সংখ্যালঘু তালুকে সংখ্যার
আলো-আঁধারিতে তিন পক্ষ
ঠালো কাদায় ডুবে যাচ্ছে সাদা স্নিকার। মুখে তবু হাসি লেগে! বানিওড়ের কাদা-ডোবা রাস্তা থেকে হাত জোড় করে উঠে এলেন আব্দুর রহমান! “আমায় ভাষণ দিতে হচ্ছে না। লোকে বুঝতে পারছে, কী বলতে চাই!” কংগ্রেস প্রার্থীর মৃদু বচনে সমর্থন জানালেন মেঠো চেহারার এক দঙ্গল গ্রামবাসী। অদূরে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হাসনের কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল! অকাল বৃষ্টির পরে তখন গ্রাম জুড়ে রোদ্দুর।
বিধানসভায় অসিতবাবুর এক সহকর্মী সন্ধ্যার আঁধার গায়ে না মেখেই প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। নলহাটির হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের উল্টো দিকে চারটি বন্ধ দোকানের দালানে দাঁড়িয়ে সরকার-বিরোধী ‘অপপ্রচারের জবাব’ দিচ্ছিলেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। চার পাশে খোলা দোকানের আলো, পথে মানুষজন। আশিসবাবু তবু অন্ধকারে কেন? প্রশ্নকর্তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঢোলা পায়জামা, হাফ-হাতা জ্যাকেটের বিধায়ক “অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো! অন্ধকার তো কী হয়েছে? আওয়াজ তো পৌঁছচ্ছে!”
পরে পানিটা গ্রামের নির্মীয়মাণ এক বাড়ির এক তলায় আওয়াজই ভরসা আশিসবাবুর দলের প্রার্থীর জন্য! অন্ধকারে মুখ দেখার উপায় নেই। টর্চ হাতে এক তৃণমূল কর্মী। পাশের চেয়ারে তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব ওঝা বলছেন, “নলহাটিকে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সামিল হতে হবে। এত দিন কংগ্রেসের কাছে থাকায় সেই সুযোগ নলহাটি পায়নি!” কিন্তু কুড়ি মাসে পরিবর্তনের সরকারের কাজ নিয়ে এত প্রশ্নের জবাব? বিপ্লববাবুর দাবি, “কিছু ভুল হয়তো হচ্ছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একাংশ যে ভাবে রাজ্যের সবই খারাপ দেখাতে ব্যস্ত, মানুষ সেটা ভাল ভাবে নিচ্ছে না।”
উপনির্বাচনের প্রচার শেষ আজ, বুধবার দুপুরেই। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে মোটরবাইক
র্যালির জন্য পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নেওয়ার ভিড় কংগ্রেসর কর্মীদের।
বুধবার বীরভূমের নলহাটির কলিঠায় ছবি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
বিপ্লবের কথা শেষ হওয়ার পরেই আলো এল পানিটায়। মুখ আলো করে হাসলেন বিপ্লব। আসলে এই রকমই আলো-আঁধারিতে ডুবে নলহাটির কংগ্রেস-তৃণমূল। ৪০ বছর বাম দখলে থাকার পরে ২০১১-এ জোটের জোরে বীরভূমের এই গ্রাম ও সংখ্যালঘু-প্রধান কেন্দ্রে জেতেন প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তার পরেই জোটে ছেদ। গত বছর আলাদা লড়েই নলহাটি পুরসভা জেতে তৃণমূল। বিধানসভা কেন্দ্রের নলহাটির ৯ ও মুরারইয়ের ৩ মোট ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেসের হাতে ৯টি। কংগ্রেস-ত্যাগী বিপ্লব কংগ্রেসের কিছু পঞ্চায়েতের লোকজন ভাঙিয়ে এনেছেন। তবু তৃণমূলের ভরসা শহর। আর কংগ্রেসের গ্রাম। যদিও তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের মতে, গ্রামে মমতা-হাওয়া চলছেই। তাতেই উড়ে যাবে প্রতিপক্ষরা!
নলহাটি পুরসভার কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের প্রধান ছিলেন বিপ্লব। গত বার পুরভোটের আগে দলবল নিয়ে তৃণমূলে এসেছেন। কিন্তু হেরেছেন দু’টো ওয়ার্ডেই! যার জন্য কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিমির খোঁচা, “কী রকম মনোবল থাকলে তবে চেয়ারম্যান হয়েও লোকে দু’টো ওয়ার্ডে একসঙ্গে দাঁড়াতে যায়?” কংগ্রেসের দাবি, তারা জিতলে মমতা সরকারেরই ভাল হবে! জিমির কথায়, “ভোটে ধাক্কা খেয়ে দিশাহীন সরকারে যদি একটু দিশা আসে! একমাত্র জনতাই পারে দিশা দিতে।”
তৃণমূলকে খোঁচা দিলেও কংগ্রেসের অস্বস্তিও কম নয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন জঙ্গিপুরের সাংসদের প্রসঙ্গে বলেন, “এই ভোটের কোনও দরকার ছিল? ভোটের সময় প্রচুর প্রতিশ্রুতি দেব আর পরে উঁচু পদ দেখলে পালাব এটাই কি নীতি? নলহাটির মানুষ জবাব চাইবেন না?” কংগ্রেস প্রার্থী রহমানের স্ত্রী, মুরারই-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শাহনাজ বেগম অবশ্য বলেন, “অভিজিৎবাবু নলহাটি থেকে পালাননি। যে বাড়িটা নিয়েছিলেন, এখনও আছে। যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরও একই আছে।”
বস্তুত, এই শাহনাজ আর লিটনকে (কংগ্রেস প্রার্থীর এই ডাক নামটাই চলছে ভোটের বাজারে) দিয়েই সংখ্যালঘু ভোটের ফায়দা তুলতে চাইছে অভিজিতের দল। ‘সংখ্যালঘুদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন’ নিয়ে হিজাব-পরিহিত তৃণমূল নেত্রীর ছবির চেয়ে লিটনের উপস্থিতি কাজ দিচ্ছে ভালই। প্রায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ৫১% সংখ্যালঘু ভোটের টানে ময়দানে আছেন দুই নুরুলও ইউডিএফের নুরুল হুদা, জনতা দলের নুরুল হাসান। আবার বিজেপি-র অনিল সিংহ আছেন মুখ্যমন্ত্রীর ‘সংখ্যালঘু-দরদে’র বিপরীতে নলহাটিতে তাঁদের পরম্পরাগত ৪-৫% ভোট আরও বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে।
এত স্রোত-পাল্টা স্রোতের মাঝে দীপক চট্টোপাধ্যায় স্মিত হাসছেন। ফব-র জেলা সম্পাদক ও নলহাটির প্রাক্তন বিধায়ক বললেন, “ভুলের জন্য মানুষ শাস্তি দিয়েছিল। মানুষ কাছে টেনে এ বার বাকি বকুনিটা দেবে!” প্রার্থী দীপকের জন্য ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ বলে গিয়েছিলেন, “প্রতিশোধ চাই এ বার! সেটা হলে আবার আসব!” ঘাঁটি গেড়ে পড়ে আছেন ফব নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়ও। মিষ্টি ব্যবসায়ী স্বপন মণ্ডলরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “গ্রামে-শহরে জোর লড়াই! বামেরা সব জায়গায় দ্বিতীয় স্থান রাখতে পারলেই শেষ বিচারে কেল্লা ফতে!” ভাঙা, সরু রাস্তায় পাক খেয়ে বেড়াচ্ছেন নেতারা। সঙ্গে পাক খাচ্ছে অঙ্ক গণদেবতার দাঁড়িপাল্লায় কে উঠল, কে নামল!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.