসংস্থা লাভ করার জন্যই ব্যবসা করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কী করার আছে?” তবে বিমান টিকিটের মূল্য-যুদ্ধের উপরে নজরদারির জন্য একটি কমিটি গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এমনিতে এখন বিমান জ্বালানির দাম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে কারণে বিমানসংস্থাগুলি ইদানীং লাভ করতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে বলেই খবর। সেখানে সস্তার টিকিট বিক্রি করলে কী লাভ? জেট সংস্থার এক কর্তা বললেন, “সাধারণত বেশির ভাগ উড়ানেই ৭৫ শতাংশের বেশি যাত্রী থাকে না। বাকি আসনগুলি ফাঁকা যায়। যদি ধরে নেন, ওই ফাঁকা আসনের জন্যই সস্তার টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তাহলে ওই টিকিট বিক্রি করে যে টাকাই ঘরে আসুক না কেন সেটাই তো লাভ।”
কী রকম? সংস্থার ওই কর্তাটি বুঝিয়ে বলেন কলকাতা-দিল্লি রুটে যদি ১০০ আসনের কোনও বিমান চালানো হয় এবং তার জন্য যদি ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়, তা হলে সংস্থার লক্ষ্য থাকে ৮০টি টিকিট বিক্রি করে পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি ঘরে তোলা। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি টিকিট যদি সস্তায় দেওয়া হয়, তা হলে বাকি টিকিটের দাম এমন ভাবে ধরা হয় যাতে আখেরে লাভই থাকে। সেই কারণে, ইদানীং শেষ মূহূর্তে কলকাতা-দিল্লি বা কলকাতা-মুম্বই রুটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার বা তারও বেশি টাকায়। ওই কর্তার কথায়, “এমন ভাবেই গোটাটা হিসেব করা থাকে যে, শেষ মূহূর্তে ওই রকম পাঁচটা টিকিট বিক্রি হলেই প্রথম দিকে সস্তার টিকিট বিক্রি পুষিয়ে যায়।”
আরও একটি দিক রয়েছে। জেট-এর আশা, একসঙ্গে ২০ লক্ষ টিকিট বিক্রির ঘোষণা করলে সাধারণ মানুষের প্রবণতা হবে ওই সংস্থার টিকিট কেনার। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় থাকা অন্য সংস্থা মার খাবে। প্রধানত এই আশঙ্কাতেই মঙ্গলবার টিকিটের দাম কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে গো এবং ইন্ডিগো। বিমান পরিবহণের বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্চ-এপ্রিল মাসে সাধারণত প্রতিটি সংস্থারই কম টিকিট বিক্রি হয়। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা থাকায় ওই সময়ে বেড়ানোর প্রবণতা কমে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসে সস্তার টিকিট বিক্রির ঘোষণা করে জেট ওই সময়েও বেশ কিছু যাত্রী পাওয়ার আশা করছে। বিমানসংস্থার চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সুধীর রাঘবন বলেন, “যাত্রীরা যাতে অনেক আগে থেকে নিজেদের পরিকল্পনা করতে পারেন তার জন্য এই অফার দেওয়া হয়েছে।” সংস্থা সূত্রের খবর, প্রতিটি উড়ানে আটটি করে সস্তার টিকিট পাওয়া যাবে।
মঙ্গলবারই জেট ঘোষণা করে, ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সস্তার টিকিট বিক্রি করা হবে। সেই টিকিট কেটে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। সংস্থা জানিয়েছে, ৫৭টি শহর থেকে তাদের ৪৫০টি উড়ানেই এই টিকিট মিলবে। ৭৫০ কিলোমিটার দূরত্বের কোনও শহরে গেলে টিকিট পাওয়া যাবে ২২৫০ টাকায়। ১৪০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের গন্তব্য হলে ভাড়া ৩৮০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাই-বেঙ্গালুরু চারটি শহরের বিমান টিকিটই ৩৮০০ টাকায় পাওয়ার কথা। কিন্তু কার্যত তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
টিকিট বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, টিকিটের দাম কমে গেলেও যে টাকায় টিকিট পাওয়া যাবে বলে জেট দাবি করেছে, সেই টাকায় অনেক ক্ষেত্রেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এক এজেন্টের কথায়, “সত্যিই ওরা ২০ লক্ষ টিকিট ছেড়েছে কি না, প্রতিটি উড়ানে সত্যিই আটটি করে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা কি যাচাই করা যাবে?” জেট-এর তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, এ আশঙ্কা অমূলক। |