প্রয়াত চিত্রকর মুকুল দে-র নাতি শিবশ্রী উকিলকে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগে নাম এল বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তেরও। মুকুল দে-র নাতির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতেই অবশ্য পাল্টা মারধরের অভিযোগ এনেছে বিশ্বভারতীও। নিজের অভিযোগে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব মণিমুকুট মিত্রের দাবি, ওই ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বভারতীর কর্মীরাই। শিবশ্রীবাবুর বিরুদ্ধে কর্তব্যরত কর্মীদের মারধর, কাজে বাধা দেওয়া, জনসাধারণের রাস্তা বেআইনি ভাবে আটকানো-সহ নানা অভিযোগ তুলেছে বিশ্বভারতী। যদিও মঙ্গলবার রক্তাক্ত শিবশ্রীবাবু জানিয়েছিলেন, বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় সদলবলে এসে খুন করার চেষ্টা করেছেন। বোলপুর থানায় দায়ের করা এফআইআর-এ দাবি করেছেন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য, কর্মসচিবের নির্দেশেই তাঁর উপরে হামলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, একটি জমিতে বিশ্বভারতীর সীমানা প্রাচীর দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রয়াত শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর ঝামেলা দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি নিয়ে অতীতে বোলপুর আদালতে মামলাও হয়েছিল। সেই মামলার রায় অবশ্য মুকুলবাবুর পরিবারের পক্ষেই গিয়েছে বলে তাঁদের দাবি। শিবশ্রীবাবুর আইনজীবী শৈলেন মিশ্র জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসে শিবশ্রীবাবু শান্তিনিকেতনের সেবাপল্লিতে নিজের বাড়ির সামনে গাড়ির অবৈধ পার্কিং আটকানোর জন্য চলাচলের পথটুকু রেখে বাকি জায়গায় খুঁটি পুঁতেছিলেন। |
কিন্তু মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় সদলবলে এসে সেই খুঁটি উপড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। তাতে বাধা দিতে গিয়েই বিশ্বভারতীর হাতে আক্রান্ত হওয়ার দাবি করেছিলেন মুকুল দে-র নাতি। তাঁর বাড়ির দুই মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ।
ওই দিন কোনও মন্তব্য না করতে চাইলেও ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পরে, বুধবার বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের হয়ে ইন্দিরা গাঁধীকেন্দ্রের অধিকর্তা তথা অধ্যাপিকা সবুজকলি সেন একটি প্রেস বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, মুকুল দে-র পরিবার জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বেআইনি ভাবে খুঁটি দিয়ে আটকে রেখেছে। ওই জমি নিয়ে সবকটি মামলা আদালতে এখনও বিচারাধীন। বারবার বলা সত্ত্বেও শিবশ্রীবাবুরা ওই খুঁটি সরাননি। ঘটনার সময় বিশ্বভারতীর কর্মীরা ওই খুঁটি সরাতে গেলে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দিয়ে শিবশ্রীবাবুই বিশ্বভারতীর কর্মীদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ। গণ্ডগোল হতে পারে, এই আশঙ্কার কথা পুলিশকেও জানানো হয়েছিল বলে বিশ্বভারতীর দাবি। শিবশ্রীবাবুর অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সবুজকলিদেবী জানান, শিবশ্রীবাবুর অভিযোগে এমন কয়েকজন কর্তাব্যক্তির নাম জড়ানো হয়েছে, যাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না। বিশ্বভারতীর এই দাবি নিয়ে শিবশ্রীবাবুর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, “যাঁরা মারলেন, তাঁরাই এখন মিথ্যা অভিযোগ করছেন!” তাঁর পাল্টা দাবি, “আমার কাছে ওই ঘটনার ছবি থাকায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” ঘটনায় জেলা পুলিশের এক কর্তার প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তবে জোর করে কোনও জিনিস করা ঠিক নয়।” এ দিকে জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। |