|
|
|
|
|
|
সিইও-র টেবিল থেকে |
দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে টাকা
রাখলে
লাভ আপনার
এস বি আই মিউচুয়াল ফান্ডের এমডি এবং
সিইও দীপক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় সুপর্ণ পাঠক |
|
|
• মিউচুয়াল ফান্ডের উপর মানুষের সংশয় তৈরি হয় ইউ এস ৬৪-এ টাকা খুইয়ে। তার পরে আইনি পরিমণ্ডলে বিরাট পরিবর্তন হয়। একের পর এক ফান্ড আসতে শুরু করে। এখন তো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কর ছাড়ও পাওয়া যায়। বিমার ক্ষেত্রেও শেয়ার-নির্ভর সঞ্চয় প্রকল্প আসে। আপনার কাছ থেকে যেটা জানার, তা হল আমার সঞ্চয় আমি মিউচুয়াল ফান্ডে রাখব কেন?
দেখুন, আমাদের দেশ বিশ্বের কতিপয় দেশের মধ্যে একটি যেখানে আর্থিক গড় বৃদ্ধির হার বিগত এক দশকের মতো সময় ধরে ৯ শতাংশের কাছেপিঠে থেকেছে। এবং আগামী দিনেও এই বৃদ্ধির হার ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের দেশের। জাপানের কথা ধরুন। গত ১৫ বছর ধরে বৃদ্ধির হার প্রায় কিছুই নয়। আমাদের জাপানের ক্লায়েন্টরা বলেন ১৫ বছর আগেও জিনিসের যা দাম ছিল এখনও তাই আছে। জাপান চাইছে অর্থনীতিতে কিছুটা অন্তত মূল্যবৃদ্ধি হোক। জিনিসের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের বেশি লাভের আশায় ব্যবসা বাড়াবে। তাতে বৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগবে।
যেখানে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে শেয়ারে টাকা লাগানো লাভজনক। কারণ, এই ধরনের অর্থনীতিতে সংস্থাগুলির বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারের দামও বাড়ে। আর তাতে শেয়ারে টাকা রাখলে সেই সঞ্চয়ও বাড়তে থাকে তাল মিলিয়ে।
পাশাপাশি স্থায়ী আমানতে টাকা রাখলে আপনি একটা নির্দিষ্ট হারে সুদ পাবেন। আমি কিন্তু স্থায়ী আমানতে টাকা রাখতে বারণ করছি না। আমাদের সঞ্চয়ের পরিকল্পনায় এরও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধির জায়গা থেকে স্থায়ী আমানতের ভূমিকা কিন্তু বেশি নয়। কারণ আট বা নয় শতাংশ সুদ কিন্তু মূল্যবৃদ্ধিই খেয়ে যায়।
সঞ্চয়ের ঝোলায় বিমা, স্থায়ী আমানত সবারই নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। একই সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড মানেই কিন্তু শেয়ার নয়। মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা বন্ড বা অন্যান্য নানান প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে বিমা হচ্ছে ঝুঁকির বর্ম। জীবনে নানান ঝুঁকি রয়েছে, তা সামলাতে বিমা। আমার নগদ সঞ্চয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তার জন্য ফিক্সড ডিপোজিট বা ওই জাতীয় প্রকল্পে টাকা রাখতে হবে। আর মিউচুয়াল ফান্ড হল দীর্ঘকালীন
লাভের জন্য। |
|
এ বার কতটা কোথায় রাখব তা নির্ভর করবে আয়, বয়স ইত্যাদি নানান বিষয়ের উপর। এর কোনও সাধারণ নিয়ম নেই যার থেকে বলা যাবে যে, এই নিয়ম অনুযায়ী আপনার আয়ের এতটা অংশ মিউচুয়াল ফান্ডে রাখতেই হবে। দু’টি মানুষ একই আয়, একই রকম জায়গা থেকে এসেও তাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ভিন্ন হতে পারে।
আমাদের দেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকে ফাটকা হিসাবে দেখার সাধারণ মানসিকতা এখনও একই জায়গায় রয়েছে। ফলে শেয়ারকে সঞ্চয়ের জায়গা হিসাবে আমরা এখনও সেই ভাবে দেখি না। আমরা ভাবি, কোন শেয়ারে টাকা লাগাব? কত দিনে দ্বিগুণ হবে? এটাও আসে ওই ফাটকার মানসিকতা থেকেই। অর্থাৎ শেয়ারে টাকা লাগিয়ে তার থেকে দীর্ঘকালীন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ (কমপাউন্ডেড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট) লাভ করা সম্ভব। আজ থেকে ১০ বছর আগে সেনসেক্স কোথায় ছিল আর আজ কোথায় ভাবুন তা হলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।
আসলে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে গেলে প্রয়োজন নিজের উপর রাশ। এটা ফাটকা নয় এটা নিজেকে বুঝিয়ে নিয়মিত একটা শৃঙ্খলা বজায় রেখে বিনিয়োগ করতে হবে।
সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি নিজে শেয়ার বেছে এই কাজটা করতে যান তা হলে বিপদে পড়তে পারেন। কারণ প্রথম দিকের কয়েকটা শেয়ার ছাড়া বাকিগুলোর মধ্যে কোনটা আপনি নেবেন সেই পছন্দের কাজটা খুব সহজ নয়। আর এইখানেই আসে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা।
• ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লাভ!
আপনি যদি ৩৩ বছর আগে এসআইপি করতেন, তা হলে তো ১৫.৬ শতাংশ লাভ করতে পারতেন শুধুমাত্র সেনসেক্সের হিসাবেই। আপনি যদি কোনও ‘ফান্ড হাউসের’ মাধ্যমে (এখানে পড়ুন মিউচুয়াল ফান্ড) যেতেন, তা হলে আপনার লাভ আরও বেশি হত।
• কিন্তু সাধারণের সামনে শেয়ার বাছা যেমন সমস্যা, তেমনই সমস্যা কোন ফান্ড বাছব সেটা।
প্রতিটি ফান্ড হাউসের নিজস্ব বিনিয়োগ কৌশল থাকে। ধরুন শেয়ার। যেমন ‘লার্জ ক্যাপস’। এই ধরনের শেয়ার খুব বেশি উঠবে না। আবার খুব বেশি ধসবেও না। একটা নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখে। তেমনই আছে আবার ‘স্মল ক্যাপস’ বা ‘মিডিয়াম ক্যাপস’। এদের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। প্রশ্ন আপনি কীসের ভিত্তিতে পছন্দ করবেন। আমরা বলি ‘অ্যালফা’। অর্থাৎ সেনসেক্স যে হারে বাড়ছে তার থেকে কত বেশি হারে এই শেয়ার বাড়ছে তার নির্দেশক হল এই অ্যালফা। যার অ্যালফা বেশি তার রিটার্ন বেশি।
বাজারে কিছু ফান্ড আছে যেগুলো যাঁরা বাজার চেনেন তাঁদের জন্যই। এখানে ফান্ড হাউস আর যাঁরা এই প্রকল্পগুলি নিয়ে সাধারণ সঞ্চয়কারীর কাছে যাচ্ছেন তাঁদের একটা বড় দায় রয়েছে। তাঁদেরই বুঝতে হবে সঞ্চয়কারীর চাহিদা এবং বোঝাতে হবে, কেন একটি বিশেষ প্রকল্প সেই সঞ্চয়কারীর চাহিদা মেটানোর জন্য সব থেকে ভাল প্রকল্প।
• একই ধরনের প্রকল্প বিক্রি করছে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড। এ বার আমি কোনটা নেব? রিটার্ন দেখে?
রিটার্ন দেখার আগে আমাকে দেখতে হবে যে ফান্ড কী ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা বলি ফান্ডের ফিলসফি। এটা বোঝাতে হবে এবং যিনি কিনছেন তাঁকেও বুঝতে হবে। যিনি বিক্রি করছেন তিনি যদি বলেন “এটা লার্জ ক্যাপ এটা কিনুন”, ক্রেতা নাও বুঝতে পারেন। তাঁকে তাঁর মতো করে বোঝাতে হবে। বলতে হবে, যখন বাজার উঠবে তখন হয়তো এর দাম বাজার থেকে বেশি হারে উঠবে। কিন্তু পড়তি বাজারও ঝোলাবে না।
ঝুঁকিটা এর থেকেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবেন। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার রাস্তা এটা নয়। সুশৃঙ্খল ভাবে, নিয়মিত ভাবে, এবং আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চললে এখানে ক্ষতি হওয়া মুশকিল দীর্ঘকালীন পরিপ্রক্ষিতে। ‘সিপ’-ই এর জন্য সব থেকে
ভাল রাস্তা।
• উপদেষ্টাদের নিয়ে সমস্যা আজ আমরা সবাই জানি। এ ব্যাপারে নানান সমস্যা রয়েছে। আপনারা মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে কী ভাবছেন?
আমাদের সংস্থার কথা আমি বলতে পারি। আমাদের একটা ‘নলেজ ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট’ আছে। একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এর দেখাশোনা করেন। আমাদের নিজেদের প্রশিক্ষক আছেন এই বিভাগে। আমরা দেশ জুড়ে নিয়মিত ট্রেনিং ক্যাম্প করে থাকি। এদের কাজ দুটো। আমাদের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ লাগে। সেটা এঁরা করেন। আমাদের ১১০টা অফিস আছে। ফান্ড ম্যানেজাররাও প্রশিক্ষক হিসাবে আসেন। এর বাইরে ডিস্ট্রিবিউটরদের প্রশিক্ষণেও এঁরা থাকেন। সেখানে কোন শেয়ার কেনা হচ্ছে বা কেন কেনা হচ্ছে না, সে সব প্রশ্ন হয়। ফলে ফান্ড বিক্রির শৃঙ্খলে একটা বড় জোর কিন্তু আমাদের প্রশিক্ষণের উপর। তবে আজকের বাজারে সাধারণ স্কুলের সিলেবাসে কিন্তু সঞ্চয় সম্পর্কে এই সব বিষয় থাকা উচিত। কারণ সবাইকেই এই বিষয়টা শিখতে হবে।
•
আপনি একজন সঞ্চয়কারীকে উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার জন্য কী কী বিষয়ে জোর দিতে পরামর্শ দেবেন?
প্রথমেই আপনাকে যাচাই করতে হবে যে, উপদেষ্টা আপনার চাহিদা বুঝতে পেরেছেন কি না। ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ বলে কিছু নেই।
সমস্যা হচ্ছে সাধারণ সঞ্চয়কারী এই যাচাইটুকু করার জায়গাতেও থাকেন না অনেক সময়ে। তবে সময়ের সঙ্গে সব কিছুই বদলাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরও কড়া হচ্ছে। উপদেষ্টারাও এখন বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া এই ব্যবসায় আসতে পারেন না। ফলে একটু সময় লাগবে কিন্তু বদলাবে।
এখনও মানুষ সোনা, ফ্ল্যাট বা জমিতে টাকা ঢালছে। সেটাও তো ফাটকা। তার থেকে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা লাগানোটা ভাল নয় কি? এই টাকা শিল্পে যাচ্ছে। বিনিয়োগ হচ্ছে উৎপাদনশীল শিল্পে। সরকারও এটা বুঝে সোনা আমদানি কমাতে চাইছে। চাইছে শেয়ারে বিনিয়োগ হোক যাতে শিল্প তা ব্যবহার করতে পারে।
তবে দেখুন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে অনেক ফর্ম ভরতে হয়। কিন্তু সোনা কিনতে কিচ্ছু লাগে না। ফলে মানুষ সোনা কেনার রাস্তাকেই সহজ হিসাবে দেখছে।
অন্য দিকে কাগজ ভরার কাজটা একবার করে ফেললে সাধারণ সঞ্চয়কারীর পক্ষে মিউচুয়াল ফান্ড কিন্তু উত্তরোত্তর নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। |
|
|
|
|
|