ভগীরথের প্রত্যাবর্তন।
মালয়েশীয় সংস্থা এয়ার এশিয়ার হাত ধরে ফের বিমান পরিবহণের ব্যবসায় ফিরছে টাটা গোষ্ঠী। যার কর্ণধার জে আর ডি টাটার উদ্যোগেই ১৯৩২ সালে ভারতের আকাশে প্রথম ডানা মেলেছিল কোনও ভারতীয় সংস্থার উড়ান। পরে ওই সংস্থা পরিচিত হয় এয়ার ইন্ডিয়া হিসেবে।
বুধবার এই গাঁটছড়ার কথা ঘোষণা করে এয়ার এশিয়া জানিয়েছে, নতুন এই যৌথ উদ্যোগ গড়তে বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছে তারা। এই উদ্যোগে ৪৯% অংশীদারি থাকবে মালয়েশীয় সংস্থাটির। পরিচালনার বিষয়টিও হাতে রাখবে তারা। ৩০% শেয়ার থাকবে টাটাদের হাতে। আর বাকি ২১ শতাংশের মালিক হবে অরুণ ভাটিয়ার হিন্দুস্তান অ্যাভিয়েশন। যাদের ব্যবসা বিমানের যন্ত্রাংশ তৈরি।
১১৮টি বিমান নিয়ে এশিয়ায় বৃহত্তম সস্তার বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার এশিয়ার কর্ণধার টনি ফার্নান্ডেজ বলেন, “কয়েক বছর ধরেই ভারতে বিমান পরিষেবার গতি-প্রকৃতির দিকে নজর ছিল। মনে হয়েছে, এ দেশে লগ্নির এটাই আদর্শ সময়।” সংস্থা সূত্রে খবর, চেন্নাইকে কেন্দ্র করে তারা ভারতে বিমান চালাতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই নিয়মিত আন্তর্জাতিক উড়ান থাকায় অভ্যন্তরীণ উড়ান চলতে পারে কলকাতা থেকেও। |
বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে কেন্দ্র ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়ার পর এই প্রথম সেই ক্ষেত্রে টাকা ঢালতে চলেছে কোনও বিদেশি সংস্থা। সেই হিসেবে এ দিনের ঘোষণা কিছুটা চমকে দিয়েছে অনেককেই। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে কথা চলার সুবাদে অনেকেই মনে করেছিলেন, বিমান পরিবহণে প্রথম বিদেশি লগ্নি আসবে জেট কিংবা কিংফিশারের মতো কোনও চালু বিমান পরিবহণ সংস্থায়। কিন্তু তেমন কোনও সংস্থায় টাকা ঢালার পরিবর্তে নতুন সংস্থা গড়ার পথে হাঁটছে এয়ার এশিয়া। মনে করা হচ্ছে, ধুঁকতে থাকা কোনও ভারতীয় বিমান সংস্থায় লগ্নির পরিবর্তে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিল তারা।
এই নিয়ে আগ্রহের পারদ চড়ার মূল কারণ অবশ্য গাঁটছড়ায় টাটাদের নাম জড়িত থাকা। কারণ, আদপে তারাই এ দেশে বিমান পরিষেবা চালুর ভগীরথ। ১৯৩২ সালে এ দেশের প্রথম বিমান পরিবহণ সংস্থা টাটা এয়ারলাইন্স চালু করেন টাটা গোষ্ঠীর তৎকালীন চেয়ারম্যান জে আর ডি টাটা। ১৯৩৮ সালে নাম বদলে যার নতুন পরিচয় হয় টাটা এয়ার সার্ভিসেস। ১৯৪৬ সালে শেয়ার বাজারে নথিভুক্তির সময় নাম ফের বদলে হয় এয়ার ইন্ডিয়া। ১৯৪৮ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ৪৯% শেয়ার কিনে নেয় কেন্দ্র। ১৯৫৩ সালে জাতীয়করণ হয় এয়ার ইন্ডিয়ার।
জে আর ডি-র মতোই ‘বিমান-প্রীতি’ প্রায় কিংবদন্তি তাঁর উত্তরসূরি রতন টাটারও। এ দেশের প্রথম পাইলটের লাইসেন্স যেমন জেআরডি-র পকেটে, তেমনই নিজস্ব ফ্যালকন জেট মাঝে মধ্যে নিজেই ওড়ান রতন টাটা। এক সময় জে আর ডি-কে নিয়ে রীতিমতো রসিকতা ছিল, যে টাটা স্টিল, টাটা মোটরস বা টিসিএস-সহ টাটা গোষ্ঠীর অধিকাংশ প্রধান সংস্থার দৈনন্দিন পরিচালনাই তাদের শীর্ষ কর্তাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন নিজের হাতে। প্রায় অপত্য স্নেহে।
শোনা যায়, এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ায় যথেষ্ট দুঃখ পেয়েছিলেন জে আর ডি টাটা। একই রকম আক্ষেপ ঝরে পড়েছিল রতন টাটার গলাতেও। তিনি আক্ষেপ করেছিলেন, নব্বইয়ের দশকে এ দেশে একটি ঘরোয়া বিমান পরিবহণ সংস্থা চালু করতে আগ্রহী ছিলেন তাঁরা। এ জন্য গাঁটছড়া বাঁধার পরিকল্পনা ছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে। কিন্তু রাজনৈতিক বাধায় সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ছ’দশক এ দেশে বিমানের গায়ে নাম নেই টাটাদের। বিমান পরিবহণের সঙ্গে সম্পর্ক বলতে স্পাইস জেটের নামমাত্র অংশীদারি আর গুটিকয় চার্টার্ড সার্ভিস। বিমানের লেজে হয়তো নাম থাকবে না এখনও। কিন্তু সেই অর্থে এয়ার এশিয়ার হাত ধরেই ফের বড়সড় ভাবে বিমান পরিবহণে ফিরতে চলেছে টাটারা। |